সাটুরিয়ার সিনবাদের দাম হাকাচ্ছেন ১৮ লক্ষ

হাসান ফয়জী, ৪ আগষ্ট:সিনবাদ এটা জনপ্রিয় মেগা সিরিয়ালের নাম নয়। যদিও নামটি আসলেও মনে পড়ে যায় সিরিয়ালটির কথা। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মোটা তাজাকরণের জন্য সাটুরিয়ার বিল্লাল হোসেনের ৪০ মণ ওজনের ষাঁড় সিনাবাদের কথা বলছি। একবছর আগে কেনা এ ষাঁড়টি ঈদুল আজহা কে সামনে রেখে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্বতিতে লালন- পালন করে বড় করেছেন। এখন চলছে শেষ প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিনই ভিড় করছে সিনবাদকে এক নজরে দেখার জন্য । উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও খামারি বিল্লাল হোসেন মনে করছেন ঈদের বাজার ভাল থাকলে উপযুক্ত দাম পাবেন।

যে সিনবাদ নামে ষাঁড়টি এবার ঈদে তাকলাগানোর জন্য শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে সে খামারি হচ্ছে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের সাফুল্লি গ্রামের  মৃত: আব্দুল মালেকের পুত্র বিল্লাল হোসেন (৪৫)।

বিল্লাল হোসেন ১ বছর আগে সাটুরিয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রাম থেকে ২ বছর বয়সী হলিস্টিন ফ্র্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি কিনে আনেন। কোরবানী ঈদে বিক্রি করার জন্য লালন পালন করবেন তাই নাম রাখেন সিনবাদ। শুরু থেকেই দেশীয় পদ্বতিতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়িয়ে লালন পালন করতে থাকে এ সিনবাদ নামে ষাড়ঁটিকে। 

বিল্লাল হোসেন ৪০ মণ ওজনের ষাঁড়টি দেখার জন্য মঙ্গলবার (১ আগষ্ট) সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় খামারি বিল্লাল তার সিনবাদকে যতœ নিতে ব্যস্ত। পাকা গোয়ালের দিকে চোখ গেলেই আটকে যায়। ঝক ঝক করছে ঘরটি। চতুরদিকেই বাশের আড়ার সাথে থড়ে থড়ে কলা, আঙ্গুর, মালটা সাজানো। রাখাল মাঝে মাঝে তা ছিড়ে খাওয়াচ্ছেন। পাকা মেঝেতে বেশী ওজনের ষাঁড়টির পায়ের গোড়ালি ব্যাথা না হয় সে জন্য দামী ম্যাট বসিয়েছেন। সার্বক্ষনিক ঠান্ডা করার জন্য ২ টি সেলিং ফ্যান, ২ টি ঝুড়ি ফ্যান ও একটি ষ্টান্ড ফ্যান ব্যাবহার করা হয়।

খামারী বিল্লাল হোসেন বলেন, সখের বসেই বাণিজ্যিকভাবে গরু লালন পালন করে থাকি। তবে এর আগে সাটুরিয়ায় পর পর ৩ বছর বেশী ওজনের গরু বিক্রির বিষয়টি দেখে আমিও সিদ্ধান্ত নেই, সেই থেকে শুরু। এক বছর এ সিনবাদ কে লালন পালন করে আজকে ৪০ মণ ওজনের পরিণত করেছি। প্রথম ৬ মাস প্রতিদিন ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার খাবার  আর শেষ ৬ মাস ১৮০০-২০০০ হাজার টাকা খাবার খাওয়েছি।

বিল্লাল বলেন, সিনবাদ কে প্রতিদিন কাচা ঘাস, গমের ভূসি, শুকনা খড়, ভুট্টা, ধান ও গম ভাঙ্গা, ছোলা, চিড়া, আখের গুর, মালটা, কলা, পেয়ারা, মিষ্টি লাউ, নালী খাওয়ানো হয়। আর ঔষধের মধ্যে ডিসিপি লবণ খাওয়েছি।

সিনবাদের নিয়মিত চিকিৎসক সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেনারি সার্জন ডা. মো. সেলিম জাহান বলেন, বিল্লাল হোসেনের সিনবাদ ৮ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা, উচ্চতা ৬ ফুট, গলার বেড় ৪ ফুট ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি। যার ওজন ৩০ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৬শত ৮ কেজি যা ১.৬ টন বা ৪০.২০ মন।

ভেটেনারি সার্জন আরো বলেন, এ ষাঁড়টিকে আমি নিয়মিত তদারকি করে খামারি কে রোগ প্রতিরোধ, কৃমিনাশক ওষুধ সেবনসহ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। ঈদের হাট আগ পর্যন্ত এ সিনবাদের ওজন আরো বাড়বে বলে দাবী করেন।

খামারীর স্ত্রী রানু বেগম বলেন, সিনবাদকে আমরা সন্তানের মত আগলে এক বছর লালন পালন করেছি। সিনবাদকে দেখাশুনা করার জন্য ১ বছরের জন্য চুক্তিতে দেড় লক্ষ টাকা বেতনের রাখাল ছাড়াও আমরা ঘরে বাইরে আরো ৩ জন মানুষ লালন পালন করেছি। তিনি আরো বলেন, দিনে ১০- ১২ বার মটর চালিয়ে ঠান্ড পানি দিয়ে গোসল করাই। ওর রাগ উঠলেই চিরুনি দিয়ে শরিল আচরে দিয়ে সিনবাদ বলে আদর করলেই ও শান্ত হয়ে যায়। সিনবাদকে দিনে ১০-১২ বার গোসল করাতে হয়।

৪০ মণ ওজনের সিনবাদের দাম হাকাচ্ছেন ১৮ লক্ষ টাকা। তবে বাড়ি থেকে কেউ নিতে চাইলে আরেকটু কমে বিক্রি করবেন বলে জানান, মালিক বিল্লাল হোসেন। আগ্রহী ক্রেতারা সরাসরি খামারির মোবাইল নাম্বারে ০১৭২৬ ৬২২৫৭৩ যোগাযোগ করতে পারেন।

সিনবাদ কে দেখার জন্য প্রতিদিনই সাটুরিয়ার বিভিন্ন গ্রাম ছাড়াও পাশর্^বর্তী ধামরাই, মির্জাপুর, নাগরপুর ও টাঙ্গাইল জেলা থেকে দেখতে ভিড় করছেন বিল্লাল হোসেনের বাড়ীতে।
বিল্লালের পাশের গ্রাম দেলুয়া গ্রামের গবাদি পশু ব্যাবসায়ী নবু বেপারী বলেন, এ বছর ভারতীয় গরু না আসলে বিল্লাল মিয়া ভাল দাব পাবেন। আর ব্যতিক্রম হলে এ সিনবাদের খামারীর মালিক লোকসানের মুখে পড়বে। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিগন মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

টাঙ্গাইল শহর থেকে এ ষাঁড়টি দেখতে আসা আব্দুস সালাম বলেন, এ গ্রামে আমার শশুর বাড়ী হওয়াতে আমি সংবাদ পাই ৪০ মন ওজনের ষাড়ের কথা। মূলত বিশ^াস না হওয়াতে এটি দেখতে এসেছিলাম।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ খুরশেদ আলম বলেন, সাটুরিয়া উপজেলায় বিগত ৩ বছর ধরে সবচেয়ে বেশী ওজনের ষাড় লালন পালন করে সারা দেশেই আলোচনায় ছিল। এবছরও বিল্লাল হোসেন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সিনবাদ নামে একটি ষাড় লালন করেছে। কোন ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ করা হয় নি, কোন রাসাইনিক উপাদান ব্যাবহার করা হয়নি এবং নিয়মিত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি খামারি তার ষাঁড়টি বিক্রি করে উপযুক্ত মূল্য পাবেন।

মানিকগঞ্জ২৪/ সাটুরিয়া/ হা.ফ/ ৪ আগষ্ট ২০১৮।
আরও পড়ুন:

সিংগাইরে অজ্ঞাত নারীর পুড়ানো মরদেহ উদ্ধার

আরো পড়ুুন