সাটুরিয়ার সাফুল্লি গ্রামের ৪২ মণ ওজনের সিনবাদ ষাঁড়। |
হাসান ফয়জী, ১৩ আগষ্ট: ভারতীয় পশু অবৈধভাবে দেশে প্রবেশের আশংকায় সাটুরিয়া উপজেলার ঈদকে সামনে রেখে বেশী ওজনের ষাঁড় ও অন্যান্য পশু উৎপাদনকারী খামারিরা শংকিত হয়ে পড়েছেন। তবে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা দাবী করছেন ঈদুল আযহার ৩-৪ দিন আগেই সব পশু বিক্রি হয়ে যাবে।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটুব ঘুরছে দেশের সবচেয়ে বেশী ওজনের তাকমা ক্ষ্যাত রাজা বাবুসহ সিনবাদ, কালোচাঁদ, ডন ও স¤্রাট নামক ষাঁড়ের নিউজ। ফেসবুকে নিউজ ফিড শুধু সাটুরিয়া উপজেলায় দেশীয় পদ্বতিতে ঈদের হাটে বিক্রি করা উপযোগী ষাঁড়ের নিউজ লিংক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত ঝড় বইছে বিভিন্ন মন্তব্যের মাধ্যমে। দেশের ১ম সারির বেসরকারী টিলিভিশনে প্রচারিত হচেছ এ সাটুরিয়ার বিচিত্র ষাঁড়ের নিউজ। দেশের নামকরা প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে এসব ষাঁড়ের খবর। অপরদিকে ইউটুব চ্যানেলও পিছিয়ে নেই । তাছাড়া ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে চলছে এর ওজন নিয়ে তুমুল ঝড়। কিন্তু এত কিছুর পরও এখন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত পাওয়া ষাঁড় বিক্রি করতে পারেন নি কোন খামারি।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেনারী সার্জন ডা. মো. সেলিম জাহান বলেন, আসন্ন ইদুল আযহাকে সামরে রেখে এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় ৩০ টি খামারে ৬ হাজার ২ শত ২৯ টি পশু লালন পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬শত ২৩ টি ষাঁড়, ৩১৫ টি গাভি, ১৫৫ টি বলদ রয়েছে। ২ হাজার ১ শত ৬৫টি ছাগল ও ভেড়াও রয়েছে। বিভিন্ন গো খাদ্যের পরার্মশসহ নিয়মিত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এসব খামারে।
এ কর্মকর্তা আরো বলেন, বাংলাদেশসহ দেশের বিভিন্ন দেশে এই মুহুর্তের ভাইরাল হওয়া খবর হচেছ সাটুরিয়ার উৎপাদিত বিভিন্ন ষাঁড়ের নাম। গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত নিউজ লিংক ফেসবুকে শেয়ার করায় প্রতিদিন দেশ এবং দেশের বাহিরে থেকে প্রতিদিন শত শত ফোন আসছে খামারির মালিকদের নিকট। কিন্তু ঈদের হাট এখনও জমে উঠেনি এবং ভারতীয় পশু দেশে প্রবেশের আসংকায় শংকিত হয়ে পড়েছেন তারা। কিন্তু আর ৪-৫ দিন পরেই ঈদের হাট জমে উঠলে এ আশংকা অনেকটাই কেটে যাবে।
সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন খামারি এবং সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলে যানা যায়, ২০১৫ সালে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী গ্রামের তারা মিয়া তার ৯ ফুট লম্বা ও ৮ ফুটের ভেড়ের একটি ষাঁড় ২২ লক্ষ টাকা দাম হাকিয়ে আলোচনায় আসেন। সেই সময়ে তিনি সকল জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন সংস্ক্রনে প্রকাশিত হওয়ায় আলোচনায় আসেন।
২০১৬ তে দিঘুলিয়া ইউনিয়নের দেলুয়া গ্রামের পরিস্কার বিবির লক্ষিসোনা নিয়ে নিউজ প্রকাশিত হয়ে আলোচনায় আসেন। পরে সেই লক্ষিসোনা ১০ লক্ষ টাকা বিক্রি করে সমালোচকদের জবাব দেন। পরের বছর ৩৯ মণ ওজনের রাজা বাবুও নিয়ে সারা দেশে আলোচনায় আসেন। কিন্তু কাংক্ষিত দাম না পাওয়ায় সেবার বিক্রি করেন। লালন- পালন করেন আরও একটি বছর । সেই রাজা বাবুর ২০১৮ তে ওজন এখন ৫২ মণ। প্রায় গণমাধ্যমে নিউজ প্রচারিত ও প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবসায়ীরা দেখা পান নি খামারি খান্নু মিয়া।
নান্দেশ্বরী গ্রামের ৪২ মণ ওজনের সম্রাট ষাঁড় |
চলতি ঈদুল আযহার হাটে বিক্রি করতে প্রস্তুত রয়েছেন সে সব ষাঁড় রয়েছেন সম্রাট তাদের মধ্যে অন্যতম। এটির মালিক সাটুরিয়ার সিমান্তবর্তী এলকায় ধামরাই উপজেলার নান্দেশরী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা এম, এ কুদ্দুছ। সাড়ে ৪২ মণ ওজনের ষাঁড় স¤্রাটের। এ ষাঁড় সম্মর্কে খোজ নিতে খামারির মালিক সেলিমে মোবাইল ০১৭৪০৮২০৮৪৭ যোগাযোগ করতে পারেন।
সবচেয়ে বেশী আলোচনায় আছেন সাটুরিয়ার সাফুল্লি গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ৪০ মণ ওজনের সিনবাদ। প্রতিদিন শত শত ফোন পাচ্ছেন এ সিনবাদের মালিক। ব্যতিক্রমি নাম ও সুন্দর এ ষাঁড়টি ফেসবুক, অনলাইন এবং ইউটুবের বাজার গরম রাখলেও এখন পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন নি। এ ষাঁড় ক্রয় করতে চাইলে মালিক বিল্লাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারে ০১৭২৬৬২২৫৭৩।
বালিয়াটী ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশী ওজনের ষাঁড় হচেছ গর্জনা গ্রামের বড় বাড়ীর আবুল কাশেম মেম্বারের ৩৪ মণ ওজনের কালোচাঁদের। সিন্দি জাতের কালো রংয়ের ভাল দাম পাবেন বলে দাবী করছেন মালিক। এ সম্পর্কে জানতে কল করুন ০১৭২০২৯৪৯৬১ এই নাম্বারে।
বালিয়াটীর ৩৪ মণ ওজনের কালোচাঁদ |
অপরদিক যারা মধ্যম ওজনের ষাঁড় কিনতে চান তাদের জন্য সুখবর নিয়ে আসছে একই ইউনিয়নের ভাঙ্গাবাড়ীর গ্রামের যুবক মিজানুর রহমানের কালো ডন নামের ষাঁড়টি। ডনের ওজন ২৪ মণ। ডন সম্পর্কে খোজ নিতে মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন ০১৭৪১৭৫৯৩৭৯ নাম্বারে।
২৪ মণ ওজনের ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামের ডন |
খামারির মালিকরা বলেন, আমরা বিগত ৩ বছরে সাটুরিয়ায় বেশী ওজনের ষাঁড় লালন করে ভাল দাম পেয়েছেন এ আশায় আমরাও শুরু করি। আমাদের ষাঁড়, ৫২, ৪২, ৪০ মণ ওজনের ষাঁড় হাটে নিয়ে বিক্রি করা কষ্ট সাধ্য। তাই আমরা আশা করছিলাম এসব পশু বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে পারব। নিউজ প্রচার ও প্রকাশ হওয়ার পর থেকে শত শত ফোন পেলেও এখনও আমরা কোন ষাঁড় বিক্রি করতে পারে নি। সময় মত এসব ষাঁড় উপযুক্ত দামে বিক্রি না করতে পারলে আমরা চরম আর্থিক ক্ষতি গ্রস্ত হব।
এ ব্যাপারে ৪২ মণ ওজনের ষাঁড় সিনবাদের মালিক বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ষাঁড়ের দাম বলছেন কিন্তু বাড়ী আসছেন কম। শুধু দেখে যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বাড়ী থেকে কেউ কিনতে চাইলে আমি সিমীত লাভেই বিক্রি করব।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিসের ভেটেনারী সার্জন ডা. মো. সেলিম জাহান জানান, সাটুরিয়াতে দেশের সর্বোচ্চ ওজন ৫২ মণের রাজা বাবু ছাড়াও ৪২. ৪০, ৩৫, ৩০ মণসহ ২০-২২ মণ ওজনের অন্তত অর্ধশতাধিক ষাঁড় রয়েছে। যা সম্মুর্ণ দেশী পদ্বতিতে বড় করা হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই এসব ষাঁড় বিক্রি শুরু হওয়ার পাশা- পাশি অন্যন্য পশুও ব্যাপক হারে বিক্রি শরু হবে ।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ১৩ আগষ্ট ২০১৮।
আরও পড়ুন: