মোহাম্মদ হাসান ফয়জী: মানিকগঞ্জে প্রতি ডিমে দেড় টাকা লোকসান হচ্ছে। ৬ মাস ধরে ১২-১৩ টাকা হালি পাইকারী বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে খামারীর মালিকরা। বর্তমানে হালিতে ২ টাকা বেড়ে পাইকারী বাজারে ১৪-১৫ টাকা বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। এর ফলে খামারীরা লোকসান হলেও লাভবান হচ্ছে মধ্যভুগিরা।
মানিকগঞ্জে ৫ শতাধিক লেয়ার মুরগি খামার রয়েছে। বিগত ৬ মাস ধরে ডিম ১২-১৩ টাকা হালি পাইকারী বিক্রি ও গেল বন্যার কারনে কিছু খামারী বন্ধ রয়েছে। বাজার ভাল হবে এমন আশায় ডিম উৎপাদন কারী খামারীর মালিকরা প্রতিদিন লোকসান দিয়ে এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার কান্দা পাড়া গ্রামের দেলেয়ার হোসেন ২৬ শ লেয়ার মুরগি পালছেন। তার খামারে গিয়ে কথা হয় তার সংগে। দেলেয়ার জানান, এ লেয়ার মুরগি জানুয়ারী মাস থেকে ডিম দিচ্ছে। ঐ মাসের ২২ দিন পর্যন্ত ২৫ টাকা হালি পাইকারী বিক্রি করতে পেরেছিলেন। তার পর থেকেই ২ অক্টোবর পর্যন্ত ১২-১৩ টাকা হালি বিক্রি করতে হয়েছে। বর্তমান এক হালি ডিম ১৩-১৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতিদিন তার লোকসান হচ্ছে এক হাজার ৫ শত টাকা। তার এ মুরগি কেজি বিক্রি করলে ৪ লক্ষ পাবে । তার পরও তার লোকসান হবে ১৭ লক্ষ টাকা। এভাবে আর ব্যবসা হয় না।
কুদ্দুছ নামের এক খামারির মালিক বলেন, এক হাজার লেয়ার মুরগি লালন করে ডিমের উপযুক্ত দাম পেলে মাসে ৩০-৩২ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এ আশায় লেয়ার মুরগি উঠাই। ৪ মাস লেয়ার মুরগি লালন করে এ মুরগি এখন ডিম দিচ্ছে। খাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ উৎপাদন খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে পরিমানে ডিমের দাম বাড়ছে না। প্রতি পিচ ডিম উৎপাদন খরচ হচ্ছে সাড়ে ৫ টাকা ,আর বিক্রি করতে হচ্ছে সাড়ে ৩ টাকা। ১৩-১৪ টাকায় এক হালি ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ এই ডিম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩-২৫ টাকা হালিতে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস জানায়, জেলায় ৫ শতাধিক লেয়ার মুরগির খামার গড়ে উঠে। জেলা প্রতি বছর ডিম উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা হচ্ছে ১৪ কোটি ৪৭ লক্ষ ৬৮ হাজার ডিম। এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৫ কোটি ৭১ লক্ষ ৮৩ হাজার ২ শত টি। এতে লক্ষ মাত্রার চেয়ে ২৪ লক্ষ ১৫ হাজার ২ শ বেশী ডিম উৎপাদন হচ্ছে। ফলে লোকসানের পাল্লা বাড়ছে দিন দিন।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ফরহাদুল আলাম জানান, মুরগির খাদ্যের দাম বাড়লেও ডিমের দাম কমে যাওয়ায় খামারীরা পড়েছে বিপাকে। কিন্তু কষ্ট হলেও যাতে খামার বন্ধ করে না দেয় তার জন্য সরকার উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমান সরকার একটি ডিমের বাজার প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেই খামারীরা ডিমের ন্যায্য মূল্য পাবে বলে আশা করছেন প্রাণী সম্পদের এ কর্মকর্তা।
বর্তমানে বাজারে প্রচুর মাছ সরবরাহ ও ঘরে কুরবানীর মাংস থাকায় ডিমের চাহিদা কম। তবে কিছু দিনের মধেই ডিমের স্বাভাবিক দাম ফিরে আসবে আশা করছেন।
লেয়ার মুরগি লালন করে লাভের বদলে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান হচ্ছে মানিকগঞ্জের ৫ শতাধিক খামারীদের। দ্রুত ডিমের ন্যায্য মূল্য পাবে ও ক্ষতিগ্রস্ত খামারীরা ঘুরে দ্বারাবে এমনটাই আশা করছেন এ পেশায় জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রায় হাজার খানেক মানুষ।
মানিকগঞ্জ২৪/ ১৩ অক্টোবর/ ২০১৭।
আরও পড়ুন: