মানিকগঞ্জ২৪ প্রতিনিধিঃ আব্দুল হাই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে এক যুগ পার করেছেন। প্রতিদিন গ্রামের পর গ্রাম পারি দিয়ে ফেরি করে বিক্রি করছেন। ভাঙ্গাচোড়া আসবাব পত্র, প্লাসটিক, কাচ, চুল পুরোনো অচল জিনিস নিয়ে তার হাতের তৈরি হাওয়াই মিঠাই তুলে দিচ্ছেন বাচ্চাদের হাতে। নগদ টাকার চেয়ে এসব জিনিসই তার প্রথম পছন্দ। গ্রামে এ মিঠাই টি এক সম ছোট বড় সবাই চিনত, কিন্তু এখন আর কেউ তেমন চিনেই না, কারনও আছে অনেক, আধুনিকতার ছোয়ার বদলে বাচ্চাদের খাবারেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। দামী দামী ব্যান্ডের আইসক্রিম, চকলেট, চিপস, ক্যান্ডি, চুইংগাম এবং তরল জুস, পানীয় দখল করে নিয়েছে এক সময়কার শক্তিশালি শিশু খাবার হাওয়াই মিঠাইয়ের বাজার। তাই গ্রামের হাওয়াই মিঠাই এখন শহরের পার্কে স্থান নিয়েছে অনেক আগেই।
লাগবে হাওয়াই মিঠাই , লাগবে হাওয়াই মিঠাই এমন করে গ্রামের মেঠো পথে হকারেরা ডাকলে গ্রামের জি বউয়েরা এক সময় চার ,আট আনা কয়েন দিয়ে কিংবা পুরনো আসববাব পত্রে বিনিময়ে তাদের শিশু বাচ্চাদের হাতে তুলে দিত হাওয়াই মিঠাই, শিশুরা ও তা সাদরে গ্রহন করে নিত, আর সারা দিন বাবা- মা দের বিরক্ত করত না অন্য কোন খাবারের জন্য। যুগের সাথে বাচ্চাদের খাবারের ধরনও পাল্টেছে, দামী দামী ব্যান্ডের আইসক্রিম, চকলেট, চিপস, ক্যান্ডি, চুইংগাম এবং তরল জুস, পানীয় দখল করে নিয়েছে এক সময়কার শক্তিশালি শিশু খাবার হাওয়াই মিঠাই।
এখন আর গ্রামে এ হাওয়াই মিঠাই আসেও না, বাচ্চারা তাই চিনেও না , আমাদের দেশের একসময় হাট বাজার ছারাও মেলা বসলে কল্পনা করা যেত না এ হাওয়াই মিঠাই ছাড়া, কিন্তু এখন প্যাকেট জাত খাবার দখল করে নিয়েছে এ খাবার টি। যার ফলে এখন হারিয়ে যেতে বসেছে একসময় কার তমুল জনপ্রিয় শিশু খাবার হাওয়াই মিঠাই।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর সামনে পড়ন্ত বিকেলে ক্লান্ত শরীলে দেখা মিল্ল এক ব্যাক্তি হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতার। সারাদিন বিক্রি করে সাটুরিয়া বাড়ী পথে ভেন ঠেলছেন, দুপরে পেটে পড়েনি, তাই কিছু খাওয়ার জন্য একটি চার ষ্টলে ডুকলেন, সমাচা ও একটি ডাল পুরি খাওয়ার পর এ প্রতিবেদক তখন চার কাপে চুমুক দিতে দিতে তার সাথে কথা বলার সুযোগ নিল, শেষে একটি সুগন্দি জর্ধা দিয়ে পানের খিলি তার হাতে তুলে দিয়ে কথা হয় তার সাথে।নাম তার আবুদল হাই বয়স ঠিক বলতে পারে না, তবে ১৯৭১ যুদ্ধের সময় তার বয়স নাকি ১০ বছর, যুদ্ধের পর বাবার সাথে অন্য কাজ করলেও গ্রামের বাড়ী নীলফামারি থেকে ১৯৮১ সালে এলাকার সাভারে রাজাশন এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাড়ীতে উঠেন, তখন থেকে দিন মজুর কাজ করে দুই কন্যা আর স্ত্রীর নিয়ে ছোট সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেলিনে। পরে ২০০৩ সালে হাওয়াই মিঠাই মেশিন তৈরি করে একটি ভ্যান গাড়ি নিয়ে নেমে পড়েন এ পেশায়। এখন থাকেন সাটুরিয়া বাজারের একটি আরেকটি ভাড়া বাড়ীতে । এখান থেকেই সাটুরিয়ার বিভিন্ন গ্রামে ভোর হলেও বেড়িয়ে পড়েন হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করার জন্য।
হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা আব্দুল হাই জানান, ৫ বছর আগেও এ হাওয়াই মিঠাই মোটা মোটি সবাই চিনত, এখন বাচ্চা রা ত চিনেই না, অনেক মহিলারাও চিনে না, বাড়ী বাড়ী গিয়ে ডাকা ডাকি করে মানুষ জড় করে বলি নিবেন হাওয়াই মিঠাই, তখন বউ জি রা এ হাওয়াই মিঠাই চিনে না, যখন বুঝিয়ে বলি তখন চিনে, এবং ভালই বেচা কেনা হয়, তিতি আরো জানান, এ হাওয়াই মিঠাই এখন গ্রামের চেয়ে শহরের পার্কে বসালে বেশী বেচা কেনা হয়, শহরের মানুষ চিনে বেশী, কিন্তু সব হকারকে ত আর পর্কে বসতে দেয় না, পার্কে বড় ঝুর একটি ভিতরে ও আরেকটি গেটের সামনে বসতে দেয়, তাছাড়া গ্রামে এ মিঠাই বিক্রি করে লাভ বেশী, আমরা ত প্লাশটিক, কাচের বতল, ভাঙ্গা টিভির কভারসহ যতসব ভাঙ্গাচোড়া অচল জিনিস আছে যা অন্য হকার নেয় না, সেই জিনিস আমরা নেই , সারা দিনে যদি ৩০০ টাকার নগদ মিঠাই বিক্রি করি, ভাঙ্গাচোড়া জিনিস যা পাই তা বিক্রি করলে হয় ৭০০ টাকা ।
আব্দুল হাই আরো জানান, এ মিঠাই বিক্রি করতে হলে ১টি মেশিন প্রয়োজন পড়ে, যা ঢাকা থেকে বানাতে হয়, দাম পড়ে ৫ হাজার টাকা, যন্ত্রটি তৈরি হয়ে গেলে একটি ভ্যান গাড়িতে বসিয়েছেন। মিঠাই তৈরিতে শুদু মাত্র চিনি লাগে, আগে রং ব্যাবহার করলেও এখন প্রশাষনের চাপে তা আর করেন না। চুলার নিচে স্পিড (তেল জাতীয়) উপরে চিনি ছেড়ে , চাকা ঘুরাতে হয়, ঘুরাতে ঘুরাতে মাকর সার মত চার পাশে ছড়িয়ে যায়, তখন মেশিন বন্দ করে দিয়ে তা হাতে পেচিয়ে সাজিয়ে ফেলেন হাওয়াই মিঠাই। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার টাকার হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে পারেন, কোন সময় আরো বেশীও বিক্রি করেন। ১ হাজার টাকার হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করলে খরচ হয়, ৩০০ টাকা । স্বীকার না করলেও তার প্রতিমাসে শুদু ভাঙ্গাচোরা মাল বিক্রি করে থাকেন ৪০-৪৫ হাজার টাকার।
আব্দুল হাই স্বীকার না করলেও তার প্রতিমাসে শুদু ভাঙ্গাচোরা মাল বিক্রি করে থাকেন ৪০-৪৫ হাজার টাকার। ভাঙ্গাচোড়া জিনিস মাসে একবার মিনি ট্রাকে করে বিক্রি করি, প্রতি ট্রাকের দাম দেয় ৩০- ৩৫ হাজার টাকা। আর প্লাষ্টিক ও কাচের বোতল ৩ দিন পর পর বিক্রি করেন ২৫ শত টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা, আর মাথার চুল এক কেজি হলে বিক্রি করে দেই, এ হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে তার দুই কন্যা নাজমা (২২) লায়লা আক্তার (১৮) কে বিয়ে দিয়েছেন, তার ভাইল চলছে তার সংসার।
হাওয়াই মিঠাই ক্রয় করতে আসা বালিয়াটী বাজারে রুবেল মিয়া (৩০) জানান, আমরা ছোট সময় বাইরে খাবার বলতে হাটের দিন টানা আর হাওয়াই মিঠাই কে বুঝতাম, তাছাড়া বাড়ী বাড়ীতে গিয়ে বিক্রি করত হাওয়াই মিঠাই তখন আমরা গাছের শুপারি, কিংবা ধান, মুসুরী ডালের বিনিময়ে এ হাওয়াই মিঠাই কিনতাম।এখন আর গ্রামে গঞ্জে চোখেই পড়ে না হাওয়াই মিঠাই, অনেক বছর হাওয়াই মিঠাই পেয়ে তাই খেলাম।
খলিলাবাদ গ্রামের গ্রামীণ বধু পপি বেগম জানান, আমার ছেলে জিদান নিয়ে আসছে ভ্যানের সামনে , আমি ও আামর ছেলে চিনতাম না, ফেরিওয়ালা আমাকে বুঝিয়ে বল্লে তখন আমি আমার ও ছেলের জন্য হাওয়াই মিঠাই কিনলাম, ভালই লাগল, কেন চিনেন না প্রশ্ন করলে এখন ত গ্রামে এগুলো আসে না, তাছাড়া বচ্চারা আইসক্রিম, চকলেট, চিপস ও জুস খেতে অভ্যস্ত তাই আমার চিনি না ।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শামীম আরা জানান, মানুষ যখন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলে তখন সমাজে অপসংস্কৃতি ডুকে পড়ে তখন আমাদের দেশীও খাবার কে ভুলে যাই। বিদেশী ও ফাস্টফুডের প্রতি মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ে। হাওয়াই মিঠাই আমাদের দেশীও প্রাচীন খাবার। এ খাবার কে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে, যেমন আকর্ষণীয় পেকেট জাত করে বাজারে ছাড়লে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এ হাওয়াই মিঠাই কে চিনত এবং এর স্বাধ পেত।