মানিকগঞ্জ২৪ প্রতিনিধি ॥ মানিকগঞ্জে মিশ্র সবজি চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক জমিতে একটু যতœ বেশী নিয়ে দুই ফষল চাষ করা কে মিশ্র চাষ বলে। চলতি শীত মৌসুমে জেলার ৭টি উপজেলাতেই এক ফসলি জমিতে ভুট্টুা সাথে ধনে পাতা, লাল শাক। লাউয়ের সাথে ছিম চাষ করে কৃষকরা অতিরিক্ত অর্থ পেয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।
নুরুল ইসলাম (৩০) বাড়ী জেলার সাটুরিয়া উপজেলার জান্না গ্রামে। অল্প জমি আর অল্প পুজি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে মিশ্র চাষ করে স্বল্প সময়ে বেশী লাভবান হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেলা গরিয়ে সন্ধা নেমে গেছে। নিজ জমি থেকে একজন নারী শ্রমিক নিয়ে লাউ কেটে ভেনে উঠানে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। লাউ কাটার সাথে সাথে তিনি জানান, চলতি মৌসুমে ৫০ শতাংশ জমিতে সিম ও লাউ মিশ্র চাষ করেছেন।
মাত্র ২ মাসে দেশী লাউ বিক্রি করেছন ১ লক্ষ টাকা। লাউ বিক্রির সাথে তিনি সিম বিক্রি করছেন। আর এক সপ্তাহ পর তিনি মিশ্র চাষের জমির জাংলা থেকে লাউ গাছের চারা কেটে ফেলবেন। এর পর শুধু তিনি সিম বিক্রি করবেন। সপ্তাহ খানেক আগে সিম বিক্রি করেছেন ৬০-৭০ টাকা কেজি ধরে। এখন সিমের দাম কমে গেলেও সিম বিক্রি করতে পারবেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। মিশ্র চাষ করে একই জমিতে তিনি ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করে খরচ বাদে লাভ হবে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ এমরাত হোসেন জানান, নূরুল ইসলাম মিশ্র চাষ করে লাউ বোনার ৪৫ দিন পর থেকে তা বিক্রি করতে পেরেছেন। আর সিম আরো ২ মাস পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবেন। সাটুরিাতে লাউ ও সিম ছাড়াও, ভুট্টার সাথে ধনে পাতা, আখের সাথে লাল শাকসহ বিভিন্ন মিশ্র চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গ্যানেশ চন্দ্র রায় জানান, মানিকগঞ্জের ৭ টি উপজেলাতেই দিন দিন মিশ্র চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে জেলাতে কত হেক্টর জমিতে মিশ্র চাষ হয়েছে এমন তথ্য তিনি দিতে পারেন নি।
তবে জেলায় সাটুরিয়া, সিংগাইর, হরিরামপু, শিবালয়, দৌলতুপর, মানিকগঞ্জ সদর এবং ঘিওর উপজেলার বৃস্তীর্ণ জমিতে মিশ্র চাষ হয়েছে। মিশ্র চাষ করা সবুর উদ্দিন জানান, সবকিছুতে এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হচেছ তাই কৃষিতে এসেছে বিপ্লব। কৃষকরা আরেকটু সচেতন হলে একই সময়ে দুই ফষল ঘরে তুলে বাড়তি টাকা পেতে পারে।
সাটুরিয়া উপজেলার রাইল্লা গ্রামের আরেক মিশ্র চাষী সিরাজ উদ্দিন জানান, আমি লাউ আর সিম চাষ করেছি, মনে করেন শুধু লাউ চাষ করার জন্য জমিতে যে জাংলা দিয়েছি ঐ খানেই সিম আবাদ করেছি। এতে কিন্ত আমার এক খরচে দুই ফষল পাচ্ছি।
তবে এসব কৃষকরা অভিযোগ করেছেন তারা নিজ উদ্যোগেই মিশ্র চাষ করেছেন, তাদের কৃষি অফিসের কর্মকর্তা তাদের মাঠে আসেন না এবং পরামর্শও দেন না। সড়কের পাশে যে জমি আছে মাঝে মাঝে সেই সব ফষলি জমিতেই শুদু কৃষি কর্মকর্তা পরিদর্শন করেন। কষকরা পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগীতা পেলে অন্যান্য কৃষকরাও মিশ্র চাষে আরো আগ্রহ বাড়ত।
তবে মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের জানান, আমারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাছাড়া একই সময়ে এক মাঠে একাধিক সবজি বিক্রি করে বেশী লাভবান হওয়া যায় বলেই মানিকগঞ্জে মিশ্র চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ৩১ জানুয়ারী/ ২০১৮।
আরও পড়ুন: