মানিকগঞ্জে সততা স্টোরে সততা নেই

মোহাম্মদ হাসান ফয়জী: ঘরির কাটা দুপুর ২ টা ছুই ছুই। জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সততা স্টোরে সম্প্রতি দুপুরে গিয়ে দেখা যায় তালা বদ্ধ। আশে পাশের কোন ছাত্র- ছাত্রীও নেই। ছবি তুলতে গিয়ে স্কুলের দপ্তরি এগিয়ে আসে। পরিচয় পেয়ে সততা স্টোরটি খুলেদেন। নাম সততা হলেও স্টোরে গিয়ে কোন সততার ছাপ পাওয়া গেল না। পণ্য সামগ্রীর রাখর জিনিস আছে কিন্তু কোন পণ্য নেই। এ বিদ্যালয়ের সততা স্টোরে ২ টি কলম, ১২টি খাতা ছাড়া কিছুই পাওয়া গেল না। উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সততা শেখানোর জন্য পণ্য থাকবে কিন্তু কোন দোকানী থাকবে না, পণ্য ক্রয় করে টাকা দিয়ে আসবে রক্ষিত বক্্ের। কিন্তু উদ্যোগ ভাল হলেও সচেতনার অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের এ মহতী উদ্যোগ।

বালিয়াটী ঈশ্চর চন্দ্র বিদ্যারলের সততা স্টোরটি গত বছরের আগষ্টে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার উদ্বোধন করেন। সে সময় ২৭টি মত পণ্য দিয়ে শুরু করলেও উদ্বোধনের ৬ মাসের মাথায় মাত্র এখানে আছে মাত্র ২ টি পণ্য। শুধু খাতা ও আর কলম। সততা স্টোরের সেলফ ও খাবার রাখার সব পাত্রই থরে থরে সাজানো আছে। কিন্তু নেই কোন পণ্য। এ বিদ্যালয়ের সততা স্টোরটি প্রায় ২ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

একই উপজেলার সাটুরিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালেয় মঙ্গলবার দুপুর ৩ টার দিকে দেখা যায় এখানকার সততা স্টোরটিও বন্দ। কথা হয় সততা স্টোর এর দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক এখলাছুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, খাতা, কলম, পেন্সিল, রং পেন্সিল, জ্যামিতি বক্স, স্কেল, বিস্কুট, চানাচুর, কেক, সিংগারা, সমাচাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ও খাবারের সামগ্রি নিয়ে সাটুরিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সততা স্টোর উদ্বোধন করা হয় গেল বছরের ২৪ আগষ্টে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ২ হাজার শত টাকার মালামাল কিনে দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এক মাসের মাথায় সব পণ্য সামগ্রী নিয়ে নেয় টাকা ছাড়া। নির্দিষ্ট বক্স খুলে দেখা যায় যা টাকা আছে যার অধিকাংশ ছেড়া ও সম্পূর্ণ অচল।

তিনি আরো জানান, পরে এক শিক্ষকের ব্যক্তিগত সহযোগীতায় আবার কিছু পণ্য সামগ্রী কিনে সততা স্টোর খোলা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থী উপকরণ কেনেন। কিন্তু ঠিক মত টাকা রাখেন না বক্সে। ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে এ মহান উদ্যোগটি।

এ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লাবনি আক্তার জানান, আমার বিদ্যালয়ের আশে পাশে কোন লাইব্রী নেই তাছাড়া কোন নাস্তার কোন দোকানও নেই। ফলে সততা ষ্টোর নাস্তা থাকলে আমাদের বাইরে যেতে হয় না।

একই ক্লাসের উর্মি জানান, শুরুর দিকে সবাই যেতাম কিন্তু এখন তেমন কিছু থাকে না সততা স্টোরে । তাই বাড়ী থেকে আনা খাবারই খাই টিফিনের সময়।
এ ব্যাপারে বালিয়াটী ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালেয়র প্রধান শিক্ষক মো. আছালত জামান খান আরিফ বলেন, দোকানে সব থাকবে কিন্তু দোকানী থাকবে না। শিক্ষার্থীরা ক্রয় করে টাকা রেখে যাবে বক্সে উদ্যোগটি মহান। কিন্তু নানান কারনে সততা স্টোরটি নামে মাত্র চালু রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মইনুদ্দিন, আগে শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের সততা শিখাতে হবে। পরিবারেরও এ ব্যাপারে দায়িত্ব আছে। শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে একাধিক সভা সেমিনার করার উচিত এ  সততা স্টোর সম্পর্কে সচেতনা জাগ্রত করার জন্য।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, আমার বিদ্যালয়ে সততা সংঘ কমিটি আছে, কিন্তু সততা স্টোর নেই। তবে আমরা দ্রুত খোলার চেষ্টা করছি।

দৌলতপুর উপজেলার কলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আক্তার হোসেন বলেন, সততা স্টোর চালু করার জন্য আমরা ঘর তৈরি করছি। ঘর হলেই উদ্বোধন কর হবে।

মানিকগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রেবেকা জাহান বলেন, মানিকগঞ্জ সদরসহ মোট ৭ উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে সততা স্টোর চালু হয়েছে। এরমধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় ভাল চলছে। সব বিদ্যালয়ে সততা স্টোর চালু করার জন্য ইতিমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে যে প্রতিষ্ঠানে পণ্য কিনে টাকা দিচ্ছে না, এ ব্যাপারে শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শিক্ষার বিষয়টি জোর দিতে হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

মানিকগঞ্জ২৪/ মানিকগঞ্জ/ ৫ মার্চ/ ২০১৮।
আরও পড়ুন:

ঘিওরে শিক্ষার্থীদের মাঝে টিফিন বক্স বিতরণ

আরো পড়ুুন