এস.কে.এম. হেদায়েত উল্লাহ্ঃ আজ বন্ধুত্ব দিবস।সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।আমার সকল বন্ধুকে ধন্যবাদ আমার পাশে থেকে জীবনটাকে আনন্দময় করার জন্য।এই বন্ধুগুলোর জন্যই মন যতই খারাপ থাক গোমড়া মুখে থাকার উপায় নেই।
সত্যিই বন্ধু মানেই জীবনের অন্য নাম।সত্যিই আজ খুব আনন্দের দিন।তবে আজকের দিনেই একটা চিনচিনে ব্যথা জাগ্রত হয়ে ওঠে।অন্তত আজকের দিনে সকল বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানানো উচিত।প্রিয় বন্ধুদের সাথে কিছু সময় কাটানো উচিত।সবাই সেই চেষ্টাই করে।কিন্তু সেই চেষ্টা করতে গিয়েই মনে পড়ে যায় কিছু খুব চেনা মুখ,কিন্তু সেই চেনামুখগুলি আজ খুব অচেনা।কেউ জীবনের ইতি টেনে ওপারে চলে গেছে,কেউ বহুদূরে চলে গেছে,কেউ কাছে থেকেও বহুদূরে।আমার জীবন দিয়েই উদাহরণ দিচ্ছি।
আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন,এখন পর্যন্ত জীবনের সেরা বন্ধু সুব্রত।সুব্রত কুমার সরকার।অথচ,সৃষ্টিকর্তা আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের স্থায়ীত্ব করেছিলেন ৪ বছর ৩ মাস ১৩ দিন।১লা জানুয়ারী,২০০৯ তে যখন হাইস্কুলে যখন ভর্তি হই সেদিন থেকেই ওর সাথে বন্ধুত্ব।১৩ই মার্চ,২০১৩,সোমবার হঠাৎ-ই এক সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধুত্ব ও জীবনের ইতি টেনে ও চলে গেছে।এখন আর ওর ফোনে সকালে ঘুম থেকে ওঠে শুনতে হয় না,”দোস্ত,ওঠ তাড়াতাড়ি স্কুলে আয়।তোর সাথে কথা আছে।”ওর মেসেজগুলো আর আমার মোবাইলের ইনবক্সে আসে না।সেইসময়টাতে ছোট ছিলাম তাই লুকিয়ে ফোন চালাতাম।তবুও ওর সাথে প্রতিদিন কথা হতো।কথা না হলেও মেসেজ চালাচালি হতো।সে সবই আজ স্মৃতির খাতায়।
আরেক বন্ধু সুব্রত কুমার পাল।২০১০/১১ এর দিকে ভারতে মামার কাছে চলে গেল,কাউকে কিছু না জানিয়েই।জানিনা ওর সাথে আর কখনো দেখা বা কথা হবে কিনা।
আরেক কাছের বন্ধু পারভেজ।হাইস্কুল জীবন শেষে যখন কলেজে ভর্তি হবো,কাকা প্রফেসর হওয়ার সুবাদে ঢাকার কলেজে ভর্তি হতে হলো।আমার মতো গৃহ ও বন্ধুকাতর মানুষের পক্ষে একা সেখানে যাওয়ার সাহস হয়ে ওঠেনি।তাই ওকেও আমার কলেজে ভর্তি করলাম।কিন্তু কলেজের চাপ না নিতে পেরে ১ মাস পড়েই ও মালয়েশিয়া চলে গেল।দুজনের কাজ ও পড়াশুনার চাপ আর কিছু বিষয়ে মতানৈক্যের ফলে যোগাযোগ হয়ই না বলা চলে।
হাইস্কুলের আরেক সেরা বন্ধু টুইঙ্কেল।বাড়ী বরিশাল হলেও বাবার চাকরীর সুবাদে আমাদের এলাকায় ছিল।প্রাইমারী স্কুলে ক্যাপ্টেন ছিলাম।তাই,যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই তখন ক্যাপ্টেন নির্বাচনে দাঁড়ালাম।আমি নির্বাচিত হলাম ক্যাপ্টেন আর টুইঙ্কেল হলো আমার ডেপুটি।স্বাভাবিকভাবেই বন্ধুত্বও গড়ে ওঠলো দুজনের মাঝে।কিন্তু হঠাৎ-ই ওর বাবা মারা যাওয়ায় ওরা এলাকা থেকে চলে গেল।বন্ধের সময় ছিল বলে ওর সাথে সেইসময় দেখা হয়নি।জানিনা ও আজ কোথায় আছে,কেমন আছে।
এতক্ষণ যা বললাম সবই হারানোর গল্প।বন্ধুত্ব এবং বন্ধু হারানোর গল্প।আজও আমার অনেক বন্ধু আছে।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে সারা বাংলাদেশেই বন্ধুত্বের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে আছে।আজকে,বন্ধুত্ব দিবসে আমার একটাই প্রার্থনা,আর কখনো যেন বন্ধু ও বন্ধুত্ব হারিয়ে যাওয়ার গল্প লিখতে না হয়।
মানিকগঞ্জ২৪.কম/হে.উ./৬ই আগস্ট/২০১৭