মোহাম্মদ হাসান ফয়জী ॥ মানিকগঞ্জে দেড় টন ওজনের ষাঁড় গরু লালন করে তাক লাগিয়েছেন জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের পরিষ্কার বিবি ও তার স্কুল পড়ুয়া কন্যা ইতি আক্তার। প্রতি বছরই তারা কোরবানীর ঈদ সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণ করে লাভবান হয়ে আসছে। ফিজিয়ান জাতের ষাঁড়টিকে সম্পূর্ন প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করেছেন মা- মেয়ে। আদর করে নাম দিয়েছেন “রাজা বাবু”। রাজা বাবুর ওজন রবিবার (১৩ আগস্ট) পর্যন্ত ১৫৬৬ কেজি যা দেড় টনের ও বেশী ।ষাঁড়টিকে একনজর দেখার জন্য দূর দুরান্ত থেকে ভীড় করছে অসংখ্য মানুষ।
সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলীয়া ইউনিয়নের দেলুয়া গ্রামের পরিষ্কার বিবি ও তার স্কুল পড়ুয়া কন্যা ইতি আক্তার। গরু লালন পালন করেই তাদের সংসার চলে। গেল বছর কোরবানী ঈদে ২৭ মন ওজনের একটি ষাঁড় ১০ লক্ষ টাকা বিক্রি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য ১০-১২ বছর আগে থেকেই পরিষ্কার বিবি ও তার স্বামী খান্নু মিয়া গরু লালন- পালন করতেন। কিন্তু তার কন্যা ইতি আক্তার দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করা শুরু করেন। আর ১ম বছরেই লাভবান হওয়ায় এ বছর তিনি আরও বড় আকৃতির গরু কিনে মোটাতাজকরন শুরু করেন।
গেল বছরে গরু বিক্রি করা টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন, বাকী টাকা দিয়ে এক বছর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে ২ বছর বয়সী ফিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় কিনে আনেন। সেই থেকে শুরু। ইতি ও তার মা সাদা ও কালো রংয়ের ষাঁড়টির যত্ম নেওয়া শুরু করেন।
ষাঁড়টির নাম দেন “রাজা বাবু”। “রাজা বাবু” বললেই তাদের ডাকে সাড়া দেয় ষাঁড়টি। প্রতিদিন খাবার খাওয়ানো শুরু করেন। মিষ্টি লাউ, দেশি লাউ, সবরি ও বিচি কলা, ছোলা, বুট, কুঁড়া, ভুষি, খড় ও কাঁচা ঘাস। মাঝে মাঝে আঙ্গুর, মালটা ও তেঁতুল খাওয়ানোও বাদ যায় না।
এ ব্যাপারে ইতি আক্তার জানান, কোরবানীর ঈদ কে সামনে রেখে রাজা বাবু কে লালন করেছি। রাজা বাবু মাঝে মাঝে রেগে যান, তখন ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দিয়ে সবরি কলা সমানে ধরলেই সব ঠিক হয়ে যায়। তাছাড়াও এ ষাঁড়টি খুব ঠান্ডা প্রকৃতির।
ইতি আরো বলেন, রাজা বাবু কে দিনে ২ বার ১৪ টি শ্যাম্পু ও ৬ কন্ডিশনার শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করাই। লম্বায় ৭ ফুট ৩ ও ৯ফুট ১ ইঞ্চি বেড়ের এ ষাঁড়টির দাঁত আছে ৪ টি। বর্তমান ওজন ১৫৬৬ কেজি (৩৯ মন) হলেও ঈদের আগে আরও ওজন বাড়বে ।
পরিষ্কার বিবি বলেন, আমাদের রাজা বাবু কে সম্পূর্ণ দেশী খাবার খাওয়ানো হয়। ওর পিছনে ৩ জন মানুষ সারা বছর সময় দিয়েছি। ২ টি সিলিং ফ্যান লাগানো হয় ওর মাথার ওপরে। বিদ্যুৎ চলে গেলেই বড় পাখা দিয়ে সারাক্ষণ বাতাস করি। ওর ব্যায়াম করার জন্য দিনে ২০-২৫ বার বিভিন্ন স্থানে বেঁধে রাখি।
সরেজমিনে রবিবার বিকালে পরিষ্কার বিবির বাড়ীতে গেলে দেখা যায়, উপজেলা ছাড়াও আশে পাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট বড় মানুষ রাজা বাবু কে এক নজর দেখার জন্য ভীড় করছে । কথা হয় টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার পাকুটিয়া গ্রামের মান্নান মিয়ার সাথে, তিনি জানান, ইচ্ছে থাকলে এক বছরে এক গরুই মোটাতাজাকরণ করে অনেক লাভবান হওয়া যায় তা স্বচক্ষে দেখার জন্য এসেছি এ বাড়িতে।
এ ব্যাপারে পরিস্কার বিবির স্বামী খান্নু মিয়া জানান, আমি গ্রামের মহাজনদের নিকট থেকে সুদ করে টাকা এনে এ ষাঁড়টি কে বড় করেছি। প্রতিদিন ১০০০-১২০০ টাকার ২৫ কেজি পরিমাণ খাবার খাচ্ছে ৭-৮ মাস ধরে। সরকারীভাবে সহজ শর্তে ঋণ পেলে আরো বড় পরিসরে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করণ করতাম।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ খুরশেদ আলম বলেন, ঈদ কে সামনে রেখে সাটুরিয়া উপজেলায় ৭ হাজার গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ইতি ও পরিষ্কার বিবির লালিত এ ষাঁড়টির ওজন আমি নিজে মেপেছি। রবিবার পর্যন্ত ওর ওজন ১৫৬৬ কেজি, যা ৩৯ মন ও দেড় টনেরও বেশী। আমরা নিয়মিত এ গরুটির দেখভাল করেছি। ঈদের পরে এ পরিবার কে সহজ শর্তে সরকারী কোন ব্যাংক থেকে ঋন সহায়তা দেবার জন্য আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করব।
এ ব্যাপারে গরুর বেপারী শাহানুর জানান, এমন বড় ও ওজনের আকৃতি গরু সাধারণত ওজন দেখে বিক্রি হয় না। শখ করে বড় বড় কোম্পানিই এমন গরু কিনে থাকেন। পরিষ্কার বিবি ও ইতির এ গরুটি বাজার ভাল থাকলে ও কোম্পানির চোখে পড়লে ১৫-১৭ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবে।
তবে ইতি আক্তার ও পরিষ্কার বিবি তার শখের ফিজিয়ান জাতের ষাঁড় “রাজা বাবু”-র গেল বছরে পালিত “লক্ষ্মীসোনা”-র মত সঠিক সময়ে উপযুক্ত দাম পাবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সবাই।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা. ফ/ ১৪ আগস্ট/ ২০১৭।