আজ সাটুরিয়া ট্রাজেডির ২৯ বছর” টর্নেডোতে নিহত হয়েছিলেন ১৩ শ মানুষ

সাটুরিয়ায় টর্নেডোতে আহত আমির খসরু

হাসান ফয়জী, মানিকগঞ্জ ২৬ এপ্রিল: আজ ভয়াল ২৬ এপ্রিল। সাটুরিয়া টর্নেডো এ যাবৎকালে পৃথীবির সবচেয়ে ভয়াবহ ও বড়  টর্নেডো। ১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল বুধবার বিকালে মাত্র ১ মিনিটের কম সময়ের স্থায়ীত্বকালের এ টর্নেডো জেলার সাটুরিয়া  বাজার, হরগজ, উত্তর কাউন্নারা, পশ্চিম কাউন্নারা ও বাহ্রসহ ১২ টি গ্রাম কে লন্ড ভন্ড করে দিয়ে যায়।

বিশেষ করে সাটুরিয়া বাজার কোন অস্তিত্ব ছিল না। সে দিন নিহত হয় শত শত মানুষ আহত হন অনন্ত ১২ হাজার মানুষ। কয়েক শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেদিনে ভাগ্যক্রমে বেচে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্তরা দাবী করছেন বছরে একটি দিন যেন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরণ করুন এ দিবসটি কে। ১৯৮৯ সালের ভয়াবহ টর্নেডো রেকর্ডভাঙা আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট ঘটনা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা (ডব্লিউএমও)।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
google_ad_client: “ca-pub-4524221949324018”,
enable_page_level_ads: true
});

১৯৮৯ সালের এপ্রিল মাস। তখন প্রচন্ড খড়া চলছিল। সেই সাথে ছিল রমজান মাস। বৃষ্টির জন্য নামাজও পড়া হয়েছিল।  ২৬ এপ্রিল দিন ছিল বুধবার। ইফতার কিছু পূর্ব মুহুর্তে কিছু বুঝে উঠার আগেই সাটরিয়া বাজার ধংস স্থুপে পরিণত হয়। এ বাজারে কোন ঘর বাড়ি ছিল না। সব ধংস স্থুপে পরিণত হয়। সাটুরিয়া বাজার ও এর আশে পাশের ১২ টি গ্রাম যেন মৃত্যুপড়ীতে পরিণত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সাইড থেকে জানা যায় সাটুরিয়া টর্নেডো নামে এ দুযোর্গে ১৩ শত মানুষ নিহত হয় এবং আহত হয় ১২ হাজার মানুষ। গৃহহারা হয় প্রায় ১ লক্ষ লোক।

সাটুরিয়ায় টর্নেডোতে আহত সুদেব বসাক

সাটুরিয়ায় টর্নেডোতে হাত কেটে ক্ষতিগ্রস্ত সাটুরিয়া বাজারের আমির খসরু বলেন, টর্নেডোর সময় আমি ঢাকা থেকে সাটুরিয়ার বাজারে ঢুকতে একটি ভবনে আশ্রয় নেই, ভবনটি ভেঙ্গে আমি নিচে পড়ে যাই, তখন আকাশে চেয়ে দেখি আগুনের শিখা উড়তেছে। মনে হল গাছ, টিন আকাশে উড়ছে, আর বিকট শব্দ হচেছ। আমার ছোট বোন দেয়াল চাপা পড়ে, কালেমা পড়ে এক হাত দিয়ে টান দিলে অলৌকিকভাবে আমার বোন কে দেয়াল থেকে তুলতে সক্ষম হই। তবে আমার ডান হাত উপর থেকে কাটা পড়ে। আমি শুকরিয়া জানাই হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছে তবে আল্লাহ আমার বোন ও আমাকে এখনও বাচিয়ে রেখেছে।

সাটুরিয়া টর্নেডোতে ক্ষতি গ্রস্ত সুদেব বসাক বলেন, আমি তখন ১৬ বছর বয়স। সেদিন আমার পেটে কাঠ ঢুকে পড়ে। ঐ ঘনটায় আমি টানা ১৮ মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজে কুমায় ছিলাম। ১৮ মাস পর আমার জ্ঞান ফিরে। দীর্ঘ ২ বছর পর সাটুরিয়ায় ফিরি। ১২- ১৩ বছর চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। শুধু আমি না সেদিন আমার মামা মারা গিয়েছিল। সাটুরিয়া বাজার এলকায় এমন কোন পরিবার ছিল না যে বাড়িতে কোন মানুষ মারা কিংবা  আহত হন নি। ২৯  বছর পার হলেও এখন সরকারী ভাবে এ দিনটি পালন করা হয় না। আমি জোর দাবী জানাচ্ছি এ দিন যে যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয়।

সাটুরিয়া বাজারের ব্যাবসায়ী লিটন সাহা বলেন, ঐ দিন আমাদের দোকানেই আমার কাকা মারা যায়। ঐ ঘটনার পর থেকে আকাশে মেঘ দেখলেই শরিল কেপে উঠে আবার বুঝি ঝড় আসল।

কাউন্নারা গ্রামের আতাউর রহমান বলেন, বর্তমান সাটুরিয়া বাজারে কৃষি ব্যাংক ভবনে ১৬ শতাংশ জমির উপর আমাদের ঘর, কাউন্নার গ্রামের অটো রাইস মিল ও করাই কারখান সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। তাতে ঐ সময় আমাদের আনুমানিক প্রায় ১ কোটি টাকা ক্ষয় ক্ষতি হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক গনেশ চন্দ্র বলেন, টর্নেডোর পর দেখি সাটুরিয়া বাজার যেন এক মৃত্যু পড়ী। পুড়ো বাজার যেন রক্তের বন্যা। মানুষের মরদেহ বীভৎস অবস্থায় পড়ে আছে। গুদাম ঘরের একিট চাল ভর্তি ট্রাক নদীর উপারে হসপিটাল গেটে পড়ে আছে। নদীর পানি মাছ সহ চকে ছিটকে পড়ে। সবচেয়ে অলৌকিক ঘটনা হচ্ছে আমতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহমদ আলীর ছোট পুত্র সন্তান বাশ ঝারের পেচিয়ে ছিল সে এখনও বেচে আছে।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({
google_ad_client: “ca-pub-4524221949324018”,
enable_page_level_ads: true
});

সাটুরিয়া বাজারের ব্যাবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, শুধু সাটুরিয়া নয় হাজীপুর, ভাটারা, হরগজ, ঘিওর, পালপাড়া, বসাক পাড়া, ধুল্লা,  হরগজ , কৈজুরি, পানাইজুরীসহ ১২ টি গ্রামের মানুষ আক্রান্ত হয়। টিন গুলি কুকড়ি মুকরি হয়ে গাছে গাছে আটকে ছিল। সেদিন আমার ছোট বোন ও নানী মারা যায়।  সে সময় নামমাত্র পুর্নবাসন কাজ চললওে ক্ষতগ্রিস্থরা পায়নি তেমন কোন সাহায্য সহযোগীতা। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ টর্নেডো স্বৃকিতি পেলেও দিনটি সরকারী ভাবে নেওয়া হয় না কোন কর্মসূচি যা খুবই লজ্জাকর।

সেদিনের স্বৃতি মনে পড়লে আজও মানুষ আতকে উঠেন। শরিলের বিভিন্ন অঙ্গ ও স্বজন হারা পরিবারের সদস্যরা দাবী করেন আর যাই হোক ২৬ এপ্রিল যেন প্রশাষনের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি। আর ১ হাজার ৩ শত নিহত ও  ১৩ হাজার আহত মানুষের স্বরণ করার জন্য কোন স্বৃতি স্তম্ব্য তৈরি করা হয়।

সাটুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বসির উদ্দিন ঠান্ডু বলেন, সাটুরিয়া টর্নেডো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টর্নেডো। নিহতদের স্বরনে আমি পরের বছর ১৯৯০ সনে একবার পালন করি। এর পর আর দিবসটি স্বরণ করা হয় নি। তবে এ বছর ত আর সময় হয়ে উঠবে না, আগামী বছর এ দিনটিতে দোয়া ও আলোচনা সভা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ ফারজানা সিদ্দিকী বলেন, ১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল প্রলংকারী টর্নেডোতে ভয়াবহ ক্ষতি হয়। এর আগে কেউ ঐ দুর্যোগের নিহত  ও আহতদের স্বরণে কোন স্বৃতি স্তম্ব তৈরির কথা বলে নি। আগামী মাসের সম্বন্নয় সভায় বিষয়টি আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মানিকগঞ্জ২৪/ সাটুরিয়া/ হা.ফ/ ২৬ এপ্রিল ২০১৮।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজায় মানিকগঞ্জের নিহত ৬০ শ্রমিকের পরিবার ভাল নেই 

আরো পড়ুুন