শুধু উৎসব নয় সারা বছর কাজ চাই

মানিকগঞ্জ২৪ প্রতিনিধিঃ  শুধু উৎসবে নয় সারা বছর কাজ চাই। দুই ঈদ আর পহেলা বৈশাখ আসলে আমাদের কাজে চাপ থাকে, বাকী মাস গুলো আমাদের বসে থাকতে হয় । তাছাড়া সুতার দাম বৃদ্ধি দফায় দফায় সুতার দাম ও শ্রমিক খরচ বাড়লেও বাড়েনি উৎপাদিত কাপড়ের দাম। ফলে বাধ্য হয়ে বাপদাদার পেশা ছেড়ে বেকার হয়ে পড়েছেন অনেকে। ৭ বছরে কমেছে প্রায় ১৯ হাজার কারিগর। কথা গুলি বলছিলেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা বরাইদ গ্রামের তাত ব্যাবসায়ী মোঃ বাবুল হোসেন।

সরেজমীনে গিয়ে দেখা যায় বরাইদ গ্রামের নিজ বাড়ীতে তিনি ৪ শ্রমিক নিয়ে তাতের কাপর বুনতে ভীশন ব্যাস্ত। ক্ষোভের সংগে তিনি বলেন ৭ বছর আগেও আমাদের এই গ্রামে ৪ হাজার তাতি ব্যাবসায়ী ছিল । এসব ব্যাবসায়ীর কারনে এর সাথে সরাসরি ২০ হাজার শ্রমিক ছিল। কিন্তু সুতার অত্যাধিক দাম বৃদ্ধি শ্রমিক খরচ বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়ে নি কাপরের দাম। এতে কমতে শুরু করেছে তাত ব্যাবসার সাথে সংশ্লিষ্ট মহাজন ও শ্রমিকের।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে এ গ্রামে এখন ৮-৯ শত শ্রমিক এ পেশায় নিয়োজিত আছে।
বরাইদ গ্রামে গেলে দেখা যায়, তাতের মেশিনের খট খট শব্দ, যে কয়জন মহাজন বাপ- দাদার পেশাকে ছাড়তে পারে নি , সেসব পরিবাররের নারীরা, স্কুল পড়–য়া ছাত্রীরা কেউ সুতার ডিমায় থেকে নলিতে বড়ছেন, আর শ্রমিকারা সেই আগের পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে কাপর বুনছেন। সাটুরিয়ার তাতের কাপর স্থানীয় চাহিদা থাকলেও এ পেশায় নতুন কোন ব্যাবসায়ীরা আসছেন না। ফলে দিন দিন এ তাতের শিল্পটি আজ বিলীন হবার পথে।

৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছাত্রী নিলা জানান, আমার বাবা এ কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ করতে পারে না। তাই এখনও তাতের কাপর ব্যাবসা করে যাচ্ছেন। আমি পড়াশুনার পাশা- পাশি বাবা কে সাহায্য করে মাসে ১৫- ১৮ শত আয় করতে পারছি।

তাতের শ্রমিক নুরমোহাম্মদ জানান, আগে দিনে ৮-১০ কাপর বুনাতে পারতাম তখন মুজুরী পেতাম ৩০০ টাকা। তাউ চলতে পারতামা। কিন্তু এখন দিনে ৩ টার বেশী কাপর বুনাতে পারি না, মুজুরী পাচ্ছি ৪৫০ টাকা, এ টাকা দিয়ে সংসার চলে না। তাও আবার বৈশাখের পরে কাজ থাকে না।

সাটুরিয়ার তাতের কাপরের  একসময় জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যেত দেশের বিভিন্না অঞ্চলে। কিন্তু এখন কয়েক শতাদিক পরিবার এ কাজ করছেন, তবে আশার আলো হচ্ছে দেশের নাম করা ব্র্যান্ড আরং এ পাঞ্জাবির কাপর নিচ্ছে এই সাটুয়িার বরাইদ গ্রাম থেকেই।

এ ব্যাপারে আরং কম্পানির পাঞ্জাবির কাপর সরবরাহ কারী আযহার আলী জানান, এই মন্ধার মধ্যেও আমি নিয়মিত আরং আমার কাছ থেকে পাঞ্জাবীর কাপর নিচ্ছে। ওদের একটি অর্ডার শেষ করতে আমার ৩ মাস সময় লেগে যায়। সব খরচ বাদ দিয়ে ৩ মাসে আমার ৫০ হাজার টাকা লাভ হচেছ।

সাটুরিয়ায় তৈরি করা কাপর ৪০০- ১৫০০ টাকা এবং পাঞ্জাবীর কাপর ২৫০- ৪০০ টাকা গজে বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কাপর ব্যাবসায়ী, শ্রমিকরা জানালেন তাতের সুতার দাম কমালে আবারও মুখরিত হয়ে উঠতে পারবে সাটুরিয়ার এ তাত শিল্প।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ ফারজানা সিদ্দিকী জানান, আমদের অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে সাটুরিয়ার তৈরি পাঞ্জাবির কাপর আরং এর মত কম্পানি নিচ্ছে।

আর তাতের কাপর মান সম্মত ভাবে তৈরি করতে পারলে আবারও সুদিন আসতে পারবেন বলে মনে করেন। সুতার দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন এ বিষয়টি শুধু সাটুরিয়ায় নয় সমগ্র বাংলাদেশের। তবে সাটুরিয়ার এ তাত শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাতীদের অল্প সুধে ঋৃণ পায় তার সুপারিশ করব আমার উর্ধতন কৃর্তপক্ষকে। 

আরো পড়ুুন