মানিকগঞ্জ- ৩, বাবার আসনেই লড়বেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ২ প্রার্থী

মোহাম্মদ হাসান ফয়জী:মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে বাবার আসনে নির্বাচনে অংশ নিবে ২ প্রার্থী। ১৯৮৬ সালের ৭ই মে জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সাবেক সাংসদ কর্ণেল(অবঃ) এম.এ. মালেক এর পুত্র ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক স্বপন আওয়ামী লীগের এবং ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে জয়ী সাংসদ হারুণার রশিদ খান মুন্নুর কন্যা জেলা বিএনপির সভানেত্রী আফরোজা খান রিতা বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী। এ দুই দলের বাইরেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নাম থাকলেও বতর্মান মানিকগঞ্জের রাজনীতিতে জামায়াতের কোন প্রার্থী নেই। তাই বলা যায় মানিকগঞ্জ -৩ আসনের লড়াইয়ে বাবার আসনেই প্রতিদ্বন্দীতা করবেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

মানিকগঞ্জ- ৩ আসনটি নিয়ে জেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে জেলার রাজনীতিতে। আপাতত এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক স্বপন ছাড়া অন্য কোন প্রার্থী মাঠে নেই । তিনিই সরকারী ও আওয়ামী লীগের সভা সমাবেশ হলে শেখ হাসিনার সরকার পুনরায় গঠনের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থীর প্রকাশ্যে কোন সভা সমাবেশ চোখে পড়ছে না । তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে নিয়মিত দলের নেতা কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে দলের একাদিক নেতারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে শক্তিশালী প্রার্থী হচ্ছেন জাহিদ মালেক স্বপন, এফবিসিসিআই পরিচালক ও , মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাবেয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. রফিকুল ইসলাম খান। বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সভানেত্রী আফরোজা খান রিতা, মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান আতা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল তার নিজ দল থেকে নমিনেশন চাইবেন।

মানিকগঞ্জ-৩ আসন মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে ১ম জাতীয় নির্বাচন ১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত হয়, তখন আওয়ামী লীগ থেকে মফিজুল ইসলাম খাঁন কামাল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ২য় জাতীয় নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের বিএনপি থেকে আলহাজ্ব  নিজামুদ্দিন খান, ১৯৮৬ সালের ৭ই মে তৃতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে কর্ণেল (অবঃ) এ মালেক, ১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চে চতুর্থ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে পূনরায় কর্ণেল (অবঃ)এম.এ. মালেক, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী পঞ্চম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে মো. নিজামুদ্দিন খান, ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী বিএনপির বির্তকিত ৬ষ্ঠ নির্বাচনে পুনরায়  মো. নিজামুদ্দিন খান, ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে মো. নিজামুদ্দিন খান, আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ আমলেই নিজামুদ্দিন খান মারা গেলে উপ- নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট ওহাব মিয়া, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে হারুণার রশিদ খাঁন মুন্নু, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে জাহিদ মালেক স্বপন এবং ২০১৪ সালে ৫ই জানুয়ারী দশম জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় আওয়ামী লীগ থেকে জাহিদ মালেক স্বপন পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মানিকগঞ্জ- ৩ নির্বাচনী আসনটি মানিকগঞ্জ সদরের ৯টি ও সাটুরিয়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। স্বাধীনতার পর থেকে শুরু থেকে দশম জাতীয় নির্বাচনে  বিএনপি থেকে মোট ৫ বার, আওয়ামী লীগ থেকে ৩ বার ও জাতীয় পার্টি থেকে ২ বার  সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।

মানিকগঞ্জ ৩ আসনের একাদশ জাতীয় নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ন বিষয় হয়ে ওঠেছে জেলার রাজনীতিতে। বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক স্বপন ২০০৮ সালে নির্বাচিত হলেও ২০১৪ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বাবার আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক  দৃশ্যমান উন্নয়ন মূলক কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তার এ আসনে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা কর্মীদের মধ্যে রয়েছে কোন্দল ও গ্রুপিং। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সরকার ক্ষমতায় থাকায় এ দলের নেতা কর্মীরা বিএনপি ও সাধারণ মানুষদের রাজনৈতিক ভাবে মামলা দিয়ে ও বিভিন্নভাবে মানসিকভাবে চাপে রেখেছে। এর ফলে গোটা আসনে কোন্দল থাকায় নির্বাচনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

মানিকগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড নিয়ে সম্প্রতি জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি বাবুল সরকারের সাথে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইশরাফিল আলমের সাথে প্রকাশ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। সাটুরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাথে সকল চেয়ারম্যানদের সাথেও রয়েছে দুরত্ব।কিছুদিন আগে ৫টি ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করলে একটি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক নেতা কর্মী পদত্যাগ করে। তাছাড়া সাটুরিয়া ছাত্র লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে গ্রুপিং এর কারনে ছাত্রলীগের কার্যক্রম ও স্থগিত ঘোষনা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে  বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে এ দলটি।

আওয়ামী লীগ থেকে জাহিদ মালেক ছাড়াও এফবিসিসি আই পরিচালক ও  মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাবেয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. রফিকুল ইসলাম খান মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন।

কিন্তু তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইলেও এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোন সভা সমাবেশ করতে দেখা যায় নি। মানিকগঞ্জ সদরে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে আর্থিক সহযোগিতা করলেও সাটুরিয়া উপজেলায় বিভিন্ন দিবসে পোষ্টার সাটানো ছাড়া কোন কর্মসূচি চোখে পড়েনি।

অপর দিকে  আওয়ামী লীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাবেয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. রফিকুল ইসলাম খান ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। চলতি বছরে দেশে এসে ঘরহীন মানুষকে ৮০টি ঘর নির্মাণ ও বন্যার্তদের মাঝে মোটা অংকের ত্রাণ বিতরণ  ও “মাদক ছাড়ো খেলা ধরো” কর্মসূচির আওতায় ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন।

২০০১ সালে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য হারুণার রশিদ খান মুন্নুর কন্যা মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভানেত্রী আফরোজা খান রিতা তার বাবার আসনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে নমিনেশন চাইবেন। আফরোজা খান রিতা বিএনপির বিভিন্ন প্রোগ্রামে সরাসরি অংশ গ্রহণ করছেন। মাঝে মাঝে নিজে অংশ না নিলেও তার নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে সকল প্রোগ্রাম সফলভাবে করে যাচ্ছেন। তিনি জেলা বিএনপির দায়িত্ব পাওয়ার পর গেল উপজেলা নির্বাচনে জেলার ৭টি উপজেলাতেই বিএনপি থেকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান  নির্বাচিত হন। কিন্তু গেল ইউপি নির্বাচনে খেই হারিয়ে ফেলেন। এ জন্য জেলা বিএনপির কোন্দল কেই দায়ী করেছেন এক অংশের নেতাকর্মীরা।

এ আসনে বিএনপি থেকে মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান আতা নমিনেশন চাইবেন বলে জানা গেছে। কিন্ত তার ছবি সম্বলিত কয়েকটি বিল বোর্ড ছাড়া তার কোন কর্মকান্ড মাঠে নেই।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেল তার নিজ দল থেকে নমিনেশন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে । তার পোষ্টার রাতের আঁধারে সাঁটাচ্ছে তার নেতা কর্মীরা। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন ২ বার সংসদ সদস্য পেলেও পুনরায় তাদের আসনটি ফিরে পাবার মত প্রার্থী নেই বললেই চলে।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থেকে নমিনেশন প্রত্যাশীরা কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও আপাতত জামায়াতের কোন নেতা এ আসন থেকে মাঠে নেই। ২০০১ সালের বিএনপির সাথে জোটগত নির্বাচনে যাওয়ার আগে বর্তমান জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা দেলোয়ার হোসেন জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় অংশ গ্রহণ করলেও তাদের কোন কর্মকান্ড এখন আর নেই।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ -৩ আসনের সাংসদ জাহিদ মালেক স্বপন বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে মানিকগঞ্জে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ হাজার কোটি টাকার দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ হয়েছে। তাই নেত্রী আমাকেই নমিনেশন দিবে বলে আশা করছি। নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে গেলে জনগণ আমাকেই নির্বাচিত করবে।

জেলা বিএনপির সভানেত্রী আফরোজা খান রিতা বলেন, আমি জেলা বিএনপির দায়িত্ব পাওয়ার পর সকল কে ঐক্যবদ্ধ করে গেল উপজেলা নির্বাচনে সকল উপজেলায় আমাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করেছি। দল আমাকে নমিনেশন দিলে আমি আমার বাবার আসনটি উদ্ধার করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কে উপহার দিব।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাবেয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. রফিকুল ইসলাম খান  মোবাইল ফোনে জানান, বর্তমান সংসদ সদস্য বিভিন্ন কারনে বির্তকিত হয়ে উঠেছেন। আমি ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিজেকে সরাসরি যুক্ত রেখেছি। আমাকে নমিনেশন দিলে সাধারণ জনগণ আমার নিকট আসতে পারবে। তাই দল চাইলে আমিই বিজয়ী হব।

মানিকগঞ্জ- ৩ আসনে আপাতত আওয়ামী লীগের ৩ জন, বিএনপি থেকে ২ জন ও জাতীয় পার্টি থেকে ১ জন সহ মোট ৬ জন প্রার্থী রয়েছেন।  কিন্তু বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন আওয়ামী  লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক স্বপন ও বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সভানেত্রী আফরোজা খান রিতাই নমিনেশন পাবেন।  যদি কোন অঘটন না ঘটে সেক্ষেত্রে বাবার আসন পুনরায় জয় ও উদ্ধার করতে নির্বাচনী মাঠে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এ ২ প্রার্থীর।

মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ১১ ডিসেম্বর/ ২০১৭।
আরও পড়ুন:

সাটুরিয়া ফাষ্ট গ্রপের মাদক বিরোধী ফেষ্টুন ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ

আরো পড়ুুন