মোহাম্মদ হাসান ফয়জী: টাকা দিয়া কান ঢলা খাওয়াইলি বাবা, এক মা তার ছেলে কে এভাবেই বলছিলেন। সাটুরিয়া উপজেলার মুন্সিচর গ্রামের জুবায়ের, তাবা মা কে নিয়ে মানিকগঞ্জ সদর হসপিটালে ডাক্তার দেখিয়ে বালিয়াটী- সাটুরিয়া – গোলড়া সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন, সাটুরিয়া বাজার থেকে বালিয়াটী বাজারে আসতে সিএনজিতে উঠতে চেয়েছিলেন ঝাঁকি যাতে একটু কম লাগে। ছেলে ভ্যান ট্রলিতে উঠিয়ে ছিলেন। এ সড়কটি এতই খারাপ যে, ভ্যানে উঠে মা তার ছেলে কে বলছিলেন, টাকা দিয়ে কান ঢলা খাওয়ালি বাবা। শুধু এ অসুস্থ্য মা নন এ সড়কটি বর্তমানে চলাচলের সম্পুর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়াতে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
বন্যা, বৃষ্টি এবং অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক এবং প্বার্শবর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পরিবহন চলাচল করায় মানিকগঞ্জের বালিয়াটী- সাটুরিয়া – গোলড়া সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কটির বিভিন্ন অংশ দেবে গেছে ও খানা খন্দে ভরে গেছে। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ দাবী করছেন একনেক সভায় প্রকল্পটি পাশ হলেই কাজ শুরু করা হবে এ ব্যস্ততম সড়কটির।
এ সড়কটি এই বেহাল অবস্থার জন্য অন্যতম কারন হিসেবে স্থানীয়রা মনে করছেন, ঢাকা – আরিচা মহাসড়কের ধামরাই উপজেলার বাথুলি নামক স্থানে ওজন স্কেলের জরিমানা এড়াতে অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক গুলি চলাচল করে এই সড়ক পথে। তাছাড়া ঈদ উৎসব ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঢাকা- টাঙ্গাইল সড়কে যানজট হলেই যাত্রী বাহী পরিবহন গুলি ঢুকে পড়ছে এই আঞ্চলিক সড়কে।
এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠা ছাড়াও অন্তত ২০-২৫ টি স্থানে বড় বড় গর্তে সৃষ্টি হয়ে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া সামান্য বৃষ্টি নামলেই যেন ছোট ছোট দিঘির মত দেখা যায়। সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় মাঝে মাঝে যানবহন বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া দুর্ঘটনা এখন নিত্য দিনের সংগী হিসেবে পরিণত হয়েছে।
এই সড়ক দিয়ে সাটুরিয়া উপজেলার সাথে জেলা শহরের প্রধান সড়ক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া সাটুরিয়া উপজেলা ছাড়াও ধামরাই, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, নাগরপুর, পার্শ্ববর্তী দৌলতপুর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ এই পথেই চলাচল করাতে তাদের নিদারুন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
অপর দিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের বালিয়াটী জমিদার বাড়ীতে পর্যটকদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হয় এই সড়ক পথে। এতে পর্যটক শিল্পও এখন হুমকির মধ্যে পরে গেছে বলে মনে করছেন সাটুরিয়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সমরেন্দু সাহা লাহোর।
সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক সামিম আরা বলেন, আমি প্রতিদিন কলেজ করি মানিকগঞ্জ থেকে, আগে এই সড়ক দিয়ে সাটুরিয়া আসতে সময় লাগত ৩০ মিনিট এখন একক ঘন্টার বেশী সময় লাগে।
সাটুরিয়া বাসষ্টান্ডের ব্যবসায়ী সাজাহান সরকার জানান, ধামরাই উপজেলার বাথুলি নামক স্থানে ওজন স্কেলের বাড়তি টাকা এড়াতে এই সড়ক পথে অধিক পন্যবাহী ট্রাক চলাচল করে।
এ ব্যাপারে দরগ্রাম এলাকার অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান জানান, ঢাকা – টাঙ্গাইল সড়কের যখন যানজট লাগে তখন অধিকাংশ পরিবহনগুলি এই আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করে গন্তব্যে যায়। এটিও বালিয়াটী– সাটুরিয়া- সড়ক খারাপের জন্য অন্যতম কারন।
সাটুরিয়া উপজেলা চেয়ার্য্ম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ বশির উদ্দিন ঠান্ডু জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে, মাঝে মাঝে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সার্কাসের মত , পাকা সড়কের উপর ইট বিছিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা চালায়। আমি কয়েকবার স্থানীয় সংসদ সদস্য কে এবং জেলা সমন্বয় সভায় একাধিকবার বলেছি এ সড়কের বেহাল অবস্থার কথা।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মহিবুল হক জানান, বালিয়াটী- সাটুরিয়া- গোলড়া সড়কটির প্রকল্প প্রি একনেকে পাশ হয়ে এখন একনেকে পাশ হওয়ার অপেক্ষায়, বরাদ্ধ পেলেই কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ধামরাইয়ের বাথুলি থেকে ওজন স্কেলটি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার সন্নিকটে স্থানান্তর করা হলে এই সড়ক দিয়ে অতিরিক্ত পন্য বাহী ট্রাক চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন এই সমস্যা থাকবে না।
ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলটি পাটুরিয়া স্থানান্তরের আগ পর্যন্ত সড়কটি পূর্ণ নির্মাণের পাশাপাশি অতিরিক্ত পন্য বাহী ট্রাক ও পার্শবর্তী মহাসড়কের পরিবহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ দাবী করছেন ভূক্তভোগী এলাকাবাসী।
মানিকগঞ্জ২৪/ ২ অক্টোবর/ ২০১৭।
আরও পড়ুন:বর্ষায় কাইরা নিছে নদী, অহন নিতাছে ড্রেজার