মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে “যশোর রোড যে কত কথা বলে।

এত মরা মুখ আধ
মরা পায়ে পূর্ব বাংলা
কোলকাতা চলে।
সময় চলেছে রাজপথ ধরে
যশোর রোডেতে মানুষ মিছিল।
সেপ্টেম্বর হায় একাত্তর গরুগাড়ি
কাদা রাস্তা পিছিল।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
দেখতে এসেছিলেন মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ।
লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন
তার বন্ধু। বন্ধুর বাড়িতে
এসে তিনি আর সুনীল
নৌকায় করে যশোর সীমান্তে
পৌঁছে যান কারণ বৃষ্টিতে
ভারতের অংশের যশোর রোড
ডুবে গিয়েছিলো। যশোর রোড ঘিরে
বাস করা শরণার্থীদের দুর্দশা
প্রত্যক্ষ করে লিখেছিলেনসেপ্টেম্বর
অন যশোর রোডকবিতাটি।
অনেক ক্রিটিক এটিকে মহাকাব্য আখ্যা
দিয়েছেন।খান মোহাম্মদ ফারাবী সেই মহাকাব্যকে
মহা অনুবাদ করেছিলেন বাংলায়

১৫২ লাইনের বিখ্যাত কবিতাটিতে
মানুষের দুর্দশার বাইরে যশোর রোড
সংলগ্ন প্রকৃতির কথা উঠে এসেছিলো।
বনগাঁ সীমান্ত পেরিয়ে আসার সময়
বাংলার প্রকৃতির কত সুন্দর উপাদান
থাকা স্বত্বেও তার নজরে পড়েছিল
যশোর রোডের বড় বড়
গাছের শরীরে লেগে থাকা
গোবরের ঘুঁটের গোলাকার বৃত্তগুলি।
তার ইংরেজি কবিতার ২৪তম
লাইনে তিনি তা লিখেছেন,
অনুবাদে বাদ পড়েছে

১৯৫৪ সন থেকে লিখতে
শুরু করে দু বছর
পরে ১৯৫৬সনের ১৮ই মার্চ অ্যালেন
গিন্সবার্গ একটি কবিতা লিখে
প্রকাশ করে সাহিত্যের জগৎ
এবং সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
‘Howl’-গর্জন নামের এই কবিতাটিতে
তিনি তৎকালীন তরুণ সমাজকে ভেড়ার
দলের সাথে তুলনা করেছিলেন।
নির্লিপ্ত জীবন যাপনের বিরুদ্ধে
মহাযুদ্ধ পরবর্তী পঞ্চাশ দশকের প্রজন্ম
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী না হয়ে চুপচাপ
কেন ছিলো তা বোঝাতে
সেই যুগেএফশব্দের
অশ্লীলতা জুড়ে দিয়েছিলেন তার
কবিতার একটি লাইনে। তরুণ
সমাজ তার কবিতায় উদ্বেলিত
হলেও কাস্টম বিভাগ লন্ডন
থেকে আসা তার বইগুলি
বাজেয়াপ্ত করেছিল অশ্লীলতার অভিযোগে।
 

সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড
কবিতাটি প্রকাশ হবার পরে
নোবেল জয়ী গায়ক বব
ডিলান সেটিকে সুর দিয়ে
গান গাইলেন। বাংলায় গাইলেন মৌসুমী
ভৌমিক অশ্রুত মিউজিকে। রবি
শংকর, জর্জ হ্যারিসন তাদের
আমেরিকান কনসার্ট এই সব ঘটনাবলীর
মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ
জানলো,– নোবেল পাওয়া ট্যাগোর
কবির বাংলার ভেতো বাঙালীরা
গেঞ্জি গায়ে লুঙ্গি পরিধানে
হাতে রাইফেল নিয়ে চৌকস
পাকিস্তানী খুনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে
লড়াই শুরু করেছে

একটি কবিতা যেটি আমাদের
মুক্তিযুদ্ধকে প্রসারিত করেছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে
আর সেই কবিতার উপাদান
যশোর রোডের শত বছর
ধরে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মহীরুহগুলি
যারা আমাদের সাথেজয়বাংলা
বলেছে শাখা আন্দোলিত করে,
তাদের শিরোচ্ছেদ করা হবে একটি
ডাবল লেন রোড বানানোর
জন্যে?

আমরা প্রায় প্রতিটি প্রজেক্টে
অবস্থা বুঝে ভর্তুকি দিচ্ছি
খরচ বাড়িয়ে। শুনেছি ঢাকাপূর্বাচল
তিনশত ফিট রাস্তার পাশে
বাজেট বাড়িয়ে ক্যানাল বানানো
হচ্ছে পাশের জমি কিনে
সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্যে। শুধু যশোর
রোডেরমুক্তিযোদ্ধা গাছগুলির বেলায়
আমাদের প্রশ্ন আসলো, জমি
পাবো কোথায় ?

এই গাছ কাটলে আবার
নতুন গাছ লাগাবেন, এটি
ঐতিহাসিক গাছ নিয়ে হয়না।
বাবানামে ডাকা মানুষটি
মরে গেলে অন্য কেউ
বাবা হয়না।
 

বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা, রমনার বটমূল,
যশোর রোডের দুই হাজার
গাছ বাংলার ইতিহাসের অঙ্গ।
ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে আমরা
কত ঝগড়া করি প্রতি
নিয়ত। এখন আমরা কিছু
আজব মানুষের অদ্ভুত পরামর্শে গাছ
কেটে ইতিহাসের সাক্ষীকে মুছে ফেলার চেষ্টা
করছি। যশোর রোডের এই মহীরুহগুলি
আগাছা নয়, এগুলি মুক্তিযুদ্ধের
ইতিহাস, এগুলি আন্তর্জাতিক খ্যাতির
মহাকাব্যের অংশ
 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত যশোর রোডের প্রাচীন
গাছগুলির জীবন ভিক্ষা চাচ্ছি
ইতিহাস, প্রকৃতি, মুক্তিযোদ্ধা আর দেশ প্রেমিকদের
তরফ থেকে।
 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যের
গ্রাজুয়েট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সাহিত্য
বিষয়ে জ্ঞান দেয়ার যোগ্যতা
অথবা ধৃষ্টতা আমাদের কল্পনাতেও নেই।
শুধু তাঁর কাইন্ড মনোযোগ
আকর্ষণের জন্যে এই নগন্য
পোস্ট দেয়া। সামাজিক ওয়েবগুলিতে
গাছগুলি বাঁচানোর জন্যে সাধারণ মানুষদের
আকুতি নিয়ে শত শত
পোস্ট দিচ্ছে সবাই। সবার
কামনা আর অপেক্ষা এখন
আপনার সহৃদয় হস্তক্ষেপের এবং
জীবন ভিক্ষার।
 

ছবিতে কবি গিন্সবার্গ আর
যশোর রোডের আসামী গাছেরা

ছবি ও লেখা আরিফুর রহমান এর
ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া।

মানিকগঞ্জ২৪/
হা.ফ/ ১৭ জানুয়ারী/ ২০১৮।
আরও পড়ুন:

যশোর রোডের আড়াই হাজার শতবর্ষী বৃক্ষ

আরো পড়ুুন