“পুলিশই জনতা এবং জনতাই পুলিশ”

আব্দুল মালেক: আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থারও জনক
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট পিলের গণমুখী পুলিশিং এর মূলনীতি
হতেই মূলতঃ কমিউনিটি পুলিশিং এর ধারণা আসে। তার আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থার মূল কথা
হল- “পুলিশই জনতা এবং জনতাই পুলিশ” (The police are public and the public are
police)।
রবার্ট পিলের 
কমিউনিটি পুলিশিং অর্থ জনগণকে পুলিশের কাজে সম্পৃক্ত করা।কমিউনিটি পুলিশিং
একটি গণমুখী (Community oriented), প্রতিরোধমূলক (Proactive) এবং সমস্যার
সমাধানমূলক (Solution based) পুলিশী ব্যবস্থা ও দর্শন যা জনগণকে সম্পৃক্ত করে
জনগণের প্রত্যাশা ও মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। 
কমিউনিটি পুলিশিং অর্থ কমিউনিটি কর্তৃক পরিচালিত পুলিশি
ব্যবস্থা। যাহা অপরাধ সমস্যা সমাধানে পুলিশ ও জনগণের যৌথ অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার
একটি নতুন পুলিশিং দর্শন । 
অন্যভাবে বলা যায়, কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় অপরাধ দমন
ও অপরাধ উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং বিভিন্ন সমস্যা
সমাধানের লক্ষ্যে পুলিশ ও ওই এলাকার জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতা ও যৌথ অংশীদারত্বের
ভিত্তিতে সমস্যা ও সমস্যার কারণ চিহ্নিত করে প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে
সমাধানের উপায় উদঘাটন ও বাস্তবায়নের পদ্ধতিই হলো কমিউনিটি পুলিশিং।
আমাদের দেশে পুলিশী  কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশীদারিত্ব
মূলক মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে অপরাধ প্রতিরোধের জন্য কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা গ্রহন
করা হয়েছে।এটা দেশের সাধারণ মানুষের শান্তি ও
নিরাপত্তার জন্য একটি মহৎ উদ্যোগ।
কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা কমিউনিটির সদস্যগণ, সমাজের
বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং পুলিশের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অপরাধ
প্রতিরোধ ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ের লক্ষ্যে অপরাধের কারণগুলো অনুসন্ধান করে
সেগুলো দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করাই মূলত একটি প্রতিরোধমূলক পুলিশি ব্যবস্থা।
অপরাধের কারণগুলো দূর করা যেহেতু পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব
নয় তাই এই কাজে অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা
হয়। কমিউনিটি পুলিশিং অপরাধ যাতে না ঘটে সেই উদ্দ্যেশ্যে পরিচালিত হয়। 
কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণকে আইনী পরামর্শ
দেয়া হয়।স্থানীয় কোন জটিলতায় কোন ব্যক্তি বা
পরিবার এই কমিটির বাইরে বা কমিটির অজানায় সরাসরি থানায় গিয়ে যদি অভিযোগ বা মামলা
করার উদ্যোগ নেন তা হলে থানা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট এলাকার কমিউনিটি পুলিশিং ইউনিটের
মতামত জানতে চান, ফলে এলাকার অনেক সমস্যাগুলোই মামলায় নথিভুক্ত হওয়ার পূর্বেই
সমাধান হয়ে যায়।
এটা একদিকে যেমন থানায় মামলার সংখ্যা কমে
যায় অন্যদিকে মানুষ আইনী জটিলতা থেকেও রেহাই পায়। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে পুলিশ ও
জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমে গিয়ে এক পরিবারের ন্যায় একটি আন্তরিকতার সৃষ্টি হয়।
কমিউনিটি পুলিশিং সম্মিলিত উদ্যোগ বলে অপরাধ প্রতিরোধ করাসহ
দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বৃদ্ধি একটি  যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে
সক্ষম। 
কমিউনিটি পুলিশিং প্রতিরোধমূলক ও সমস্যা
সমাধানভিত্তিক,পুলিশ ও জনগণের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা, ইহা গ্রহণীয় পুলিশী
কার্যক্রমের একটি দর্শন। সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানের লক্ষ্যে পুলিশের সাথে
অংশীদারিত্বমূলক কাজ করে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, সমঝোতা ও শ্রদ্ধা
বৃদ্ধি পায়।
পুলিশী কার্যক্রম ও পুলিশের সীমাবদ্ধতা
সম্বন্ধে জানা, পুলিশ ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমে এবং জনগণের মধ্যে পুলিশী
ভীতি ও অপরাধ ভীতি হ্রাস করা এবং জনগণ পুলিশকে সহায়তা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা,
অনুঘটক হিসাবে কাজ করা, কমিউনিটির সম্পদ কমিউনিটির উন্নয়নের জন্য ব্যবহারের সুযোগ
সৃষ্টি করাই কমিউনিটি পুলিশিং এর লক্ষ ও উদ্দ্যেশ্য।
কমিউনিটি পুলিশিং সাংগঠনিক কমিটির দুটো কাঠামো
থাকে উপদেষ্টা পরিষদ এবং  নির্বাহী কমিটি
বা কার্যকরী পরিষদ। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন হয়। নির্বাহী কমিটির
সদস্য সংখ্যা অঞ্চল ভেদে ১৫-২৫ এর মধ্যে হয়ে থাকে। 
কার্যবিধির ৪২, ৪৩, ৪৪, ও ৪৫ ধারা অনুসারে কিছু ক্ষেত্রে
জনসাধারণ পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে সহায়তা করতে বাধ্য। জনপ্রতিনিধি যেমন ইউনিয়ন
পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারগণ পুলিশি কাজে সহায়তা চাইতে পারেন। পুলিশ রেগুলেশনের
৩২ প্রবিধিতে এর উল্লেখ আছে।
ফৌজদারী কার্যবিধি এবং পুলিশ রেগুলেশনের এই ধারা অনুসারে
পুলিশী সহায়তা ও নেয়া যায়। কমিউনিটি পুলিশিং হলো পুলিশকে সহায়তা করার জনগণের একটি
সংগঠিত শক্তি। যেমন, রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যা
ও দিনাজপুরে খ্রিস্টান যাজককে হত্যার চেষ্টাকারিদের জনগণের সহযোগিতায় গ্রেপ্তার
করা হয়েছিল। জনগণ পুলিশের সাথে থাকলে সমাজের সকল ধরণের অপকর্ম দূর করা,সম্ভব।
 শুধু
মামলা নিয়ে, তদন্ত করে, চার্জশিট দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। জনগণ তথা
কমিউনিটি পুলিশকে সম্পৃক্ত করে অপরাধ প্রতিহত করতে হবে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় গিয়ে
ছাত্রছাত্রীদের মাদকসহ অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে সচেতন করতে হবে।
এ ছাড়া ভাড়াটিয়া, ভাসমান, অস্থায়ী আগন্তুকদের সঠিক পরিচয়
নির্ধারণ করে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিতকরণে কমিউনিটি পুলিশকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সভ্য
সমাজ আইন বেশি মানে, আইন মানলে অপরাধ কমে। 
তাই সমাজে আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে অপরাধসমূহ
নির্মূলে ব্যক্তিত্ব গঠন, সুন্দর সমাজ গঠন, নৈতিকতা, সৌজন্যতা চর্চা করতে হলে
কমিউনিটি পুলিশকে কাজে লাগাতে হবে। 
প্রশাসনের যেহেতু প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে
ঘুরে সকল খবর নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের যতেষ্ট অভাব রয়েছে, তাই, বর্তমান
সরকারের একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক“ কমিউনিটি পুলিশিং” ব্যবস্থাকে কার্যকর করার মাধ্যমে
আপামর জনসাধারণ কর্তৃক চাহিত বেশীরভাগ সমস্যাই 
সমাধান করা যেতে পারে।

আব্দুল মালেক: ইউপি সচিব, বরাইদ ইউনিয়ন
পরিষদ, সাটুরিয়া,মানিকগঞ্জ।
মানিকগঞ্জ২৪/ ২০ অক্টোবর/ ২০১৭।
আরও পড়ুন:

জনপ্রতিনিধি বনাম শিক্ষা

সাটুরিয়ায় এসবি লিংক বাস খাদে পড়ে আহত ৩০

আরো পড়ুুন