মানিকগঞ্জে পদ্মা যমুনার কা‌লিগঙ্গার ভাঙ্গনে দিশে হারা অনেক পরিবার


মো: সোহেল রানা খান বিশেষ
প্রতিনিধি: গত ক
য়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে নদী
ভাঙ্গন

মানিকগঞ্জের পদ্মা যমুনা কালিগঙ্গার তীরবর্তী উপজেলা দৌলতপুর, ‌ঘিওর, হরিরামপুর এবং শিবালয় এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে
ভাঙ্গনের ফলে শতশত একর ফসলী জমি, গাছ পালা বাড়ি ঘর নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শ্বশান ঘাট, হাটবাজার আশ্রয়ন প্রকল্প। অথচ ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি
উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শ ছাড়া কিছুই করছেন না অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত
পরিবার
যমুনা
নদীবর্তী দৌলতপুর উপজেলায় চরকাটারী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, রাক্ষুসে যমুনার থাবায় বিপর্যস্ত লালপুর, চরকাটারী, কাঠালতুলি, চরকাটারী মন্ডলপাড়া, বোর্ড ঘর বাজার, চরকাটারী বাজার এলাকার চিত্র
যমুনা
নদীর
পাড়ে
চরকাটারী ইউনিয়নে 
অস্থায়ীভাবে করা প্রতিরক্ষামূলক বাঁধে ধস দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে ওইসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদমাদ্রাসা, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিসসহ শত শত বাড়িঘর জায়গাজমি

বছর
নদীতে
পানি
আসার
মাস
খানেক
আগে
চরকাটারী ইউনিয়নে যমুনা নদীর পূর্ব পাড়ে যমুনা নদী ভাঙ্গন রোধকল্পে কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরী করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু নদীর তীব্র স্রোতে নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যায় সেই প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ। ফলে ঐতিহ্যবাহী চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়, চরকাটারী বাজার, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভূমি মসজিদ, মাদ্রাসা শত শত বাড়িঘর আবাদী জমি ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়ে যায়
যমুনা
নদীর
ভাঙ্গনের শিকার ওই এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ ঘরবাড়িজিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ নিজের ভিটে মাটি হারিয়ে অন্যের জমির ওপর আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাঁশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন
চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক মন্ডল জানান, যমুনা নদীর ভাঙ্গনে চরকাটারী স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কল্যান কেন্দ্র, ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় শত শত বাড়িঘর, আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। তিনি ভাঙ্গন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে
লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা জানান, যমুনা নদী ভাঙ্গন রোধ কল্পে করা অস্থায়ী প্রতিরক্ষামুলক বাঁধের কিছু কিছু স্থানে ধ্বস দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে
ঘিওর
উপজেলায় কালীগঙ্গা নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে তরা মহাশ্মশান ঘাট। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় হিন্দু ধর্মালম্বীরা। ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে মরদেহ গোসল করানোর জায়গা এবং বেদীর (মরদেহ পোড়ানোর জায়গা) অর্ধেক অংশ। হুমকির মুখে একটি কালী নাট মন্দিরও

তরা
মহাশ্মশান ঘাট পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনন্দ কর্মকার জানান, ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুড়ি ইউনিয়নের একমাত্র শ্মশান এটি। ইউনিয়ন ছাড়াও আশপাশের এলাকার মরদেহ দাহ করা হয় এখানে।
কিন্তু
গত
কয়েকদিনে কালীগঙ্গা নদীর ভাঙনে শ্মশান ঘাটটি হুমকির মুখে পড়েছে। বেদীর অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হওয়ায় এখন মরদেহ দ্রাহ করার অবস্থাও নেই। তিনি আরোও বলেন, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কালী মন্দির এবং নাট মন্দির ছাড়াও আশপাশের বহু স্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে
মহাশ্মশান ঘাট পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিবেক সাহা জানান, কালীগঙ্গা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে মাটি কাটার ফলেই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি জানান, রোববার রাতেও শ্মশানের পাশেই একটি ড্রেজার বসানো হয়েছিল। পরে এলাকাবাসীর বাধার মুখে সেটি সরিয়ে নেয়া হয়
হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, স্বামী পরিত্যক্ত আমেনা বেগমের মাথা গোজার ঠাই টুকু দুই দিন আগে পদ্মায় গিলে খেয়েছে। পরিবারের ছেলে,ছেলের বৌ নিয়ে এখন রাস্তার ওপর অবস্থান নিয়েছে হতদরিদ্র এই অসহায় মানুষ গুলো। রাতারাতি পদ্মায় গ্রাস নেয়া আমেনার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।
 একই গ্রামের ৬০ বছরের আম্বেয়া বেগমের বাড়িটিও পদ্মার পেটে চলে যাওয়ায় এখন অন্যর জমিনে কোন রকম কুড়ে ঘর তুলে বাসবাস করছেন। পদ্মা আমাগো সব শেষ করে দিয়েছে। মাথার ছাউনিটাও দুই দিন আগে রাক্ষুসে নদী গিলে খাইছে
শুধুই
আমেনা

আম্বিয়া বেগমই নয় এই ইউনিয়নের বেদ্দকান্দি,মোহম্মদপুর,শুদ্রকান্দি এলাকার কৃষক আলাল ফকির,তোতা মিয়া,ইউসুব আলী ভুইয়া শের আলীর বাড়ি ঘর সব কিছুই চলে গেছে পদ্মার পেটে।
শেক
আলী
জানায়,
বাড়ি
ঘর
হারিয়ে
সে
পাশ্ববর্তী ইউনিয়র বাল্লা এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রুপক গাজী জানায়, আমাদের এলাকায় মানুষের প্রাধান সমস্যাই হচ্ছে নদী ভাঙ্গন।
গত
৪০
বছরে
হাজার
হাজার
পরিবার
ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। বৃহৎ ইউনিয়ন এখন ছোট্র একটি ইউনিয়নে পরিনত হয়েছে। মাত্র সাড়ে তিন হাজার ভোটার রয়েছে এখানে। সরকারের কাছে আমাদের দাবী শিঘ্রই এই ইউনিয়নটিকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচান
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস গাজী জানান, আমার ইউনিয়নটি পদ্মায় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন মানুষ জনের বসতি অনেক কমে গেছে। এক সময় ১৩টি মৌজা নিয়ে এই ইউনিয়নের সীমা ছিল কিন্ত এখন একটি মৌজায় চলে এসেছে। বাকি ১২টি মৌজার সব টুকু নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে স্থায়ী ভাবে ব্যবস্থা না নেয়া গেলে আমার এই কাঞ্চনপুর ইউনিয়নটি একসময় মানিকগঞ্জের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে
শিবালয়
ইউনিয়ন
পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, শিবালয় উপজেলার চর শিবালয় এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যমুনার ভাঙ্গনের বেশ কয়েকটি ঘর ভেঙ্গে নদী গর্ভে চলে গেছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা
এদিকে সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি, বরাইদ ও দিঘুলিয়া
ইউনিয়নে টানা বর্ষনে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহারী ঢলে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তার কাযালয় থেকে মাথা পিছু টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে।
এখানে স্থায়ী বাধ নির্মাণ না করলে ১০ টি শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান, ২ টি বাজার, কবর স্থান নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হবে বলে জানিয়েছেন বরাইদ ইউনিয়ন
পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশিদ।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা. ফ/ ২৬ জুলাই/ ২০১৭
আরো পড়ুুন