মোহাম্মদ হাসান ফয়জী ॥ মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার অপ্রতিরোধ্য রুবেল মিয়া পা দিয়ে লিখে এস,এস,সি পরীক্ষা দিচ্ছে। জন্মের পর থেকেই রুবেল মিয়ার দুই হাত নেই। নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়া লেখা শুরু করে রুবেল এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন পার উপর ভর করেই।
সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ঘোষ পাড়ার হবি মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া তিল্লি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি ২০১৮ সনের অনুষ্ঠিত এস,এস,সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে। সাটুরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এস, এস, সি পরীক্ষার কেন্দ্রে সোমবার গিয়ে দেখা যায়, রুবেল মিয়া তার দু পা দিয়ে নিজের খাতা ভাজ, মার্জিন করে সুন্দর করে বাম পা দিয়ে লিখছে।
রুবেল শুধু লেখা পড়া নয়, হাত ছাড়াই নিজের প্রায় সব কাজ করতে পারেন। পরীক্ষার পর সোমবার তার ভাড়া বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, কল চাপিয়ে পানি উঠিয়ে গোসল করছেন। শরিল মুছাসহ জামা কাপর পড়ছেন। পা দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। নিজের আসবাব পত্র, বই খাতা নিজেই গোছাতেই তার স্বাচ্ছন্দ।
রুবেলের মা সখিনা বেগম জানান, তার ৩ সন্তানের মধ্যে রুবেল ২য়। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। রুবেল জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। বড় হওয়ার পর ও একাই স্কুলে যেত। পড়ার শুনা করাচ্ছি অনেক কষ্ট করে। নিজে অন্যের বাড়িতে জ্বিয়ের কাজ করে ও বাবা রিক্সা ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তাই দিয়েই লেখা পড়া করাচ্ছি।
তিল্লি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হাসান ভুইয়া জানান, ভ্যান চালক হবি মিয়া ও সখিনা বেগমের ঘরে ২০০২ সালে জন্ম নেয় রুবেল। রুবেল বড় হবার পর তিল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, সে সময় থেকেই তার দু পা দিয়ে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। পরে তিল্লি প্রাথমিক পরীক্ষায় পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে জিপিএ ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আমার বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১৫ সনের জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন কওে জিপিএ ২.৯০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে ২০১৮ সালে রুবেল এস, এসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। যার রোল হচ্ছে ৩৪৩০৯৬, রেজি নং:১৫১০৫০২৭৬৪।
এ ব্যাপারে রুবেলের বাবা হবি মিয়া জানান, আমি পেশায় একজন রিক্সা চালক, রুবেল তার ইচ্ছা শক্তি নিয়ে পা দিয়ে লিখে এস,এস,সি পরীক্ষা দিচ্ছে। ঠিকমত বই কিনে দিতে পারি নি অভাবের সংসার থাকায়। রুবেল প্রচন্ড ইচ্চা শক্তি দিয়ে আজ এ পর্যন্ত পৌছেতে পেরেছে। এর আগে জেএসসি পরীক্ষার সময় ওকে নিয়ে পত্র পত্রিকায় লেখা লেখি হলে অনেকেই সাহায্য করছে। তবে এখন ওর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় আছি। এস,এস,সি পাশ করার পর ক্যামনে পড়ামু।
এ ব্যাপারে রুবেল বলেন, আমার হাত নেই সেটা মনেই করি না। আমি একজন নিজেকে প্রতিবন্ধী মনে করি না মানুষ মনে করি। আমার বন্ধু ও শিক্ষকরা সব সময় আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে। বিশেষ করে মানিকগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাশেদা ফেরদৌস মহোদয় আমার বাড়ীতে গিয়ে আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে। আমি পড়াশুনা শেষ করে মানুষের মানুষ ও সরকারী চাকুরি করে দেশ ও মা- বাবার সেবা করতে চাই।
এ ব্যাপারে রুবেলের এস,এস,সি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব ও সাটুরিয়া পাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন জানান, রুবেল মিয়ার পা দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে সেটা দেখে আমি বিস্মিত। প্রচন্ড মনোবল থাকলে হাজারও বাধার পরও সফল হওয়া সম্বব। রুবেল খুব শান্ত সবার সাথে বসে সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, রুবেল শারিরীক প্রতিবন্ধী হয়েও সে অন্যসব পরিক্ষার্থীদের সাথে স্বাভাবিক ভাবে পরিক্ষা দিচ্ছে । প্রতিবন্ধীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট বরাদ্ধও সে পাচ্ছে ।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ ফারাজানা সিদ্দিকী জানান, রুবেল পা দিয়ে লেখা পড়া করছেন এমন সংবাদ দেখে এর আগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাশেদা ফেরদৌস নিজে ওর বাড়িতে গিয়ে অর্থ প্রধান করেন। অপ্রতিরোধ্য রুবেল কে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে এবং তাকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সকল সুযোগ সুবিধা দেবার আশ্বাস দিলেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
মানিকগঞ্জ২৪/ ৬ ফেব্রুয়ারী/ ২০১৮।
আরও পড়ুন: