শাহজাদা সেলিম রেজা: ঢাকার
খুব নিকটবর্তী জেলা মানিকগঞ্জ। সবুজ
বৈচিত্রের অপরূপ মায়ায় ঘেরা
জেলার প্রতিটি গ্রাম। যা ইতিহাস
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ভান্ডার।
জেলাটিতে রয়েছে ১৯৫২ এর
ভাষা আন্দোলনের শহীদ রফিক এর
বাড়ি। দেশের বৃহত্তম বালিয়াটি
জমিদার বাড়ি ও তেওতা
জাতীয় কবি কাজ নজরুল
ইসলামের শ্বশুর (প্রমিলা নজরুল) বাড়িসহ চোখ
ধাঁধাঁনো আরও অনেক কিছু।
বিনোদনের জন্য, বাংলাদেশের সবচেয়ে
বড় জমিদার বাড়ী, বালিয়াটী
জমিদার বাড়ী, নাহার গার্ডেন
ও পাটুরিয়া ফেরি ঘাট সবার
আগে পছন্দ। উৎসব ছাড়াও
পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা
মানুষদের আনাগুনা লেগেই থাকে। স্কুল,
কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের
বনভোজনও চলে এসব স্থানে
হরহামেশাই।
বিভিন্ন সময় গানের মিউজিক
ভিডিও, নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের
প্রচুর শুটিং হয়ে থাকে।
মানিকগঞ্জের যে কয়টি স্পটে
শুটিং হয়ে থাকে তা
শুটিংয়ের জন্য যথেষ্ট নয়।
এখানে যদি ব্যক্তি উদ্দ্যোগে
কোনো শুটিং স্পট/হাউজ
তৈরি করা যায় তাহলে
চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে জড়িত সকলেই
লাভবান হবে।
প্রতিষ্ঠিত নায়ক নায়িকা ও
জনপ্রিয় অনেক ছবি ও
নাটক আছে যা মানিকগঞ্জে
দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে।
বেহুলা লক্ষিন্ধার; যে গল্প নিয়ে
গ্রামের বয়স্ক বৃদ্ধরা এখনো
আড্ডায় সময় পার করে।
তাদের ছোট নাতি–নাতনীদের
গল্প বলে বেড়ায়। এই
বেহুলা লক্ষিন্ধার ছবি বালিয়াটির জমিদার
বাড়ি ও আশ পাশে
দৃশ্যধারণ করা হয়েছে।নিাটকের কথা
যদি বলি তাহলে সময়ের
জনপ্রিয় অভিনেতা মোশারফ করিমের বেশ
কয়েকটি নাটক মানিকগঞ্জ জেলায়
হয়েছে।
তার মধ্যে ঘাট কাপড়।
খোকা বাবুর প্রত্তাবর্তন। এ
নাটকতো সম্পূর্ণ মানিকগঞ্জের কাহিনী নির্ভর। কচি
খন্দকারও নাটকটিতে রয়েছেন। চঞ্চল চৌধুরী থেকে
শুরু করে অসংখ্য অভিনেতা
শিল্পীর কাজই মানিকগঞ্জে করা।
গানের মিউজিক ভিডিও থেকেও
পিছিয়ে নেই। জনপ্রিয় সঙ্গীত
লেখক ও প্রয়োজক শফিক
তুহিন। ইদানিং গানও করছেন।
শফিক তুহিনের “ভালোবাসি/ বড় ভালোবাসি/ এর
বেশি/ ভালোবাসা যায় না/ও
আমার প্রাণ পাখি ময়না”
গানটির মিউজিক ভিডিও বালিয়াটির
জমিদার বাড়িতে করা। শাকিব
খানেরও বেশ কয়েকটি ছবির
দৃশ্যধারণ করা হয়েছে। প্রায়ই
এখানে দেখা যায় বিভিন্ন
শুটিং হতে।
এবছরই তো আরিফিন শুভ–ফারিয়া একটি ছবির
শুটিং করে গেলেন। এইতো
ফেব্রুয়ারী ০১ তারিখ থেকে
টানা ২০ দিন শুটিং
হয়ে গেল। মোস্তাফিজুর রহমান
মানিক পরিচালিত জান্নাত ছবিতে জুটি বেঁধে
কাজ করলেন সাইমন ও
মাহি।
সম্ভবত চার দিন পূর্বে
তরা ব্রীজের তীরে আনিসুর রহমান
মিলন ও জাকিয়া বারী
মম’র জুটিতে “আলতা
বানু” ছবির শুটিংয়ের শেষ
দৃশ্য শেষ হল। শুধু
দেশীয় চলচ্চিত্রই নয়। ভারতের জনপ্রিয়
নায়ক দেব এর ছবির
শুটিংও মানিকগঞ্জের এই বালিয়াটী জমিদার
বাড়ী এলাকায় হয়েছে।
যদিও ছবির নাম মনে
নেই, তবে নির্দিষ্ট সময়
বলতে পারব। ২০১৪ সালের
২৫ কী ২৬ ফেব্রুয়ারী
তে দেব এর একটি
ছবির বেশ কিছু অংশ
মানিকগঞ্জ ধারণ করা হয়েছে।
কেবল মাত্র উল্লেখযোগ্য কয়েকটি
নাটক, ছবি ও মিউজিক
ভিডিওর কথা তুলে ধরলাম
এখানে।
আরও অসংখ্য ছবি, নাটক
ও মিউজিক ভিডিও আছে
যা মানিকগঞ্জে দৃশ্যধারন করা হয়েছে। যেগুলো
হয়তো আমি জানি না
আপনারা অনেকেই জানেন। শুটিং
স্পটে নিরাপত্তার বিষয়টি অন্যতম। কেননা,
আজ থেকে ৩০/৩৫
বছর পূর্বে বালিয়াটি জমিদার
বাড়িতে শুটিং দেখার জন্য
এক যুবক শুটিং দেখতে
গিয়ে এক ভবন থেকে
আরেক ভবনে লাফাতে গিয়ে
পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। যুবকটির মা
এখন মানসিক রোগী।
তাছাড়া সুহেল আরমান পরিচালিত
সাকিব খান ও বিন্দু
অভিনীত ছবির শুটিং দেখা
কেন্দ্র করে বালিয়াটী জমিদার
বাড়ীতে পুলিশ ও এলাকাবাসীর
সাথে সংঘর্ষ বেধে যায়।
এতে সাটুরিয়ার ওসি সহ আহত
প্রায় ৩০ জন।
তাই নিরাপত্তার বিষয়টিও জরুরী। ঢাকার নিকটে
হওয়ায় অল্প সময়ে পৌছে
যাওয়া সম্ভব শুটিং স্পটে।
চাইলে বের হয়ে শুটিংয়ের
কাজ শেষ করে আবার
ঢাকা ফিরতে পারবে। তুলনামূলক
খরচও কম। মনে করুন,
একটি দৃশ্যে আপনার সাগরপার
প্রয়োজন।
এখন সাগরপারের একটু দৃশ্য ধারণের
জন্য কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম যাওয়া
আসাতে প্রচুর টাকা খরচ।
আবার সাথে থাকা খাওয়া
ও সময়ের ব্যাপারও আছে।
সেখানে চাইলেই মাত্র এক
(০১) দিনের মধ্যে পাটুরিয়া
তে কাজটুকু সহজেই শেষ করা
যায়।
এইতো গত বছর একটি
ছবির ফাইটিংয়ের দৃশ্যধারণ পাটুরিয়াতে করা হল। যারা
দৈনিক পত্রিকা বা মানিকগঞ্জের অনলাইন
পোর্টালে নিয়মিত চোখ রাখেন
তারা প্রায় সকলেই জানেন
মানিকগঞ্জে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন
নাটক বা গানের ভিডিওর
শুটিং হওয়ার কথা।
এক্ষেত্রে চলচ্চিত্র, মডেলিং ও গানের
মিউজিক ভিডিওর কলা কৌশলি
যেমন লাভবান হবে ঠিক
তেমনি মানিকগঞ্জ হয়ে উঠবে পর্যটন
কেন্দ্র। এজন্য প্রয়োজন কোনো
হৃদয়বান মানুষ। আমাদের মানিকগঞ্জে
ব্যক্তি উদ্দ্যোগে শুটিং স্পট নির্মাণ
করার মত যোগ্য অনেক
মানুষই আছেন।
গাজিপুর জেলায় অনেক শুটিং
বাড়ী আছে। মানিকগঞ্জে ত
একাধিক স্পট আছেই এ
ছাড়াও এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে
শুটিং বাড়ি তৈরি করতে
পারলে এলাকার যেমন বিভিন্ন
কর্মসংস্থান হবে। তেমনি নাটক
ও সিনেমে তৈরিতে খরচও
কম পড়বে। কেননা মানিকগঞ্জ
ঢাকার অন্তত কাছের একটি
জেলা, যেখানে গাজিপুর চাইতে
অনেক প্রাকৃতিক ও দৃষ্টি নন্ধন
স্থান আছে।
মানিকগঞ্জ জেলার বাইরে থেকেও
উদ্যোক্তারা এখানে বিনোযোগ করতে
পারেন।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা. ফ/ ২৮
জুলাই/ ২০১৭।