সাটুরিয়ায় লোন দেওয়ার নামে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও

সাটরিয়া প্রতিনিধি: ২৫ জুলাই মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় পল্লি উন্নয়ন নামে একটি সমিতি লোন দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। এলাকার শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবাসায়ীর কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্রটি।  প্রমান না থাকায় প্রতারণার শিকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না। ফলে এসব ব্যাবসায়ীরা লাভের বদলে ক্ষতির সম্মুক্ষিন হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
   
এ ভূয়া সমিতিটির সাটুরিয়ায় কোন অফিস খোজে পাওয়া যায়নি। তবে টাকা নেবার সময় কর্মীরা দাবী করেছিল তাদের  মানিকগঞ্জ শহরে প্রধান কার্যালয় রয়েছে।  প্রতিদিনই টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় গ্রাহকরা সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন আঃ আলিমের বাসায় সমিতির অস্থায়ী অফিসে এসে জড়ো হচ্ছে। কিন্তু কাউকে না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে।

জানা গেছে, প্রতারণার শিকার প্রায় সবাই মুদি দোকানদার.  মাছ  বিক্রেতা, মুরগী বিক্রেতা, অটোরিক্সা চালকদের মত ছোটখাট ব্যবসা করেন। এমন একজন  প্রতারণার শিকার বালিয়াটি বাজারের মুরগী বিক্রেতা গাজী মিয়া। তিনি জানান গত বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বাজারে তিনজন লোক এসে নিজেদের পল্লি উন্নয়ন সমিতির কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দেন।  ক্ষুদ্র ব্যবাসায়ীদের তারা সহজ কিস্তিতে লোন দেন বলে জানান। এক লাখ টাকা লোন নিলে  মাসে ৫ হাজার টাকা করে ২৩ কিস্তিতে  পরিশোধ করতে হবে। ওই টাকা পেতে হলে সঞ্চয় দিতে হবে ২০ হাজার টাকা।  এতে ১ বছরে সমিতির লাভ থাকবে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। তবে লোন পাওয়ার আগে ২ লাখ টাকা লোনের জন্য সঞ্চয় হিসাবে ২০ হাজার ২ শত টাকা অগ্রিম দিতে হবে। কিস্তি শেষে এই সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ দেয়া হবে। একই ভাবে ১ লাখের জন্য সঞ্চয় দিতে হবে ১০ হাজার ১শত টাকা। প্রতিমাসে কিস্তি হবে ৫ হাজার টাকা।

গাজী মিয়া জানান তাদের কথায় বিশ্বাস করে তিনি  ২ লাখ টাকা লোনের জন্য সঞ্চয় বাবদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন প্রতারকদের হাতে। প্রতারকরা জানান সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন আঃ আলিমের বাসা অফিস হিসাবে ভাড়া নিয়েছেন। বিকেল চারটার দিকে গাজী মিয়াকে অফিসে এসে লোনের টাকা এবং কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেন। কথামত বিকেলে ওই অফিসে গিয়ে তারমত আরও বিশ পঁচিশজনকে দেখতে পান। কিন্তু পল্লি উন্নয়ন সমিতির কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পাননি। রাত আটটা পর্যন্ত অপেক্ষার পরও কেও আসেনি। অপেক্ষমান সবাই বুঝতে পারে তারা প্রতারণা শিকার হয়েছেন।

আরেক প্রতারণার শিকার আবুল বাসার একই ধরনে বর্ননা দিয়ে জানান লাল রঙের একটি প্লাটিনা মোটরসাইকেলে তিন জন এসেছিল। এদের একজন নিজের নাম বলেছিল আঃ রহিম। সেনা সদস্যদের মত চুলের কাটিং। প্রায় সাড়ে পাঁচফুট উচ্চতা এবং গায়ের রক্ষ শ্যামলা। আবুল বাসার বলেন দেখতে মনে হবে সেনা সদস্য। আবুল বাসার আরও জানান বৃহস্পতিবার পল্লি উন্নয়ন সমিতির অফিসে অপেক্ষা করার সময় রহিমের সাথে বিকেল  চারটা পর্যন্ত  মোবাইলফোনে তার কথা হয়েছে। রহিম তাদের অপেক্ষা করতে বলেছে। কিন্তু সাড়ে চারটার পর থেকে রহিমের ০১৮৪৫১১১০৩০ নাম্বার মোবাইলফোন বন্ধ হয়ে যায়। এই ব্যাক্তির কাছ থেকে ১০ হাজার ১ শত টাকা হাতিয়ে নেয় বলে জানায়। সে আরো জানায় এভাবে প্রায় কয়েকটি গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ৫০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয় বলে জানান।

এ ব্যাপারে বাড়ির মালিক আব্দুল আলিম জানান, গত বুধবার পল্লি উন্নয়ন সমিতির কর্মকর্তা পরিচয়ে আঃ রহিম নামের একজন এসে তার বাড়ি ভাড়া চান। কথা বলে মাসিক ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া ফয়সালা হয়। তাৎক্ষনিক ভাবে আঃ রহিম কয়েকটি কাঠের চেয়ার কিনে বাড়ির একটি কক্ষে রাখেন। কথা হয় পরের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার মিলাদের মাধ্যমে অফিস চালু করা হবে। ওই সময়ে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করা হবে। একই দিনে লোন দেওয়ার কথা বললেন প্রথানণার শিকার অর্ধশতাধিক ব্যাক্তি। কিন্তু পরের দিন তারা আর আসেনি। রহিমের ০১৮৪৫১১১০৩০ নাম্বার মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এই প্রতিবেদক রহিমের মোবাইল ফোনে রিং করলে সারা পাওয়া যায়। সাংবাদিক পরিচয় দিলে  তিনি পল্লি উন্নয়ন সমিতির কর্মকর্তা রহিম কিনা জিজ্ঞাসা করলে ফোন কেটে দেন। পরে আরও কয়েকবার চেস্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা সমাজ সেবা  কর্মকর্তা মো. মেহেদি মাসুদ বলেন এমন নামে কোন অফিস  সাটুরিয়ায় ছিল কিনা তা আমার জানা নেই।

সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান বলেন, পল্লি উন্নয়ন নামে সমিতি এলাকার ব্যবাসায়ীদের ঋৃণ দেবার কথা বলে টাকা নিয়ে পালিয়েছে এ ব্যাপারে আমার নিকট কেউ লিখিত অভিযোগ করেন নি। অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্বে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব।

মানিকগঞ্জ২৪/ সাটুরিয়া/ জা.অা/ হা.ফ/ ২৫ জুলাই।
আরও পড়ন:

সাটুরিয়ায় ধর্মিয় শিক্ষকদের মাসিক সভা

আরো পড়ুুন