হাসান ফয়জী, ৯ মে:
অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে সাটুরিয়ার রুবেল মিয়া পা দিয়ে লিখে এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। রুবেল মিয়া জেলার সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি ২০১৮ সনের অনুষ্ঠিত এস,এস,সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে জি.পি.এ – ২.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত অপ্রতিরোধ্য রুবেল।
রুবেল মিয়া তিল্লি গ্রামের ঘোষ পাড়ার হবি মিয়ার ছেলে। তিনি জন্মের পর থেকেই রুবেল মিয়ার দুই হাত নেই। নিজ থেকে বিদ্যালয় গিয়ে পড়া লেখার আগ্রহ দেখে দরিদ্র ঘরের সন্তান রুবেল পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু রুবেল পাশ করলেও তাদের সংসারে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। তার পরবর্তী শিক্ষা জীবন কিভাবে চলবে এ চিন্তায়।
রুবেলের মা সখিনা বেগম জানান, তার ৩ সন্তানের মধ্যে রুবেল ২য়। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। রুবেল জন্ম থেকেই দুই হাত নেই। বড় হওয়ার পর ও একাই স্কুলে যেত। পড়ার শুনা করাচ্ছি অনেক কষ্ট করে। নিজে অন্যের বাড়িতে জ্বিয়ের কাজ করে ও বাবা রিক্সা ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয় তাই দিয়েই লেখা পড়া করিয়েছি। কিন্তু এখন ওকে কিভাবে কলেজে ভর্তি করাব সেই চিন্তায় আছি।
রুবেল মিয়া তার দু পা দিয়ে নিজের খাতা ভাজ, মার্জিন করে সুন্দর করে বাম পা দিয়ে লিখে। শুধু লেখা পড়া নয়, হাত ছাড়াই নিজের প্রায় সব কাজ করতে পারেন।নিজে নিজেই কল চাপিয়ে পানি উঠিয়ে গোসল করা, শরিল মুছা,জামা কাপর পড়তে পারেন। পা দিয়ে ভাত খাওয়াসহ নিজের আসবাব পত্র, বই খাতা নিজেই গোছাতেই তার স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
তিল্লি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হাসান ভুইয়া জানান, ভ্যান চালক হবি মিয়া ও সখিনা বেগমের ঘরে ২০০২ সালে জন্ম নেয় রুবে। রুবেল বড় হবার পর তিল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, সে সময় থেকেই তার দু পা দিয়ে তার শিক্ষা জীবন শুরু হয়। পরে তিল্লি প্রাথমিক পরীক্ষায় পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে জিপিএ ৪.৩৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আমার বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১৫ সনের জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন কওে জিপিএ ২.৯০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৮ সালে রুবেল এস, এসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। যার রোল হচ্ছে ৩৪৩০৯৬, রেজি নং:১৫১০৫০২৭৬৪। এবার তিনি জি.পি.এ- ২.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এ ব্যাপারে রুবেলের বাবা হবি মিয়া জানান, আমি পেশায় একজন রিক্সা চালক, রুবেল তার ইচ্ছা শক্তি নিয়ে পা দিয়ে লিখে এস,এস,সি পরীক্ষা দিচ্ছে। ঠিকমত বই কিনে দিতে পারি নি অভাবের সংসার থাকায়। রুবেল প্রচন্ড ইচ্চা শক্তি দিয়ে আজ এ পর্যন্ত পৌছেতে পেরেছে। তবে এখন ওর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় আছি। কলেজে কিভাবে ভর্তি করব আর পড়াব কিভাবে।
এ ব্যাপারে রুবেল বলেন, আমার হাত নেই সেটা মনেই করি না। আমি একজন নিজেকে প্রতিবন্ধী মনে করি না মানুষ মনে করি। আমার বন্ধু ও শিক্ষকরা সব সময় আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে। আমি পড়াশুনা শেষ করে মানুষের মানুষ ও সরকারী চাকুরি করে দেশ ও মা- বাবার সেবা করতে চাই।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ ফারাজানা সিদ্দিকী জানান, রুবেল পা দিয়ে লেখা পড়া করছেন এমন সংবাদ দেখে এর আগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাশেদা ফেরদৌস নিজে ওর বাড়িতে গিয়ে অর্থ প্রধান করেন। অপ্রতিরোধ্য রুবেল কে নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে এবং তাকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সকল সুযোগ সুবিধা দেবার আশ্বাস দিলেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
মানিকগঞ্জ২৪/ সাটুরিয়া/ হা.ফ/ ৯ মে ২০১৮।
আরও পড়ুন: