জন্মসনদ সার্ভার স্লো থাকায় মানিকগঞ্জে ভোটার তালিকা নিবন্ধনে বিড়ম্বনা


মোহাম্মদ
হাসান ফয়জী: মানিকগঞ্জে প্রায় ৪০ হাজার লোক হালনাগাদ ভোটার তালিকায় নিবন্ধনে নিবন্ধিত
হতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সময় মত জন্মসনদ না পাওয়াতে এই সংকট
দেখা দিয়েছে। ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ৫ম ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসুচি, চলবে ৮
আগস্ট পর্যন্ত। অনলা্ইনে জন্মসনদ ছাড়া ভোটার তালিকায় ও জাতীয় পরিচয় পত্র নাম নিবন্ধন
করা সম্ভব না। ফলে হাজার হাজার মানুষ জন্ম সনদ সময় মত না পাওয়ার কারনে ভোটার তালিকা
হালনাগাদের জন্য নিবন্ধিত ফরম পূরন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ
জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, জেলার ৭টি উপজেলার ২ টি পৌরসভায় ও ৬৫ টি ইউনিয়ন
১০ লক্ষ ৮১ হাজার ৪ শত ৪৫ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৫ লক্ষ ৩৯ হাজার
৪ শত ৩১, আর মহিলা ভোটার রয়েছে ৫ লক্ষ ৪২ হাজার ১৪ জন। এর বিপরীতে চলতি ৫ম ভোটার তালিকা
হালনাগাদ কর্মসূচিতে সম্ভাব্য ৩৭ হাজার ৮শত ৫০ জন নতুন হালনাগাদে ভোটার ও হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।

কিন্তু
বিপাকে পড়তে হচ্ছে অনলাইনে জন্ম সনদ আনার সময়। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু
হওয়ার পর থেকে একেকটি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গড়ে প্রতিদিন ৪০-৫০ টি জন্মসনদ নেবার আবেদন
পড়ছে। কিন্ত জন্মসনদ প্রস্তুতকারী ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা গ্রাহকদের
এ সনদ সরবরাহ করতে পারছেন না ওয়েবসাইট স্লো হওয়ার কারনে।
 এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি সৈয়দ এনায়েত করিম টিটু জানান, আগে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রেজিষ্ট্রার বহিতে নিবন্ধিত
করে হাতে লিখে জন্মসনদ দেওয়া হত। কিন্তু বর্তমান সরকার স্বচ্ছতা আনার জন্য জন্মসনদের সকল কার্যক্রম অনলাইনে দেবার ব্যবস্থা করেন। এতে করে জন্মসনদে বয়স কমানো ও বাড়ানোর যে সুযোগ ছিল তা অনলাইন সিস্টেম
চালু করাতে বন্ধ হয়ে গেছে। প্রবাসীরা, অন্যত্র চাকরী, বয়স না হওয়ার কারনে ভোটার হতে
পারে নি। তারা এখন ভোটার হওয়ার জন্য জন্মসনদ নিতে আসছে। কিন্তু আমাদের  সার্ভার ঠিকমত
কাজ না করার কারনে সময়মত জন্মসনদ সেবা গ্রহীতাদের দিতে পারছি না।


ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা
মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, বর্তমানে জন্মসনদ সার্ভার ঠিক মত কাজ না করায় জন্মসনদ এন্ট্রি
ও নকল দিতে পারছি না। এতে যারা নতুন ভোটার হবে সেই সমস্ত লোক আমাদের উপর চটে যাচ্ছে।
কারন আর মাত্র ৩ দিন সময় আছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার। অথচ আমার নিকট অন্তত শতাধিক
আবেদন আছে, কিন্তু আমি তাদের জন্মসনদ দিতে পারছি না। সার্ভারে প্রবেশ করতে চাইলে লেখা আসছে ডাটাবেসে
উন্নয়ন কাজ চলছে, কিছুক্ষন পর আবার চেষ্টা করুন।

ব্যাপারে  হরিরামপুর উপজেলার ধূলশুরা ইউনিয়নের
উদ্যোক্তা মোঃ মনির হোসেন জানান, জন্মসনদ অনলাইনে আবেদন শুরু হওয়ার পর, যখন কাজের চাপ
 বেশী থাকে তখন এ ওয়েবসাইটে ঠিকমত কাজ করা যায়  না। যেমন জানুয়ারী মাসে নতুন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে
ভর্তি হবে, তখন তাদের জন্মসনদ প্রয়োজন হয়, তখন আমাদের এ সাইট কাজ করে না। আবার এখন
শুরু হয়েছে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ। বর্তমানে প্রতিদিন প্রচুর লোক আসছে সনদ নেবার জন্য, কিন্ত সার্ভার কাজ না করার কারনে সময়মত সনদ দিতে পারছি না।
 এতে আমাদেরকে জনসাধারণের  রোষানালে পড়তে হচ্ছে।
জেলা
উদ্যোক্তা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সবুজ রায়হান জানান, আমার সিংগাইর উপজেলার প্রচুর
লোক দেশের বাহিরে থাকে। তারা এখন ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধিত হবার জন্য আমাদের নিকট
জন্মসনদ নেবার জন্য আসছে। কিন্তু সার্ভারে প্রবেশ করতে চাইলে উন্নয়ন কাজ চলছে, এমন লেখা আসছে। আমরা কাজ
করব ত দূরের কথা জন্মসনদ ওয়েব লিংকে প্রবেশই করতে পারছি না।
জন্ম
ও মৃত্যুসনদ এর সাইটে প্রবেশ না করায়, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তারা তাদের ফেসবুক ওয়ালে
এ সংক্রান্ত পোস্ট দিয়ে সাধারণ মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন। এখন এ সনদ প্রয়োজন থাকার
কারনে সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয়ে পড়েছেন।

ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী ইউনিয়নের বাসিন্দা ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধন
করতে ইচ্ছুক জয়নাল আবেদীন জানান, আমি ৪ দিন ধরে ঘুরছি, এখনও জন্মসনদ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে
নিতে পারি নাই। আর মাত্র  ৩ দিন ভোটার হওয়ার
সময় আছে, হতে পারব কিনা জানিনা।

একই
পরিষদের চেয়াম্যান মোঃ রুহুল আমিন জানান, নতুন করে ভোটার হতে ইচ্ছুক এই সমস্ত লোক জন্মসনদ
নিতে আসছে, কিন্তু জন্ম ও মৃত্যু সনদ সাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। এই সমস্যা সাধারণ
মানুষ বুঝতে পারে না। ফলে সেবা পেতে বিলম্বিত হওয়াতে তাদের সাথে আমাদের ভুল বুঝাবুঝির
সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।
মানিকগঞ্জ
জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন জানান, মানিকগঞ্জে এখন চলছে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ।  যারা ২০০০ সালের পুর্বে জন্ম নিয়েছে, তারা ভোটার তালিকা হালনাগাদের নিবন্ধনে অংশগ্রহণ করতে
পারবে। ভোটার হওয়ার জন্য ফরম পূরনের সময় পিতা- মাতার  জাতীয় পরিচয়পত্র ,একাডেমিক সনদ, নাগরিক সনদ ও অনলাইনে
জন্ম সনদের ফটোকপি প্রয়োজন পড়ে। অনেকে ডিজিটাল জন্মসনদ না দিতে পারায় নতুন করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার
নিবন্ধিত ফরম পূরণ করতে বিলম্ব হচ্ছে।
তিনি
আরো জানান, ৭টি উপজেলায় নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে তথ্য সংগ্রহকারী আছেন ৫৫৫
জন এবং সুপারভাইজার আছেন ১২১ জন।
অনলাইনে
জন্মসনদ সার্ভার ঠিকমত কাজ না করা প্রসঙ্গে, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের আইসিটি বিভাগের প্রোগ্রামার সজীব চৌধুরী জানান, সারা বছরই এ সার্ভারে সমস্যা থাকছে। বিশেষ করে বর্তমানে
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য অনলাইনে জন্মসনদ প্রস্তুত করা যাচ্ছে না, সার্ভারে
সমস্যা থাকার জন্য। তিনি আরো জানান, সারা দেশেই সনদের চাহিদা রয়েছে, বেশী চাপ থাকাতে
এই অবস্থা।
     
মানিকগঞ্জ২৪/
হা.ফ/ ৫ আগস্ট/ ২০১৭।
আরো পড়ুুন