জনপ্রতিনিধি বনাম শিক্ষা

আব্দুল মালেক: মানবিক নৈতিকতাপূর্ণ  শিক্ষা
মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের মযার্দায় অধিষ্ঠিত রাখে টেকসই উন্নয়ন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে  শিক্ষার কোন বিকল্প নেই শিক্ষা বিস্তারে রাষ্ট্রকে মূলতঃ কার্যকর ভূমিকা রাখতে হয়

প্রসংগত উল্লেখ্য যে, ১৯৯৯ সালের জুন মাসে ইউরোপের ২৯টি দেশ ইতালির বিখ্যাত বলাইনা শহরে একুশ শতকের উপযোগী একটি সমন্বিত উচ্চ শিক্ষা কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি সম্মেলনে মিলিত হয়েছিল দেশগুলো বলাইনা ঘোষণা নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যাতে বিশ শতকের উচ্চ শিক্ষা কাঠামোর ত্রুটিগুলো শনাক্ত করে একুশ শতকের উপযোগী একটি সমন্বিত উন্নত সংস্কার রূপরেখা প্রস্তাব করা হয়
ইউরোকেন্দ্রিক হলেও বলাইনা অ্যাকোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত এই নতুন উচ্চ শিক্ষা রূপরেখা অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এবং ইউরোপের পাশাপাশি এশিয়া আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে
বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই
বিশেষ করে ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর তত্ত্বাবধানে HEQEP (Higher
Education Quality Enhancement Project)
এর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে, বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পরিচালনায় দেশের ৩৮টি সরকারি এবং ৯৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন পাঠন গবেষণায় কমবেশি কোয়ালিটি অ্যাশিউরেন্স পদ্ধতির ছোঁয়া লেগেছে
উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল বিল ২০১৭ পাস করা বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগদুঃখজনক হলেও সত্য! একটি শিক্ষিত জাতি আদর্শ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য, সুন্দর সোনালি সমাজ বিনির্মাণের জন্য শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি হওয়া যে বাঞ্ছনীয় বিষয়টি মনে হয় সরকার মহোদয় তথা নির্বাচন কমিশনের বোধগম্য নয়।বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ, উন্নয়নশীল দেশের জনপ্রতিনিধিরাও শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি হওয়া আবশ্যক, বিষয়াট আমরা বেমালুম ভুলে বসে আছি
গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করেছেন।
ইতোমধ্যে সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফলও আমরা পেতে শুরু করেছি। তবে ইতোমধ্যে
গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে অনেক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের কম্পিউটার,
ইন্টারনেট, অনলাইন সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। এখানে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, যারা
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করবে তাদেরই যদি এ সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকে তাহলে
কি করে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব?
বর্তমানে ইসি অনেক কিছুতেই পরিবর্তন এনেছে! আমাদের দেশের জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ইসি কর্তৃক অনেক শর্তারোপ থাকলেও প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কোন শর্ত আছে কিনা তা এদেশের আপামর জনসাধরনের দৃষ্টিগোচর হয়নি!
শিক্ষাগত যোগ্যতার
সঠিক একটি
নীতি না
থাকার কারণে
দস্তখত পর্যন্ত
জানে না
এমন লোকেরও
প্রার্থী হওয়ার
নজির রয়েছে
হাজার হাজার ইতিপূর্বে
কয়েকটি জাতীয়
দৈনিক পত্রিকায়
ছাপা হয়েছে,
পৌরসভা নির্বাচনে
কাউন্সিলর পদে
পঞ্চম শ্রেণী,
অষ্টম শ্রেণী
পাস, মেয়র
পদে এসএসসি
পাস প্রার্থী
একজন কাউন্সিলর যদি
পঞ্চম শ্রেণী
পাস হন
এবং একজন
মেয়র যদি
হন এসএসসি
পাস তাহলে
তারা কীভাবে
পরিচালনা করবেন
একটি পৌরসভা গত
ইউনিয়ন পরিষদ
নির্বাচনে শত
শত মেম্বার
জনগণের ভোটে
নির্বাচিত হয়েছেন,
অথচ তারা
অশিক্ষিত
অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
পর্যন্ত যাননি,
শুধু দস্তখত
শিখেছেন
বরাদ্দকৃত কাগজপত্র
তারা পড়তে
পারেন না আমি
আমার নিজ
ইউনিয়নের কথা
বলি
আমার ইউনিয়নে
তিনজন মেম্বার
রয়েছেন, যারা
শুধু দস্তখত
পর্যন্ত শিখেছেন এসব
লোককে জনগণই
ভোট দিয়ে
নির্বাচিত করেছেন আবার
অনেক চেয়ারম্যানও
রয়েছেন, যারা
অষ্টম শ্রেণী
পর্যন্তও যাননি
ভোট প্রতিটি নাগরিকের
নাগরিক অধিকার প্রতিটি
ভোটার নাগরিকের
অধিকারও রয়েছে
মেম্বার, চেয়ারম্যান,
কাউন্সিলর
মেয়র প্রার্থী
হওয়ার
এটা সবার
নাগরিক অধিকার আমার জানা মতে, রিকশাচালক, ভিক্ষা পেশার মানুষও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন
অনেকে হয়তো মনে করবেন এরা কি মানুষ নয় অথবা এদের কি অধিকার নেই প্রার্থী হওয়ার? নিশ্চয়ই আছে, তা তাদের নাগরিক অধিকার তারপরও বলতে হয়, একজন মেম্বার, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর মেয়র প্রার্থী ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতার একটি মাপকাঠি থাকা দরকার কারণ একজন জনপ্রতিনিধি শিক্ষিত না হলে তার দ্বারা ওই এলাকার উন্নয়ন সম্ভব নয়
শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে সে যেমন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না, তেমনি তারা আইন কানুনের কোন তোয়াক্কাও করতে
চায় না,
  ঠিক একই রুপে কী প্রকল্প তৈরি করতে হবে, কোন প্রকল্পে কত বরাদ্দ আনতে হবে, কোন প্রকল্পটি আগে পরে বাস্তবায়ন প্রয়োজন,
প্রাক্কলন কি? কিভাবে প্রাক্কলন বাস্তবায়ন করতে হয়,
তা কিছুই জানেন না
একটি আধুনিক দেশের
উপযোগী নীতি প্রণয়ন
প্রশাসন চালানোর জন্য যে ধারণা
আবশ্যক, যে দক্ষতার প্রয়োজন,
নিরক্ষর বা অশিক্ষিত মানুষের
তা নেই। দরিদ্র গ্রামবাসীর
স্বাভাবিক প্রজ্ঞাসম্পর্কে ভালো ভালো কথা
প্রচারিত হয়ে থাকে। কিন্তু
সত্যটি হচ্ছে, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রকে
সার্থক করতে চাইলে জনপ্রতিনিধিদের
অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে।
ষষ্ঠ বা দশম
শ্রেণি বা অন্য কোন
স্তর পর্যন্ত শিক্ষা থাকতে হবে
নিয়ে তর্ক চলতেই
পারে। কিন্তু শিক্ষার প্রয়োজন
নিয়ে কোনো তর্কের
অবকাশ নেইএজন্য উচিত স্থানীয় সরকার বিভাগ নির্বাচন কমিশনের একটি শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করা এবং ব্যাপারে একটি আইন পাস করাএর সঙ্গে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি যদি নির্ধারণ করা হয় তাহলে দেশের মানুষ যেমন শিক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে, তেমনি হবে এলাকার উন্নয়নতাই
বলা যায়, এগিয়ে চলার
পথটিকে কিছুতেই বাধাগ্রস্ত করা যাবে না
শুধু শিক্ষাই গণতান্ত্রিক
পরিসরে সব মানুষের সুষম
অংশগ্রহণের সঠিক উপায় হতে
পারে শিক্ষিত
জনপ্রতিনিধি স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে পারে
তাই অশিক্ষিতদের সুযোগ দিয়ে নয়,  শিক্ষিত
করেই বৈষম্য দূর করা
বুদ্ধিমানের কাজ
আব্দুল মালেক,
সচিব বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ।
মানিকগঞ্জ২৪/ ১৫ অক্টোবর/ ২০১৭।
আরও পড়ুন:

গৃহবন্দি সুচির সঙ্গে ক্ষমতার মসনদে বসা সুচির বিশাল পার্থক্য

আরো পড়ুুন