আমাদের ইঁদুর-বেড়াল যুদ্ধ
টাইটানিক মুভিতে আমরা দেখি জাহাজটা ডুবে যাচ্ছে আর তার
ব্যান্ডদল ডেকে দাঁড়িয়ে সুর তুলে যাচ্ছে। বাস্তবেও টাইটানিক জাহাজ যখন ডুবে
যাচ্ছিল তখন ওয়ালেস হার্টলে’র ব্যান্ড দল ভায়োলিনে সুর তুলে যাচ্ছিল যাত্রীদের
শান্ত রাখতে। ছবির এই ভায়োলিনটা হার্টলে’র এনগেজমেন্টে তার বাগদত্তা মারিয়া
উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। হার্টলেসহ ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরা জাহাজ ডুবতে শুরু
করার পর থেকেই বাজিয়ে যাচ্ছিলেন। এভাবে বাজাতেই বাজাতেই জাহাজের সাথে ব্যান্ড
সদস্যদের সলীল সমাধী হয়। টাইটানিক ডুবে যাবার কিছুদিন পর যখন হার্টলের লাশ
উত্তোলন করা হয় তখনো ভায়োলিন তার শরীরে বাঁধা ছিল।
ব্যান্ডদল ডেকে দাঁড়িয়ে সুর তুলে যাচ্ছে। বাস্তবেও টাইটানিক জাহাজ যখন ডুবে
যাচ্ছিল তখন ওয়ালেস হার্টলে’র ব্যান্ড দল ভায়োলিনে সুর তুলে যাচ্ছিল যাত্রীদের
শান্ত রাখতে। ছবির এই ভায়োলিনটা হার্টলে’র এনগেজমেন্টে তার বাগদত্তা মারিয়া
উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। হার্টলেসহ ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরা জাহাজ ডুবতে শুরু
করার পর থেকেই বাজিয়ে যাচ্ছিলেন। এভাবে বাজাতেই বাজাতেই জাহাজের সাথে ব্যান্ড
সদস্যদের সলীল সমাধী হয়। টাইটানিক ডুবে যাবার কিছুদিন পর যখন হার্টলের লাশ
উত্তোলন করা হয় তখনো ভায়োলিন তার শরীরে বাঁধা ছিল।
যার জন্য এতকথা তিনি জাহের আলী (৫৫)। বাড়ি সাটুরিয়া
উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের খলিলাবাদ গ্রামে। গাবতলীতে একটা ফলের দোকানে সহকারী
হিসেবে কাজ করেন। গত ০৯ মে ২০২০ তারিখে গাবতলী থেকে বাড়িতে আসার পর তাঁকে হোম
কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তার পূর্ব থেকেই এজমার সমস্যা ছিল তথাপি অসুস্থ বোধ
করায় ১০ মে তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষার
জন্য পাঠানো হয় সাভারে। ১১ মে তারিখে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক স্যার ফোনে
জানালেন সাটুরিয়াতে একজনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। শোনার সাথে সাথেই মেরুদন্ড
দিয়ে শীতল একটা স্রোত নেমে গেল। ইউএইচএফপিও সাহেবকে ফোন করে জানালে উনি আক্রান্ত
রোগীর ঠিকানা বলেন। খলিলাবাদ উপজেলা পরিষদ থেকে খুব নিকটে হবার কারনে আমি ওসি
সাহেব এবং ইউএইচএফপিও সাহেবকে আসতে বলে দ্রুত রোগীর বাড়িতে যাই। কিন্তু বাড়িতে
গিয়ে আক্কেলগুড়ুম। তিনি বাড়িতে নাই; কোথায় আছেন কেউ বলতে পারেন না।
ইউএইচএফপিও সাহেব জানালেন ধামরাই এলাকার কাছে তিনি মুন্সীর চর নামক এলাকায় এক
আত্মীয়ের বাড়িতে গেছেন এবং তিনি তাঁকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেছেন। এদিকে আমরা
সবাই তার ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুণছি। আধা ঘণ্টা যায়, এক ঘণ্টা যায় কিন্তু তিনি
আসেন না। এদিকে তিনি বুদ্ধি করে ফোনটা বন্ধ করে রেখেছেন।
উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের খলিলাবাদ গ্রামে। গাবতলীতে একটা ফলের দোকানে সহকারী
হিসেবে কাজ করেন। গত ০৯ মে ২০২০ তারিখে গাবতলী থেকে বাড়িতে আসার পর তাঁকে হোম
কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তার পূর্ব থেকেই এজমার সমস্যা ছিল তথাপি অসুস্থ বোধ
করায় ১০ মে তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষার
জন্য পাঠানো হয় সাভারে। ১১ মে তারিখে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক স্যার ফোনে
জানালেন সাটুরিয়াতে একজনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। শোনার সাথে সাথেই মেরুদন্ড
দিয়ে শীতল একটা স্রোত নেমে গেল। ইউএইচএফপিও সাহেবকে ফোন করে জানালে উনি আক্রান্ত
রোগীর ঠিকানা বলেন। খলিলাবাদ উপজেলা পরিষদ থেকে খুব নিকটে হবার কারনে আমি ওসি
সাহেব এবং ইউএইচএফপিও সাহেবকে আসতে বলে দ্রুত রোগীর বাড়িতে যাই। কিন্তু বাড়িতে
গিয়ে আক্কেলগুড়ুম। তিনি বাড়িতে নাই; কোথায় আছেন কেউ বলতে পারেন না।
ইউএইচএফপিও সাহেব জানালেন ধামরাই এলাকার কাছে তিনি মুন্সীর চর নামক এলাকায় এক
আত্মীয়ের বাড়িতে গেছেন এবং তিনি তাঁকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেছেন। এদিকে আমরা
সবাই তার ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুণছি। আধা ঘণ্টা যায়, এক ঘণ্টা যায় কিন্তু তিনি
আসেন না। এদিকে তিনি বুদ্ধি করে ফোনটা বন্ধ করে রেখেছেন।
আরও পড়ুন: বালিয়াটীতে করোনা রোগী নিখোঁজ
সবাই মিলে রওনা দিলাম সেই মুন্সীর চরের উদ্দেশ্যে।
আলপথ ধরে পিপিই পড়ে প্রচণ্ড গরমে সেদ্ধ অবস্থায় আমরা পৌঁছাই সেখানে। সেখানে
গিয়েও শুনি মিশ্র কথা; কেউ বলে এসেছিল, কেউ বলে আসেনি। অবশেষে, গোমর বোঝা গেল
একজন যখন বললেন তার বাবা কবিরাজ। এই কবিরাজের কাছেই এসেছিলেন গলা ব্যাথায়
ঝাড়ফুঁক নিতে।কবিরাজ কবিরাজি করলেও এই করোনার সময়ে সে ডাক্তারের উপরেই আস্থাশীল।
এজন্য জাহের আলীকে তার বাড়িতেই ঢুকতে দেয়নি। এর মাঝে হয়ত আমাদের ফোন পেয়ে সে
মোবাইল বন্ধ করে সেখান থেকেও ভেগে গিয়েছে। সেখান থেকে আবার আমরা খোজঁ পেলাম তাঁকে
হাজিপুর এলাকা থেকে ঘিওর এলাকার কোন এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাত্রা করতে দেখা গেছে।
সেখানে গোপনে লোক লাগিয়ে রেখেও হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। অতঃপর ওসি সাহেবকে
বললাম ফোন ট্র্যাক করে কিছু দেখা যায় কিনা। উনি কিছু সময় পরই ফিডব্যাক দিলেন যে
উনাকে শেষ পর্যন্ত বালিয়াটি টাওয়ার থেকেই কানেক্টেড দেখা গেছে। এর আরো
ঘণ্টাখানেক পর ওসি সাহেব জানালেন সে এখন গাবতলি আছে। গাবতলী টাওয়ার থেকে
কানেক্টেড দেখালেও ফোনতো বন্ধ; কোথায় কাকে ছড়াচ্ছে আল্লাহ মালুম। টেনশনে খুব
খারাপ অবস্থা।
আলপথ ধরে পিপিই পড়ে প্রচণ্ড গরমে সেদ্ধ অবস্থায় আমরা পৌঁছাই সেখানে। সেখানে
গিয়েও শুনি মিশ্র কথা; কেউ বলে এসেছিল, কেউ বলে আসেনি। অবশেষে, গোমর বোঝা গেল
একজন যখন বললেন তার বাবা কবিরাজ। এই কবিরাজের কাছেই এসেছিলেন গলা ব্যাথায়
ঝাড়ফুঁক নিতে।কবিরাজ কবিরাজি করলেও এই করোনার সময়ে সে ডাক্তারের উপরেই আস্থাশীল।
এজন্য জাহের আলীকে তার বাড়িতেই ঢুকতে দেয়নি। এর মাঝে হয়ত আমাদের ফোন পেয়ে সে
মোবাইল বন্ধ করে সেখান থেকেও ভেগে গিয়েছে। সেখান থেকে আবার আমরা খোজঁ পেলাম তাঁকে
হাজিপুর এলাকা থেকে ঘিওর এলাকার কোন এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাত্রা করতে দেখা গেছে।
সেখানে গোপনে লোক লাগিয়ে রেখেও হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। অতঃপর ওসি সাহেবকে
বললাম ফোন ট্র্যাক করে কিছু দেখা যায় কিনা। উনি কিছু সময় পরই ফিডব্যাক দিলেন যে
উনাকে শেষ পর্যন্ত বালিয়াটি টাওয়ার থেকেই কানেক্টেড দেখা গেছে। এর আরো
ঘণ্টাখানেক পর ওসি সাহেব জানালেন সে এখন গাবতলি আছে। গাবতলী টাওয়ার থেকে
কানেক্টেড দেখালেও ফোনতো বন্ধ; কোথায় কাকে ছড়াচ্ছে আল্লাহ মালুম। টেনশনে খুব
খারাপ অবস্থা।
অতঃপর রাত ৮টার দিকে বালিয়াটি ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান সাহেব জানালেন যে তিনি ফোন খুলেছেন এবং তার সাথে আলাপ হয়েছে। ঘটনা
শোনার সাথে সাথেই মনে হলো বুকের থেকে একটা পাথর নেমে গেল। লোকটার সাথে কথা বলে
আশ্বস্ত করা হয়েছে যে তার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসক স্যারের
সাথে আলাপ করলে স্যার বললেন, ‘ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে করোনা ছড়ানোর চেয়ে
তাঁকে নিয়ে এসে মানিকগঞ্জ হাসপাতালের করোনা রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্রে রেখে
চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে। আগামীকাল সকালে তাকে গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জ আনার ব্যবস্থা
করা হচ্ছে। আমরা এভাবেই বিভিন্ন কিছুর সাথে ইঁদুর-বেড়াল খেলতে খেলতেই করোনার
বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। আরেকটু সচেতন আচরণ আমরা প্রত্যাশা করি।
চেয়ারম্যান সাহেব জানালেন যে তিনি ফোন খুলেছেন এবং তার সাথে আলাপ হয়েছে। ঘটনা
শোনার সাথে সাথেই মনে হলো বুকের থেকে একটা পাথর নেমে গেল। লোকটার সাথে কথা বলে
আশ্বস্ত করা হয়েছে যে তার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসক স্যারের
সাথে আলাপ করলে স্যার বললেন, ‘ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে করোনা ছড়ানোর চেয়ে
তাঁকে নিয়ে এসে মানিকগঞ্জ হাসপাতালের করোনা রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্রে রেখে
চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে। আগামীকাল সকালে তাকে গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জ আনার ব্যবস্থা
করা হচ্ছে। আমরা এভাবেই বিভিন্ন কিছুর সাথে ইঁদুর-বেড়াল খেলতে খেলতেই করোনার
বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। আরেকটু সচেতন আচরণ আমরা প্রত্যাশা করি।
দিনশেষে, আমরা হয়ত টাইটানিক জাহাজের সেই ব্যান্ডদলের
মতই- ডুবে যাক কিংবা ভেসে থাকুক আমরা বাজিয়ে যাব। যদি ডুবেও যাই তবু যেন ওয়ালেস
হার্টলের মত শেষ গানটা বাজাতে পারি, “Nearer, My God, to Thee”.
মতই- ডুবে যাক কিংবা ভেসে থাকুক আমরা বাজিয়ে যাব। যদি ডুবেও যাই তবু যেন ওয়ালেস
হার্টলের মত শেষ গানটা বাজাতে পারি, “Nearer, My God, to Thee”.
পুনশ্চঃ আজ (১২ মে ২০২০) সকাল ৯ টায় রোগীকে মানিকগঞ্জ
সদর ২৫০ বেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সদর ২৫০ বেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লেখাগুলি সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল
আলমের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া।
আলমের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া।
মানিকগঞ্জ২৪/ ১২ মে ২০২০।