মানিকগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার অবহেলায়

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: ভাষা আন্দলনে ৬৫ বছর পার হলেও আজও অবহেলিত মানিকগঞ্জ জেলা প্রথম শহীদ মিনারটি। ভাষার ১ম  শহীদ রফিকের বাড়ী মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে ।  শহীদদের স্মরণে ১৯৫৪ সালে মানিকগঞ্জে নির্মিত হয়েছিল মানিকগঞ্জ অঞ্চলের প্রথম শহীদ মিনার।

মানিকগঞ্জের ১ম শহিদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন উম্মে সাহেরা খাতুন। শহীদ মিনারটি শহরের এস কে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত। কিন্তু দু:খজনক হলেও  শহীদ মিনারটি সারাবছরই থাকে অবহেলা ও অযতেœ। সম্মান নয় বরং শহীদ মিনারের উপর বসে শিক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষা করে  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকরা।

নিয়মিত অভিভাবকদের বসার কারনে ভেঙ্গে গেছে শহীদ মিনারের রেলিং।  কর্তৃপক্ষ সংস্কারের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা রুপ নেয় নি আজও। যে কোনো সময়  বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

১৯৫৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস, তৎকালীন ছাত্র-জনতা উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মান করনের জন্য। কয়েকটা শহীদ মিনার নির্মান করাও হয়। কিন্তু পাকিস্তানী সরকার সেগুলো ভেঙে ফেলে। ২১ ফেব্রুয়ারী শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার জন্য ছাত্র নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনার তৈরির জন্য আবারো সোচ্চার হয়। শহিদ মিনার নির্মাণের জন্য এগিয়ে এলেন যুক্তফ্রণ্ট সরকারের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সহধর্মিণী উম্মে সাহেরা খাতুন।

মানিকগঞ্জ শহরের এস.কে বালিকা বিদ্যালয়ের বিপরীত দিকে সাহেরা খাতুনের বাড়ির সামনেই শহীদ মিনার নির্মানের অনুমতি দিলেন। ২০ই ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনার তৈরি করে ফেললেন। মানিকগঞ্জ শহরে শহীদ মিনার নির্মানেরর খবর পাওয়া মাত্র তখনকার এসডিও এ.কে.দত্ত চৌধুরী সংখ্যক পুলিশ নিয়ে হাজির হলেন শহীদ মিনার ভাঙ্গার জন্য।

তখন শহীদ মিনারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলেন উম্মে সাহেরা খাতুন মত। বললেন, আমার জায়গায় আমি শহীদ মিনার বানিয়েছি। কার সাহস তা ভাঙে? তার এই কথায় থেমে গেলেন এসডিও এবং পুলিশ বাহিনী শহীদ মিনার ভাঙার সাহস পেলেন না। ২১ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ ছাত্রজনতার ঢল নেমেছিল এই শহীদ মিনারের বেদীতে। ফুলে ফুলে রঙ্গিন হয়ে গিয়েছিল শহীদ মিনারের বেদী।

পরে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পর এ শহীদ মিনারটি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় পাকহানাদার বাহিনী। দেশ স্বাধীন হবার এক বছর পর ঠিক একই স্থানে একইভাবে পুনরায় গড়ে তোলা হয় শহীদ মিনারটি। ২০০৭ সালে মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রশাসনের উদ্যোগে মানিকগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত হলে প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে মিনারটি। সাংস্কৃতিক কমী-সংগঠকদের দাবির মুখে মানিকগঞ্জ পৌরসভার পক্ষ থেকে মূল শহীদ মিনারটির আদল বদলে দিয়ে সিরামিক টাইলস লাগিয়ে নতুন করে এটাকে গড়া হয়।

এ ব্যাপারে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ জানান, এই শহিদ মিনারের মাটি দিয়ে জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি তৈরী করা হয়েছে ঠিকই এবং সেটা ভালই হয়েছে।  যেহেতু এই শহীদ মিনারটি আদি এখান থেকে মাটি নিয়ে ঐ শহীদ মিনারটি করে থাকে তাহলে এটা বন্ধ করে দিতে হবে। আর যদি এই শহীদ মিনারটি রাখতে চাইলে এর সম্মান টিকিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব।

মানিকগঞ্জের খানবাহাদুর আওলাদ হোসেন খান কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ নান্নু বলে,  মানিকগঞ্জের মানুষের গৌরব,অহংকারের খুব বেশী কিছুতো আর টিকে নেই,আমরা সেসব সংরক্ষণও করতে ব্যর্থ হয়েছি। তার অন্যতম নিদর্শন মানিকগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার। কিন্তু এ  শহীদ মিনারটিকে হারাতে বসেছি।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক নাজমুছ সাদাত সেলিম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মানিকগঞ্জ২৪/ মানিকগঞ্জ/ ২১ ফেব্রুয়ারী/ ২০১৮।
আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারী এলেই শহিদ রফিক পাঠাগার ধোয়ামোছা

আরো পড়ুুন