মানিকগঞ্জের ৩ আসনের ৩ সংসদ সদস্য |
মোহাম্মদ হাসান ফয়জীঃ মানিকগঞ্জের ৩ আসনই ধরে রাখতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন মূলক কাজ করলেও নানা বির্তক, দলীয় কোন্দল ৩ সংসদ সদস্যদের নিকট আত্তীয় স্বজনদের দুনীর্তি সর্বোপরি তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের এলাকায় প্রভাব বিস্তার কে লাগাম টেনে না ধরতে পারলে ৩ আসনাই হাত ছাড়া হয়ে যাবার আংশকা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের।
জেলার ৭ টি উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের ৩ টি আসন রয়েছে। যদিও আগে ৪ টি আসন ছিল। জেলার শিবালয়, ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলা কে নিয়ে মানিকগঞ্জ ১ আসন, সিংগাইর, হরিরামপুর এবং সদর উপজেলার ১টি ইউনিয়ন কে নিয়ে মানিকগঞ্জ – ২ আসন। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা এবং সাটুরিয়া উপজেলা কে নিয়ে মানিকগঞ্জ ৩ নং আসন গঠিত।
মানিকগঞ্জ জেলা ছিল বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। ১৯৭৩ সালে দেশের ১ম জাতীয় নির্বাচনে মানিকগঞ্জের ৪ টি আসনেই আওয়মী লীগ দখলে নেয়। এর পর জিয়াউর রহমান, এরশাদ, ৮১, ৯৬ এর নির্বচনেও ৪ টি আসনই দখল ছাড়া হয়ে যায় আওয়ামী লীগের। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর ফখরুদ্দিন সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট সরকার জেলার ৩ টি আসনই ফিরে পায়।
২০০৮ এর নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনুয়ারুলক হক, মানিকগঞ্জ ২ আসন থেকে আওয়ামী জোট ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এস, এম আব্দুল মান্নান এবং মানিকগঞ্জ ৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্তী জাহিদ মালেক স্বপন নির্বাচিত হয়ে ৩৩ বছর পর বদনাম ঘোচান।
গেল নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় ৩ আসনের মধ্যে ২ টি আসনেই বিনা প্রতিবন্ধীতায় সহ লীগের ৩ আসনই দখলে আসে। এতে মানিকগঞ্জ -১ ফোক সম্ম্রাঘী বিশিষ্ঠ কন্ঠ শিল্লী মমতাজ বেগম ও মানিকগঞ্জ ৩ আসনে জাহিদ মালেক স্বপন বিনা প্রতিদন্ধীতায় নির্বাচিত হন। শুধু মাত্র মাকিগঞ্জ -২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বাংলাদেশ টেষ্ট ক্রিকটে দলের ১ম অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় নির্বাচন করে জয়ী হন।
জাতীয় নির্বাচনের আরও লম্বা সময় থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দলীয় সংসদদের কে হুসিয়ারী করে দেন আগামী নির্বাচনের মত এবার নির্বাচন হবে না। এবার প্রতিযোগীতা মূলক নির্বাচন হবে তাই কারও দায়িত্ত নিবেন না । এতেও মানিকগঞ্জের আওয়ামী লীগের চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করে। আবার ২০ মে গণভবনেও তলব করে সংসদ সদস্যদের আগামী নির্বাচন কেন্দ্রীক বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ -১ আসন: ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় কে নিয়ে গঠিত এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয় বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় জমি দখল, চাকুরী বাণিজ্য, বালু মহল দখল সহ সরাসরি অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তার আত্তীয় স্বজনের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ফলে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন এ জনপ্রিয় কিকেট তারকা।
এ আসনেই এবার মনোনয়ন চাইবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস, এম জাহিদ এবং বর্তমান সংসদ সদস্য। নির্বাচনের আরো সময় থাকাতে আপাতত এই তিন প্রার্থীই মাঠে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে বতর্মান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম জানান, বতর্মান সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয় শুধু দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি নয় দলীয় শৃংখলা ভংগের অভিযোগ উঠেছে বিস্তর। তিনি মানিকগঞ্জ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রমজান আলীর বিরোদ্ধে অবস্থান অন্য প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি কাজ করেন। তার ও পরিবারে বির্তক কর্মকান্ডের দায় ভার আওয়ামী লীগ নেবে না।
এ নেতা আরো জানান, আমি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলাম হুট করে রাজনীতি তে আসি নি, তাই নেত্রী আমাকেই মনোনয়ন দিবে আর সেই ভাবে সর্বসাধারনের সাথেই আমি আছি থাকব।
মানিকগঞ্জ ২ আসন: এ আসনের সংসদ সদস্য হচ্ছে ফোক সামগ্রি ও বিশিষ্ট কন্ঠ শিল্পি মমতাজ বেগম, তাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করার আগে বিএনপি মঞ্চে গান পরিবেশন করার অভিযোগে মানিকগঞ্জ আওয়ামী লীগ অবাঞ্চিত ঘোষনা করে। কিন্ত ২ আসন থেকে দলীয় টিকেট পেয়ে বিনা প্রতিবন্ধীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কিন্তু ২ বছর পার হলেও তিনি তার নির্বাচনী আসনের দলীয় কোন্দল মিঠাতে পারেন নি। বরং গেল পৌর নির্বাচনে নিজ প্রভাব খাটিয়ে তার ছেলে কে মনোনয়ন দিয়ে সমালোচনায় আসেন এ সংসদ সদস্য।
তাছাড়া সেতু মন্ত্রী তার এলাকয় সেতু উদ্ধোধন করতে গিয়ে তাকে না পেয়ে মোবাইলে বলেন, তুমি ত টাকা নিয়ে গান গাও তাই তোমার সময় হয় না উন্নয়ন মূলক কাজ উদ্ধোধনের সময়।
এ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম আরও বিতর্ক জরিয়ে পড়েন ২০১৭ সালে ২ টি বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রিয়া প্রতিযোগীতায় তাকে প্রধান অতিথি না করায় অনুষ্ঠান মঞ্চ ভাংচুরের অভিযোগ থাকায়। তাছাড়া তার অনুসারী ছাত্রলীগ বিশেষ করে যুবলীগের সাধারন সম্পাদক রাজা অন্যের দোকান ঘর দখল কে কেন্দ্র করে।
মমতাজের সাথে শক্ত প্রার্থী হচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়া আরিফিন আলম টুটুল। কেন্দ্রীয় দলীয় পদ হারিয়ে তিনি শেষ চেষ্টা করছেন এ আসনের সংসদ প্রার্থী হবার জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের টিকেট প্রত্যাশি দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুনীতির অভিযোগ থাকাতে এ সিট হারার সম্ভবনা রয়েছে।
মানিকগঞ্জ- ৩: এ আসনের সংসদ সদস্য হচ্ছে ঢাকার সাবেক মেয়র কণেল আব্দুল মালেক এর পুত্র জাহিদ মালেক স্বপন, ২০০৮ নির্বাচনে ভোটে নির্বাচিত হলেও গেল নির্বাচনে বিনা প্রতিদন্ধীতায় নির্বচিত হয়ে ক্ষান্ত হন নি। প্রধানমন্ত্রীর গুড লিষ্টে নাম থাকায় হয়ে যান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী।
তার বিরুদ্ধে কোন সুনিদিষ্ট অভিযোগ না থাকলেও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। মানিকগঞ্জ পরিবহন সেক্টর, এ আসনের সীমানা এলাকায় বালু মহলও তাদের দখলে। এছাড়া শেয়ার বাজার ক্যালেংকারী তে তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান সানলাইফ জড়ীত ছিল। তাছাড়া সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতা কর্মীদের স্থান হয়নি এ সংসদের ইশেরায়।
অপরদিকে সম্প্রতি গণমাধ্যমে ৬৯ জন সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয় পাচ্ছে না যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে নাম রয়েছে এ আসনের সংসদ সদস্য। কিন্ত তার সমর্থকরা দাবী করছেন শুধু মাত্র এই আসনেই দৃশ্যমান যে উন্নয়ন হয়েছে স্বাধীনাতার পর কোন সরকারের সংসদ সদস্যই তা করতে পারে নি।
এ ব্যাপারে বালিয়াটী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ রুহল আমিন জানান, জাহিদ মালেক স্বপন ১০০% নিশ্চিত তিনিই মনোনয়ন পাবেন। তিনি যে এবার প্রতিমন্ত্রী হলেন তা তিনি মিডিয়ার মাধ্যমেই জানতে পারেন। সে ক্ষমতা লোভী নন তাই এবারও তিনি পাবেন।
তবে এ আসনে এখনও প্রকাশ্যে কোন প্রার্থী না থাকলেও গোপনে দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।
আওয়ামী লীগের মাঠের নেতারা মনে করছেন মানিকগঞ্জের ৩ আসনের সংসদই তৃণমূল থেকে কেউ উঠে আসে নি। তাই তারা বিভিন্ন কোন্দল বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেণ। এ ব্যাপারে তারা বলছেন মানিকগঞ্জ -১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয় জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার, ২ আসনের ফোক সম্ম্রাগী খ্যাত কন্ঠ শিল্পি মমতাজ বেগম, ৩ আসনের সংসদ সদস্য হচ্ছে এক জন ব্যবসায়ী। এরা কেউ ছাত্র রাজনীতি কিংবা তৃণমূল রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। তাই তারা গুটি কয়েকজন নেতা ছাড়া ভোটারদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন ২০০৮ পর এ সরকার অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ করলেও ব্যক্তি জনপ্রিয়তা নেই। দল মনোনয়ন ও সরকারে ক্ষমতায় থাকলেও কাওয়াদের অভাব হয় না। এসব কারনে সংসদদের নিকট তৃণমূল নেতাকর্মীদের চেয়ে কাওয়াদের কদর সবার আগে।
তবে দলকরেন না এমন সুশীল সমাজ ও তরুণরা দাবী করেন আমরা অনেকেই জীবনের প্রথম ভোট নৌকায় দিয়েছি, কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনে ঐ সব ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা সাধারণ মানুষের উপর যে মানসিক অত্যাচর করেছেন এর প্রভাব থাকবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে। তাছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের উপর দলীয় প্রভাব বিস্তার লাগাম টেনে না ধরতে পারলে ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কাজ হলেও আবার ৩ আসনই হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারেন এমন আশংকা থেকেই যাবে।