ভর্তি পরীক্ষাঃসফলদের পেছনের গল্প ও সাক্ষাৎকার-৫

এস.কে.এম. হেদায়েত উল্লাহ:
দুর্জয় সূত্রধর।মানিকগঞ্জের শিবালয়ের ছেলে।কৈশোরের দুরন্ত সময় পাড়ি দিয়েছেন মাত্রই।ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেছেন।
বর্তমানে পড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে।নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অভিজ্ঞতা ও ভর্তি পরীক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য মুখোমুখি হয়েছিলেন মানিকগঞ্জ২৪.কমের।
– কেমন আছেন?
– জ্বী। সৃষ্টিকর্তা ভালই রেখেছেন।
– কেমন কাটছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন?
– পরিক্ষার ব্যস্ততা আর বন্ধুদের আড্ডায় কোথা দিয়ে সময় যাচ্ছে ঠিক বুঝে উঠছি না। সব মিলিয়ে ভালই যাচ্ছে।
– দেশের অন্যতম সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন,অনুভূতিটা কেমন?
– আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বলতে যা বুঝি সেটা হলো যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থানের মেধাবীরা একত্রে থাকবে, পড়াশুনা হবে, আড্ডা হবে, লেখাপড়ার পাশাপাশি সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে  ইত্যাদি। ছোটবেলা থেকেই চাইতাম আমি যেন বড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ি। সে আশা পূর্ণ হওয়াতে আমি খুব খুশি।
আমাদের মত গরীব দেশে সরকার আমাদের জন্য উচ্চশিক্ষাকে কতটা সহজ করে দিয়েছে সেটা এখানেই এসে বুঝতে পারি। 
– কীভাবে পড়াশুনা করেছেন ভর্তি প্রস্তুতির জন্য?
– দেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই নিজেকে মেধাবী বলে প্রমান করতে হবে। এজন্য আমি নিজেকে  সংযম এর মধ্যে রেখেছি ,বার বার নিজেকে প্রস্তুত করেছি, নিজের মধ্যে কি অভাব ছিল খুঁজে বের করেছি, নিজেকে সাহায্য করেছি অভাবটিকে পূরন করতে। আমি বিশ্বাসী ছিলাম আমার কষ্ট বিফলে যাবে না। বিফলে যায়নি । 
– আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে,মানিকগঞ্জ থেকে তুলনামূলক অনেক কম শিক্ষার্থী মেডিকেল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাচ্ছে,আপনার মতে এর কারণ কি?
– অন্যান্য জেলার চেয়ে মানিকগঞ্জ এর ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা মেডিকেল এ কম সংখ্যক চান্স পেয়ে থাকে।এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
– মানিকগঞ্জ এর ছাত্রছাত্রীরা যথেষ্ট মেধাবী হওয়া সত্বেও প্রতিবছর এমনটা ঘটেই চলছে।
তখন ই খারাপ লাগে যখন দেখি অন্যান্য জেলা সমিতি থেকে নবীনবরণ দেওয়ার সময় একটি অডিটেরিয়াম ভরে যায়, কিন্তু আমাদের নবীন শিক্ষার্থীরা হাতে গোনা কয়েকজন, তাদের জন্য  একটি সেমিনার রুম ই যথেষ্ট হয়ে যায়। 
কোন বিষয় না বুঝে মনে রাখার চেষ্টা, ভাল শিক্ষকের অভাব,  
সঠিক ধারনার অভাব, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিষয়ক অজ্ঞতা এগুলাই মুল কারন। তবে সবচেয়ে ভয়ানক যেটা সেটা হচ্ছে এখানকার ছাত্রছাত্রীদের কনফিডেন্স  অত্যাধিক কম। ভর্তি প্রতিযোগিতায় যে একটু পরিশ্রম করেই যে ভাল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সু্যোগ পাওয়া যায় সেটা এদের বিশ্বাসই করানো যায় না। 
– আপনার মতে এ থেকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে?
– ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগতি করানো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যে নিজের ক্যারিয়ার গঠনে কতটা ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে তাদের অবগতি করানো। তাদেরকে অবশ্যই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যেন তাদের ১২ বছরের দীর্ঘ শিক্ষাজীবন যেন ধ্বংস না  হয়ে সুন্দর একটি পথে এগিয়ে যেতে থাকে এবং শিক্ষাজীবনকে সফল করতে হলে অবশ্যই উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কোন বিষয় আগে ভালভাবে বুঝে তারপর আত্মস্থ করার অভ্যাস তাদেরকে আগে থেকেই গড়ে তুলতে হবে। 
– এক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?
– ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা অবশ্যই বিশ্বাসী থাকবে যেন তারা নিজের সর্বোচ্চ টা চেষ্টা করলে অবশ্যই ভাল কোথাও ভর্তির সু্যোগ পাবে। মুল বই সম্পর্কে  খুব ভাল ধারনা থাকতে হবে। যে কোন জিনিস বুঝে পড়তে হবে।
অভিভাবকরা অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে এক্ষেত্রে। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিকালে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই দুশ্চিন্তায় ভুগে। শিক্ষার্থীদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। কোনভাবেই শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় না পড়ে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে। 

– বর্তমান অভিভাবকমাত্রই চান তার সন্তান ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
– এটাকে আমি একটি সমস্যার চোখে দেখছি।  সমস্যাটি শুধু মানিকগঞ্জ এর না,  আমাদের পুরো দেখের ই সমস্যা। অভিভাবকদের অবশ্যই শিক্ষার্থীরা যা চাচ্ছে সেদিকে নজর দিতে হবে। তাদের ওপর কোনকিছু জোড় করে চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। আর শুধু ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লেই ক্যারিয়ার গঠন হয় না। দেশে আরো বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে যা কোন অংশেই ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর চেয়ে কম না, বরং ভাল। এ ব্যাপারে অবশ্যই অভিভাবকদের অবগত হওয়া উচিত। 
– ফার্মেসির ছাত্র হিসেবে সাবজেক্টটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?একজন শিক্ষার্থীর কেন ফার্মেসিতে পড়া উচিত পড়া উচিত?
– বর্তমানে ফার্মেসি সাব্জেক্টটি ছাত্রছাত্রীদের প্রথমদিকের চয়েজ।
এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের এর একটি অংশ। 
ঔষধ বিজ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতি হওয়া সত্বেও আমাদের দেশে কিছু সমস্যা রয়েই গেছে। ভেজাল ঔষধ, নষ্ট ঔষধ, অসঠিক মাত্রায় প্রয়োগ এখনো জীবন এর জন্য হুমকি হয়ে আছে। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এই ঔষধ বিজ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে পারদর্শী হয়ে এ সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, সাথে সুন্দর একটি ক্যারিয়ার পাবে ছাত্রছাত্রী, এটাই আশা করি।

– ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিশেষ কোন কথা?
– নিজেকে তৈরি করতে হবে। এজন্য যা ই দরকার হোক অর্জন করে নিতে হবে। পরিশ্রম করতে হবে। লক্ষ্য স্থির রেখে লক্ষ্য পূরনে আকুল থাকতে হবে । সাফল্য আসবেই আসবে।
-আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
-আপনাকেও ধন্যবাদ।
মানিকগঞ্জ২৪.কম/এস.কে./২৩ জুন/২০১৮
আরো পড়ুুন