মানিকগঞ্জে পুরাতন লক্কর ঝক্কর যানবাহনে তুলির আচড়ে বনে যাচ্ছে নতুন যানবাহনে

২৪ প্রতিবেদকঃ চলছে রমজান মাস। সামনেই ঈদুল ফিতর আর এ মৌসুম কে কেন্দ্র করে মানিকগঞ্জের পরিবহন মালিকরা পুরাতন লক্কর জক্কর যানবাহন গেরেজে কাজ করাতে নেমে গেছে। তাদের টার্গেট ঈদের আগেই সড়কে নামবে এ সকল বাস। জেলায় ১২ টি যানবাহনের গ্যারেজে প্রায় ২ শতাধিক পরিবহন নির্মাণ শ্রমিক রাত- দিন পরিশ্রম করে পুরাতন পরিবহনের ইঞ্জিন, বডি, গ্লাস, ওয়ারিং এবং রং এর কাজ নিয়ে ভীশন কর্মব্যস্তত সময় পার করছেন।
ঈদের সময় কর্মব্যস্ত মানুষ যানবহনের সিটে চেপে বসে নারীর টানে ছুটবে গ্রামের বাড়ী।

 মালিকরা সেই সব পুরাতন যানবাহনের কাজ করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পাশা- পাশি আনা হয়েছে নতুন ইঞ্জিনের যানবাহন। ঈদের আগেই মালিকরা সড়কে নামাতে জেলার ১২ টি গ্যারেজের প্রায় দুই শতাধিক পরিবহন নির্মাণ শ্রমিকরাও দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।

শনিবার ( ১৭ জুলাই)  ঢাকা- আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইন সংলগ্ন কয়েকটি গ্যারেজে গিয়ে দেখা যায়, ভীশন ব্যাস্ত সময় পার করছেন পরিবহন নির্মাণ শ্রমিকরা। যেন কথা বলার সময় নেই। এ পরিবহন কাজ করাতে হয় কয়েকটি বিভাগে। একজন ইঞ্জিন, বডি তৈরি, গ্লাস ফিটিং, গদি ফিটিং, রং তুলি, বৈদ্যতিক ওয়ারিং কাজ। একজন পরিবহন মালিককেই প্রতিটি কাজ আলাদা আলাদা চুক্তিতে কাজ করাতে হয়।

এ ব্যাপারে রংয়ের মিস্ত্রি বাবুল হোসেন জানান, এখন রমজান মাস পরিবহন মালিকরা পুরাতন ও নতুন বাসে রং করাচ্ছে, সবই গাড়ীই ঈদের আগে চায়, আমার একটি বাসে রং করাতে ৭ দিন সময় লাগে। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমাদের কাজ বন্ধ থাকে, তাই চাহিদা থাকলেও সব কাজ করতে পারি না। তিনি আরো জানান, একটি বাসে ২৫ হাজার টাকা নেন রং করাতে।

মানিকগঞ্জ – গুলিস্তান সড়কের শুভযাত্রার বাসের চালক জসিম জানান, ঈদেই সব যাত্রী চায় ভাল একটি বাসে বাড়ী ফিরতে, তাই মহজানের অনুরোধে পুরাতন গাড়ীর টুক টাক কাজ করে রং করাচ্ছি, আগামী কালকেই বাসটি সড়কে নামাতে পারব।

যানবহনের বডি মিস্ত্রি বাবুল জানান, তিনি প্রায় ২২ বছর ধরে যানবহনের বডি তৈরি করছি। তার নিকট ঈদ উপলক্ষে নতুন ৪ টি আর পুরাতন ৩ টি বাসের কাজ পেয়েছি। দিন রাত কাজ করে এ কাজ শেষ করবেন বলে কোন কর্মচারীর ছুটি দিচ্ছি না।

গ্লাস মিস্ত্রি মানিক জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রচুর কাজ পাচ্ছি। আমার কাজ করতে কম সময় লাগে, বিধায় এবার ঈদ উপলক্ষে পুরাতন ১৫ টি এবং নতুন ২ টি গাড়ীর গ্লাস ফিটিংয়ের কাজ পেয়েছি।

জেলার ১২টি গ্যারেজ ঘুরে বেশীর ভাগই পুরাতন- ইঞ্জিনের যানবহন ঈদ উপলক্ষে কাজ করছে দেখা গেলেও নতুন গাড়ীও নামছে এ ঈদে। নতুন গাড়ী নামানোর মহাজন সাজিব জানান, মানিকগঞ্জ- গুলিস্তান সড়কের শুভযাত্রা পরিবহনে তার ৪ টি বাস আছে। এই ঈদ কে সামনে রেখে আরও একটি নতুন ঈঞ্জিনের বাস সড়কে নামাবেন। এজন্য তিনি উপস্থিত থেকে নির্মাণ শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।

বডি মিস্ত্রি চাঁন মিয়া জানান, ৫ বছর আগে শুভযাত্রা , যাত্রীসেবা বাসের সম্পূর্ণ বডি তৈরি করতে মালিকদে নিকট থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা চুক্তি নিতাম। সব খরচ বাদে দেড় মাসে ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ হত। কিন্তু গ্যারেজ ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, নিমার্ণ মিস্ত্রিদেরে মুজুরী এবং রডের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধিতে আগের চেয়ে ৫০ হাজার টাকা বেশী নিলেও লাভ হচ্ছে না। এখন পেটের দায়ে অন্য কাজ করতে পারি না তাই বাধ্য হয়ে এ গ্যারেজ কাজ করছি।
এ চান মিয়ার গ্যারেজে বসেই কথা হয় ১০ টি বাসের মালিক রেজাউল করিমের সাথে, মানিকগঞ্জে ছোট বড় মিলে ১২ টি গ্যারেজ আছে। এর মধ্যে ৪ টি গ্যারেজ সবচেয়ে বড় ও কাজ বেশী হয়। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সকল মহাজনরাই তাদের পুরাতন বাস পূর্ণ সংস্কার করে যাচ্ছে। পাশা- পাশি নতুন বাসের কাজ করছে। এ ১২ টি গ্যারেজে প্রায় ২ শতাধিক পরিবহন নির্মাণ শ্রমিক দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আশা করেন ঈদ উপলক্ষে অর্ধশতাধিক বাস পূর্ন সংস্কার করছে পরিবহন মালিকরা।

তবে নতুন – পুরাতন বাস রং তুলি দিয়ে সড়কে নামলেও যাত্রীদের নিরপদে নামিয়ে দিয়ে পরিবহন শ্রমিকরাও নিরাপদে বাড়ী ফিরতে পারে এমনটাই প্রত্যশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরো পড়ুুন