মানিকগঞ্জ২৪ প্রতিনিধিঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তার সহধর্মিণী প্রমীলা দেবীর স্মৃতি বিজড়িত মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়িটি পড়ে আছে অযত্নে আর অবেহেলায় পড়ে আছে। স্বাধীনতার পর পরই বাড়িটি দখল হয়ে যায় কিছু পরিবারের কাছে। ব্যাবহার কারীদের অসচেতনতায় এবং স্থানীয় প্রশাষনের অবহেলায় বাড়িটি হারাতে বসেছে তার সৌন্দর্য। তবে সম্প্রতি এ ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ী থেকে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
মানিকগঞ্জের শিবালয উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ি। অনিন্দ্য সুন্দর এর স্থাপত্য কাঠমো আর এর প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা এ বাড়িটি। এই জমিদার বাড়িটি বাবু হেমশংকর রায় চৌধুরী, বাবু জয শংকর রায চৌধুরী, দুই ভাইয়ের নিজ বসতবাড়ী ছিল। এখান থেকেই তারা জমিদারি পরিচালনা করতেন। মুল বাড়িতেই ৫৫ টি ঘর ছিল বলে জানা যায়।
এই জমিদার বাড়িতে বেশ কয়েকটা সিড়ি আছে যা, দিয়ে ছাদে ওঠা যায় এখনও। প্রতিটি বাড়ির ছাদ এত কাছাকাছি যে, ইচ্ছা করলেই একটা থেকে আরেক টা তে যাওয়া যায়। ছাদের উপর থেকে পুরো বাড়িটা দেখা যায়, এক কথায় দারুন। এই বাড়িতেই সেই সময়ের দুটো পুকুর ছিল, এর একটি বিলীন হয়ে গেছে। আরেক টি রয়েছে মন্দিরের পাশেই। বাড়ির মধ্যে ছিল দুটি মন্দির আর একটি মঠ। চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর নবরতœ মন্দিরটি এখনও দারিয়ে আছে বেশ ভালও আছে।
তেওতা জমিদারি নিয়ে এলাকায় কিছু উপকথা উপকাথা রয়েছে, কথা অনুযায়ী তেওতা গ্রামের পাঁচু বাল্য বয়সের তার পিতৃহারা হন। বিধবা মা এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে অনেক কষ্টে পাঁচুকে বড় করেন। একদিন পাঁচু মায়ের কাছে মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার বায়না ধরে। তাই একদিন গ্রামেরই এক জেলের কাছ থেকে বাকিতে দুই পয়সার পুঁটি মাছ কেনেন মা। দুপুরে জেলে যখন বাড়ি যাবে তখন পয়সা দেবেন। দুপুরে মাছ রান্না করে পাঁচুকে ভাত বেড়ে দিয়েছেন মা, ঠিক তখনই জেলে বাড়িতে হাজির পয়সা নিতে। কিন্তু মায়ের তখনো পয়সা জোগাড় হয়নি। জেলে তখন রান্না করা মাছই তুলে নিয়ে যায়। ক্ষোভে-দুঃখে পাঁচু ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। যমুনা পার হয়ে হাজির হয় গোয়ালন্দ ঘাটে। সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করে।
তারপর নিজ বুদ্ধি আর পরিশ্রমে একসময় পাঁচু নিজেই ব্যবসা শুরু করে। এরপর টাকা-পয়সার মালিক হয়ে তেওতায় মায়ের কাছে ফিরে আসে। আশে পাশের দশ গ্রামের বেশির ভাগ জমিই কিনে নেয় মায়ে জন্য। পাঁচুর পরবর্তী বংশধররাই তেওতা জমিদারি প্রতিষ্ঠা করে।
বাড়িটির বয়স ছাড়িয়েছে প্রায় ৩শত বছর। এই জমিদার বাড়িতে নজরুলের বেশ কয়েকবার যাতায়াত হয়েছিল। জমিদার বাড়িটির পাশেই ছিল কবি পতœী প্রমীলা দেবীর ফুপুর বাড়ি। প্রমীলার বাবা বসন্ত সেনের ভাইয়ের ছেলে বীরেন সেন ছিলেন কবির বন্ধু। সেই সূত্র ধরেই নজরুল-প্রমীলার প্রেম এবং বিয়ে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাড়িটিতে যমুনার ভাঙনে বাস্তুহারা প্রায় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের কারণেই জমিদার বাড়ির মূল সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যায়।
সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসন তাদের ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়। স্থানীয়দের দাবী জমিদার বাড়িটিকে সংস্কার করে এর সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনে এটিকে পর্যটন এলাকায় রুপান্তর করা হোক।
এ বিষয়ে স্থানীয় নজরুল সংঘটক সাইফুল ইসলাম খান বলেন, এই জমিদার বাড়ীটিকে সংস্কার করে এখানে হতে পারে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল ইনিষ্টিটিউট কেন্দ্র,যাদুঘর। আবার হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। যেটি সরকারি ভাবে ইতি মধ্যে ঘোষনা করা হয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়নের পালা।
তেওতা একাডেমির শিক্ষক অজয় চক্রবর্তী বলেন, এ তেওতা জমিদার বাড়ীতে কিছু দিন থেকে ছিলেন নজরুল ইসলাম। নবরতœ,বসন্তকালের পরিবেশ তিনি উপভোগ করেছেন। নজরুল যে তেওতা এসেছিলেন তার কিছু প্রমান পাওয়া যায় ছোট হিতা কবিতায়। নজরুলের ছেলেদের মামা বাড়ী যে তেওতাতে সে কথা উল্লেখ্য করা আছে হারা ছেলের চিঠি কবিতায়।
শিবালয় উপজেলার তেওতা এলাকার একাধিক ব্যাক্তিরা জানান,দ্রæত সময়ের ভিতর এ জমিদার বাড়ীটিকে সংস্কার করে নজরুল-প্রমীলার সৃতি বিজরিত এলাকাকে পর্যটন কেন্দ্র করতে পারেন সরকার।এতে করে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব পাবে ।
শিবালয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, এ বাড়িটি দেখার জন্য প্রতিদিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসে। উপজেলা প্রশাষনের পক্ষ থেকে মন্ত্রনালয়ের কাছে এই জমিদার বাড়ীটির সংস্কার ও সংরক্ষনের জন্য একাধিক বার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে । এর ফলে তেওতা জমিদার বাড়ির কাজও শরু হয়েছে ।