মোহাম্মদ হাসান ফয়জী: জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকার শতবর্ষী নৌকার হাট জমে উটেছে। প্রতি শনিবার হাট বসলেও চলতি বন্যায় পানি বেশী দিন থাকা এবং ২য় দফা বন্যা হওয়ায় হাট ছাড়াও নৌকা বিকি কিনি হচ্ছে এখানে। মানিকগঞ্জে নদ নদীর পানি কমতে
শুরু করলেও বর্ষার পানি থৈ থৈ করছে
চার দিকে। কোন কোন ইউনিয়নে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। বর্ষা এলেই নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়, তাই নৌকা তৈরির শ্রমিকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
শুরু করলেও বর্ষার পানি থৈ থৈ করছে
চার দিকে। কোন কোন ইউনিয়নে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। বর্ষা এলেই নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়, তাই নৌকা তৈরির শ্রমিকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
জেলার ৭টি উপজেলার ৬৫ টি ইউনিয়নই এখন বর্ষার পানিতে নিমজ্জিত।বন্যার পানি না থাকলেও পদ্মা ও যমুনা, ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা ও ইছামতি নদীর তীরবর্তী মানুষদের নৌকা ছাড়া চলাচলের অন্য কোন মাধ্যম নেই। অপর দিকে চলতি বন্যায় জেলার ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি মানুষের বাহন নৌকা তৈরির কারখানার শ্রমিকরা এখন নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকার শতবর্ষী নৌকার হাটও জমে উঠেছে।
শনিবার এ নৌকার হাটে জেলার ঘিওর, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা ছাড়াও ঢাকার দোহার নবাবগঞ্জ উপজেলাসহ পদ্মা ও যমুনার তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ নৌকা কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এ নৌকার হাট।
কড়ই, চাম্বুল, ওরিয়ান, লোহা, রেইন ট্রি, কদম, জিকা কাঠের ১০–১২ হাতের নৌকার দাম পড়ে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ হাটে ডিঙ্গি বা কোষা নৌকার চাহিদাই সবচেয়ে বেশী।
ঝিটকা বাজারের লিয়াকত আলী নামের এক নৌকা শ্রমিক জানান, একটি নিম্নমানের কাঠের নৌকা একদিনেই তৈরি করতে পারলেও উন্নত মানের কাঠের নৌকা তৈরিতে সময় লাগে ২–৩ দিন। এ হাটে নৌকা সরবরাহ করার জন্য হরিরামপুর উপজেলার ২০–২৫ টি নৌকা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এ কারখানায় প্রায় ২ শতাধিক নৌকা তৈরির শ্রমিক কাজ করছে।
এ হাটে সাভার থেকেও বেপারিরা নৌকা আনেন। সারা বছর অন্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও বর্ষার ৩ মাস তাদের নৌকা তৈরির ও বিক্রির ধুম পড়ে যায়।
ঝিটকা হাটের নৌকা বেপারী রেজাউল করিম জানান, ঝিটকার হাটে গড়ে ৫–৬ শতাধিক নৌকা বিক্রি হয়। তাছাড়া এ বছর বন্যার পানি বেশি থাকায় হাট ছাড়াও ভাল বিক্রি হচ্ছে।
হরিরামপুর উপজেলার গৌরিনাথপুর গ্রাম থেকে নৌকা কিনতে আসা রেজাউল করিম জানান, বাড়ির চারদিকেই পানি, নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়া যায় না। তাই নৌকা কিনতে আসলাম।
মুনু বেপারী নামে আরেক নৌকা ব্যবসায়ী জানান, ঝিটকার হাট সহ চলতি বছরে ১০–১২ হাতের কোষা নৌকার চাহিদা সবচেয়ে বেশী। নিম্নমানের ১০–১২ হাতের নৌকা ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া সম্ভব। ৫ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মানের নৌকা পাওয়া যায়।
ঝিটকার নৌকা হাটে ক্রেতা ও বেপারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা প্রতি বছর বর্ষায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন এ ধরনের ক্রেতারা বেশী দামের নৌকা কিনেন। আর যারা অতিরিক্ত বন্যা হলে পানিবন্দি হয়ে পড়েন তারা এক মৌসুমের জন্য কম দামের নৌকা কিনেন।
এ ব্যাপারে সবচেয়ে নৌকার বড় মহাজন সাইদুর জানান, ১২ বছর ধরে নৌকা তৈরির ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করি। এ বছর বন্যার পানি বেশি হওয়ায় নৌকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। পদ্মা ও যমুনা নদীর কিছু শাখা নদীর অংশ ভরাট হয়ে গেছে, নদীগুলো খনন করলে তাদের নৌকা তৈরির ব্যবসা ভাল হতো বলে তিনি দাবি করেন।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা ছাড়াও ঘিওর উপজেলায়ও নৌকার হাট জমে উঠেছে। জেলায় বর্ষা মৌসুমে নৌকার চাহিদা মিটায় হরিরামপুরের ঝিটকা ও ঘিওর উপজেলার নৌকার হাট। এ মৌসুমে প্রতি হাটে ৬–৭ শত নৌকা বিকি কিনি হয়। বর্ষার পানি কমতে শুরু করলেও বাকীটা সময় আরও নৌকা বিক্রি হবে বলে প্রত্যাশা করছেন এ পেশার সংশ্লিষ্টরা।
মানিকগঞ্জ২৪/হা.ফ/
২৮ আগস্ট/ ২০১৭।
২৮ আগস্ট/ ২০১৭।