১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

মানিকগঞ্জ২৪ প্রতিনিধি ॥ ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে গভীর রাতে মানিকগঞ্জ থেকে পাকিস্থানী হানাদাররা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে। পরে ১৩ ডিসেম্বর বিজয়ী বেশে মুক্তি যোদ্ধারা সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে সমবেত হন।

এর পর থেকেই ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জে হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা হয়। প্রতি বছরের মত এবারও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিন টি পালন করা হবে। এ উপলক্ষে মানিকগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগ এবং জেলা প্রশাষন দিন ব্যাপি বিভিন্ন কর্মসুচি রেখেছে।

১৯৭১ সালে যুদ্ধচলাকালীন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মাজহারুল হক চাঁন মিয়ার সভাপতিত্বে মানিকগঞ্জ  সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মানিকগঞ্জে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে মানিকগঞ্জ কে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ৪৫  বছর আগে এই দিন একে একে পাক হানাদাররা মানিকগঞ্জ থেকে পালিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করতে বাধ্য হয়। থানা গুলো থেকে এর আগেই সরে এসে মহকুমা শহরে অবস্থান নেয় পাক হানাদাররা।

মানিকগঞ্জে চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধাগন বীর প্রতিক  খেতাব পান। বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন স্কোয়াড্রন লিডার (অবঃ) বদরুল আলম ( বীর প্রতীক ), ইব্রাহীম খান ( বীর প্রতীক ), শহীদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতিক) এবং মোহাম্মদ আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক)।

এ দিকে এ দিনটি কে স্মরণ করে প্রতিবছরের মতো এবারও ১৩ ডিসেম্বর থেকে মানিকগঞ্জে শুরু হচ্ছে জেলার সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। প্রতিবছরের মতো মানিকগঞ্জ বিজয় মেলা শুরু হয়ে চলবে ২৭ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ বিজয় মেলাতে মুক্তিযোদ্ধের বিভিন্ন স্বৃতিসংবলিত ছবি প্রদর্শিত ছাড়াও প্রতিদিন মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস নিয়ে নানা আয়োজন থাকবে বিজয় মেলার মঞ্চে। এ বিজয় মেলা মানিকগঞ্জের সবচেয়ে বড় বিজয় মেলা হিসেবে কয়েক যুগ ধরে উৎসবের পরিণত হয়েছে।

মানিকগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য মানিকগঞ্জে ২৫ মার্চ অ্যাডভোকেট খন্দকার চান মিয়াকে চেয়ারম্যান করে মোঃ মোসলেম উদ্দিন খান হাবুমিয়া, ক্যাপ্টেন ( অবঃ.) আবদুল হালিম চৌধুরী , খন্দকার দেলোয়ার হোসেন , সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরী , মীর আবুল খায়ের ঘটু , মফিজুল ইসলাম খান কামাল কে নিয়ে একটি ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির নের্তৃত্বেই মানিকগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়।

২৫ মার্চ বিপ্লবী কমান্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মানিকগঞ্জ ট্রেজারিতে রক্ষিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে  ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিমের লাইসেন্সকৃত বন্দুক ও পিস্তল মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার শুরু হয় এবং মানিকগঞ্জ জেলা কমান্ড কাউন্সিল সদস্যরা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য শপথ গ্রহণ করেন ঐ সময় থেকে। ২৫ মার্চ মানিকগঞ্জ মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে আরিচা ফেরিঘাট দখল করে ঘাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । ভারত থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতিরোধ শুরু করেন। পাকবাহিনী, আল-বদর, আল-শামস, রাজাকারদের আক্রমন, ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা দুটি ব্যানারে কাজ করেন।

মানিকগঞ্জর ডাক বাংলো ছিল পাক হানাদার বাহিনীর সদর দপ্তর। এখান থেকেই পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী ও তাদের  দোসররা নিধনযজ্ঞ পরিচালনা করত। আর মূল ব্যারাক ছিল মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পিটিআইয়ের মূল ভবনে।

মানিকগঞ্জের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হয় গোলাইডাংগা যুদ্ধ, এ যুদ্ধে ৮১ জন ও বায়রা যুদ্ধে ১১ জন পাকসেনাকে হত্যা করা হয়। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন যুদ্ধে পাকিস্থাননি সেনাদের পরাজিত করেন মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ১৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাক হায়েনারা  বাহিনীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। জেলার বিভিন্ন যুদ্ধে ৫৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৯ জন পঙ্গুত্ব বরণ করেন। মানিকগঞ্জে চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধাগন বীর প্রতিক  খেতাব পান।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম জানান, ১৩ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে সোমবার রাত ১২ টার পর তেপদ্ধনি, ভোরে মানিকগঞ্জ বাস ষ্টান্ডে মুক্তিযোদ্ধা ভাাস্কর্য অদম্য ৭১ তে ফুল অর্পন, ভোরে র‌্যালি ও একাধিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাছাড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী এবং সবচেয়ে বড় বিজয় মেলা এই হানাদার মুক্ত দিবস কে ঘিরেই মানিকগঞ্জে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিজয় মেলা টি বুধবার বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধোধন করার কথা রয়েছে। ১৫ দিন ব্যাপি এ বিজয় মেলা মঞ্চে মুক্তিযোদ্ধের উপর নাটকসহ প্রতিদিনই সাংস্কৃতিক সন্ধার আয়োজন করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ১৩ ডিসেম্বর/ ২০১৭।
আরও পড়ুন:

মানিকগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডের অধম্য ৭১ বছর জুড়েই ব্যানারে ঢাকা

আরো পড়ুুন