সিংগাইরে গ্রেফতার আতংকে জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে

সিংগাইর প্রতিনিধিঃ জেলার  সিগাইর উপজেলায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্রেফতার আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ তিন জনপ্রতিনিধি।
সিংগাইর উপজেলা চেয়ারম্যান  আবিদুর রহমান খান রোমান, সিংগাইর পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূঁইয়া জয় ও চারিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তালুকদার সাজেদুল আলম স্বাধীন।
এ ৩ জনপ্রতিনিধি বিএনপি‘র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় গ্রেফতার আতংকে  আত্মগোপনে রয়েছেন।  ফলে  প্রশাসনিক কাজসহ জনসেবা ব্যাহত হচ্ছে।  দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শত শত নাগরিক।

 তবে প্রশাসনের লোক জনপ্রতিনিধিদেও পালিয়ে থাকার কথা অস্বীকার করছেন।

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা  জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই  সদর ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান মিঠু, জয়মন্টপ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জি: খান মোহাম্মদ হাবিবুল আলমসহ ৬ জন বিএনপি সমর্থককে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।

 গ্রেফতারকৃত ছয় জনসহ ২৬জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০-৬০জনকে আসামী করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মামলার পর থেকেই বিএনপি সমর্থিত জনপ্রতিনিধিসহ দায়িত্বশীল পদে থাকা নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়।

এর পর থেকেই  সিংগাইর বিএনপি ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ৩ জনপ্রতিনিধি গাঁ-ঢাকা দেন।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চারিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায় লোকজন বিভিন্ন কাজে এসে ভীড় করছেন। চেয়ারম্যান না থাকায় জন্ম সনদ, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশান সার্টিফিকেট ইস্যু হচ্ছে না।।

এ ইউনিয়নের উত্তর জাইল্লা গ্রামের কালাচানের স্ত্রী আলেয়া (৩৫) বলেন, ৭ দিন ঘুরেও আমার মেয়ের জন্ম সনদ নিতে পারছি না। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করা যাচ্ছে না।

দাশেরহাটি মালিপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম (৪৭) বলেন, চেয়ারম্যান না থাকায় আমার বাড়ির একটি সরকারি টিউবওয়েল স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না।

অনুরূপভাবে অভিযোগ করেন মধ্য চারিগ্রামের আব্দুর রহমান, দক্ষিণ চারিগ্রামের ফুলজানসহ অনেকেই।

এদিকে সিংগাইর পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় নয়াডাঙ্গী গ্রামের শামছুল ইসলামের স্ত্রী লিপির সাথে। তিনি ৭ দিন ধরে ঘুরছেন নাগরিক সনদের জন্য। এ সনদ না পেলে ফ্যাক্টরীতে চাকরি না হওয়ার আশঙ্কা করেন লিপি।

আঙ্গারিয়া মহল্লার নজরুল ইসলাম বলেন, ওয়ারিশান সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য এসেছি। মেয়র সাহেবের সই স্বাক্ষর ছাড়া পাচ্ছি না।

কাশিমনগর গ্রামের সাইদুর রহমান ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার জন্য এসেছেন।  মেয়র সাহেব না থাকায় লাইসেন্সে স্বাক্ষর হচ্ছে না। কত দিনে মেয়র সাহেবকে পাব তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।

সিংগাইর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের অফিস সহায়ক আবু বক্কার বলেন, ৮/১০ দিন যাবত চেয়ারম্যান স্যার অফিসে আসেন না। সেবা গ্রহীতারা যারা আসেন আমাদের যতটুকু করার করে দেই। বাকীটুকুর জন্য বলি স্যার যেদিন অফিসে আসবেন সেদিন করে দিবেন।

এদিকে গাঁ-ঢাকা দেয়া ৩ জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে দু’জনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

 চারিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সাজেদুল আলম স্বাধীন মুঠো ফোনে বলেন, স্বতন্ত্রপার্থী হয়ে নির্বাচনে জয় লাভের পর আমি কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত নই। অন্যায় ভাবে আমার নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।এতে আমার ইউনিয়নবাসী সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন ।

সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, আমার জানামতে ৩ জনপ্রতিনিধি  নিয়মিত অফিস করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই । পালিয়ে কিংবা আতংক থাকা সেটা তাদের মনে ব্যাপার।

  এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ যুবায়ের বলেন, তারা অফিসে অনুপিস্থত হলেও দাপ্তরিক কাজে কোন অসুবিধা হচ্ছে না ।

চেয়ারম্যানদের বিকল্প হিসেবে প্যানেল চেয়ারম্যান রয়েছেন তারা স্বাক্ষর করছেন। তবে পৌর সভার বিষয়ে আমার জানা নেই । তিনি আরো বলেন, জনদুর্ভোগ নিয়ে এ পর্যন্ত কেউ আমার কাছে অভিযোগ করতে আসেননি ।

মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ১৩ ফেব্রুয়ারী/ ২০১৮।
আরও পড়ুন:

নেতা বিহীন মানিকগঞ্জে বিএনপির অবস্থান ধর্মঘট পালিত

আরো পড়ুুন