লোকসানে কালীগঙ্গা পাড়ের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ১০ নভেম্বর:

মানিকগঞ্জ পৌরসভার বেউথা এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে গত দুই বছরে গড়ে ওঠেছে ভালো মানের বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। চাইনিজ, বাংলা, ইন্ডিয়ান, থাই খাবারের এসব রেস্টুরেন্টেগুলোতে সবসময় ভীড় লেগেই থাকতো। তবে, করোনার প্রভাবে গত ৬/৭ মাস ধরে বিপাকে পড়েছেন এসব রেস্টুরেন্ট মালিকরা। মাসখানেক ধরে এসব রেস্টুরেন্টগুলো চালু হলেও রেস্টুরেন্টগুলো অনেকটাই ক্রেতা শূণ্য।

সরেজমিন ওই এলাকার ফুড স্টেশন-১৮০০, ফিফ, গাঙ, চাপকাবাব, ক্যাসেল, জিরো ডিগ্রি, হাঙ্গার পয়েন্ট রেস্টুরেন্টগুলো ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। রেস্টুরেন্টগুলোতে নেই আগেরমত ক্রেতাদের ভীড়।

ফুড স্টেশন-১৮০০ এর মালিক রুমেদুর রউফ খান রুমেল জানান, মানিকগঞ্জের কালীগঙা নদীর তীর ঘেঁষে সর্বপ্রথম আমরা ৪ বন্ধু মিলে ফুড স্টেশন-১৮০০ প্রতিষ্ঠা করি। তারপরে কয়েক মাস পেরতেই আরো বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট গড়ে ওঠে। বেউথা ও আন্ধারমানিক এলাকাটি এখন রেস্টুরেন্ট পাড়া হিসেবে পরিচিত। আমাদের খাবারের মান ও সার্ভিস ভালো হওয়া কখনো লোকসানের মুখে পড়তে হয়নি। করোনার কারণে বিক্রি কমে যাওয়ায় জায়গা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল, কর্মচারীদের বেতন দেওয়ায় দুস্কর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া করোনার ৫/৬ মাস পুরোপুরি রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় আমরা আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।

ফিফ রেস্টুরেন্টের মালিক রমজান আলী বলেন, বেউথা পাড়ের রেস্টুরেন্টগুলোর অধিকাংশ ক্রেতাই শিক্ষার্থী। তাদের ওপর নির্ভর করেই মূলত এসব রেস্টুরেন্টগুলো গড়ে উঠেছিল। এছাড়া করোনার কারণে পরিবার নিয়ে বাইরে খাওয়ার প্রবণতাও কমেছে। একান্ত বাধ্য না হলে কর্মজীবীরাও রেস্টুরেন্টমুখী হচ্ছেনা। অন্য সময়ের চেয়ে করোনাকালে প্রায় ৬০ ভাগ বিক্রি কমে গেছে।

গাঙ রেস্টরেন্টের মালিক সুইট জানান, করোনার কারণে বর্তমানে বিয়ে, জন্মদিন, পার্টিসহ সব ধরণের অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তারপর মরার উপর খাড়ার ঘা হলো বন্যা। আমাদের রেস্টুরেন্ট গুলো নদীর পাড়ে হওয়ার কারণে প্রতিবছরই ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। প্রতিবছরই প্রায় ৫০/৬০ হাজার টাকার মত বাঁশের চ্যাগার, বালির বস্তা ফেলতে হয় রেস্টুরেন্ট গুলোর অবকাঠামো গুলো ঠিক রাখতে। জিনিসের মূল্যও বেড়েছে। অথচ বিক্রি নেই। কর্মচারীদের বাঁচানোর জন্যও রেস্টুরেন্ট খোলা রাখতে হচ্ছে। এভাবে আর কতদিন লোকসান দেয়া যাবে। এক সময় দেখা যাবে ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মী বলেন, হোটেলের অবস্থা ভালোনা। বিক্রি কমে গেছে। এরই মধ্যে বেতনও কিছু কমানো হয়েছে। আগে হোটেলে টিপস পাওয়া যেত, এখন তাও মিলছে না। যে টাকা পাই তা দিয়ে নিজে চলে কিন্তু পরিবারকে সহযোগিতা করতে অনেক কষ্ট হয়।

রেস্টুরেন্ট মালিকদের দাবি, ব্যবসা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় লাভের মুখ দেখছে না ব্যবসায়ীরা। যেভাবে ব্যবসা চলছে, তাতে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনেকেই দোকান ভাড়া দিতেও ব্যর্থ হচ্ছেন। সরকার সব খাতে প্রণোদনা দিলেও হোটেল ও রেস্তোরা খাতে দেয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের দিকে সুনজর দিতো তাহলে ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে নতুন উদ্দ্যোগে শুরু করতে পারতাম।

মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ১০ নভেম্ব ২০২০।

 

আরো পড়ুুন