শিবালয় উপরজেলার বরংগাইল পোষ্ট অফিস কাম ই- পোষ্ট সেন্টার |
মানিকগঞ্জে ২০১৫ সনের জুন মাস থেকে মানিকগঞ্জে ই-পোস্ট সেন্টার সেবা কেন্দ্র চালু শুরু করা হয়। কিন্তু ৩ বছর পার হতে চল্লেও সাধারণ মানুষ জানইে না ই-পোস্ট সেন্টার কি। ফলে মানিকগঞ্জে ৬৬ টি ই-পোস্ট সেন্টারে প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে বসেছে। প্রায় সেন্টাগুলি থাকে বন্ধ, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি কথা থাকলেও তা মানা হয় নি। আর যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে এসব ল্যাপটপ ব্যাবহার করছেন পোষ্ট মাষ্টার ও পিয়নরা।
বর্তমান সরকার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের আদলে দেশের সকল পোষ্ট অফিসে ই-পোস্ট সেন্টার সেবা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতন্ত গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের মাঝে ডিজিটাল তথ্য সেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে শুরু হয় ই-পোস্ট সেন্টারের সেবা।
মানিকগঞ্জে এ সেবা টি শুরু হয় ২০১৫ সালের জুন মাসে। বর্তমানে জেলার সাতটি উপজেলার ৬৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬ টি উপজেলা পোষ্ট অফিস, ৪ টি সাব অফিস এবং ৫৬টি ব্রাঞ্চ অফিসে ই- পোষ্ট সেন্টার চাল করা হয়। ইউনিয়ন পোস্ট অফিসে পৌঁছে গেছে এসব ডিজিটাল সেবার সামগ্রীসমূহ। কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাবে একেবারে নামকা ওয়াস্তে চলছে এসব ই-পোস্ট সেন্টারের সেবা কার্যক্রম।
এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে প্রতিটি ই-পোষ্ট সেন্টারে তিনটি ল্যাপটপ, দুইটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার ও একটি মডেম, মাওস, কি বোর্ডসহ ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় আরও কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে প্রতিটি ই-পোস্ট সেন্টার উদ্যোক্তাদের।
মানিকগঞ্জ সদর পোষ্ট অফিসের পোষ্ট মাষ্টার আব্দুল জব্বার খান বলেন, সাধারণ মানুষের অনলাইনে আবেদনসহ বিভিন্ন সেবার পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা খুব অল্প খরচে কম্পিউটারের বিভিন্ন কোর্স সম্পন্ন করতেই চালু করা হয় ই- সেন্টার।
কিন্তু গত ৭ দিন মানিকগঞ্জের বিভিন্ন ই- পোষ্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ ত দুরের কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষকসহ সমামজের কোন মানুষই এ ই- সেন্টার সম্পর্কে অবগত নয়। ফলে কাংক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
সোমবার (১২ মার্চ) জেলার ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি পোষ্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায় পোষ্ট মাষ্টার নেই। একজন রানার বসে আছে অফিসে। তার নিকট থেকে ই সেন্টার ও এর উদ্যোক্তার খোজে যাওয়া হয় বাস ষ্টান্ডে। কিন্তু ৩০ মিনিট খুজাঁখুজি করলে কোন মানুষই পোষ্ট ই সেন্টার ও তার উদ্যোক্তার তথ্য দিতে পারে নি। পরে উদ্যোক্তার ফোন করে যাওয়া হয়। গিয়ে দেখা যায় সে একজন ইলেকট্রনিক মেকার। তার কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই। সে কোন টাকা পয়সা দিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে পোষ্ট ই- সেন্টারের পাশের দোকানী রাজু আহম্মেদ জানান, এমন সেন্টার যে আছে তিনি আজ প্রথম শোনলেন।
মহাদেপপুর পোষ্ট অফিসের ই সেন্টার টি ২ কিলোমিটার অদূরে বরগাইল বাজারে পরিচালনা করা হচ্ছে। এখান উদ্যোক্তা হচ্ছে পোষ্ট মাষ্টার নোয়াব আলীর ভাতিজা সেলিম হোসেন। তার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কোন সাইনবোর্ড, সেবার তালিকা ও মূল্য লেখা নাই। তার ভাল আয় হলেও দেখানো হচ্ছে মাসে ৩- ৪ হাজার টাকা।
সম্প্রতি দুপুর ২ টার দিকে শিবালয় উপজেলার বরংগাইল পোষ্ট অফিসে গিয়ে আরও চমক প্রদ তথ্য পাওয়া যায়, এখানকার পোষ্টা মাষ্টার রিতা আক্তার নিজেই উদ্যোক্তা। পোষ্ট ই- সেন্টারের মালামাল অফিসের নিরাপত্তার অজুহাতে এখানকার পিয়ন উত্তম কুমার তার ব্যক্তিগত অফিসে ব্যাবহার করছেন।
শুধু শিবালয় ও ঘিওর নয়, এমন চিত্র সাটুরিয়া, হরিরামপুর, দৌলতপুর, মানিকগঞ্জ সদও ও সিংগাইর উপজেলার সকল পোষ্ট অফিসের ই- সেন্টারের। নতুন নতুন উদ্যোক্তার বদলে কোন কম্পিউটার ব্যবসয়ীকে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে ই- পোষ্ট সেন্টারের ।
উদ্যোক্তাদের মাসিক আয়ের ১০ ভাগ পোস্টমাস্টার ও ১০ ভাগ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও এ কার্যক্রম শুধু খাতা কলমে। বাস্তবে কোন সফল পোষ্ট- ই সেন্টারের কোন খোজ মিলে নি।
মানিকগঞ্জ জেলার ই-পোষ্ট সেন্টারের পরিদর্শখ এ, এম, কে এম ফরুখ আহম্মেদ জানান, মানিকগঞ্জের ৭ টি উপজেলার ৬৬ টি ই- পোষ্ট সেন্টার আছে। এখানে গড়ে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মালামাল দেওয়া হয়েছে। সে হিসাব অনুযায়ী জেলার ৬৬ টি সেন্টাওে এক কোটি ৩২ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ দেওয়া হয়েছে। ই- পোষ্ট সেন্টার ঠিক মত চলছে না বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এটি ৩ বছরের প্রকল্প ছিল। এ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমাকে ৫ টি উপজেলার সেন্টার দেখতে হচ্ছে। ফলে ঠিকমত মনিটরিং করা যাচ্ছে না।
মানিকগঞ্জ২৪/ ১৯ মার্চ/ ২০১৮।
আরও পড়ুন: