আন্তর্জাতিক যুব দিবসে আমাদের তরুন ও আগামী ভবিষ্যৎ

মোঃ আব্দুল মালেক: শনিবার  (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত হচ্ছে আজ। আন্তর্জাতিক যুব  দিবসের উদ্দেশ্য, বিশ্বব্যাপী তরুণ ও যুবদের সমৃদ্ধ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা ।  জাতিসংঘ ১৯৯৯ সালে এ দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১২ আগস্ট ২০০০ সাল থেকে এটি পালন করা হচ্ছে, তরুণ ও যুবসমাজকে সচেতন করাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগই তরুণ ও যুবক। এরাই দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি। বাংলাদেশে এখন প্রায় ছয় কোটির কাছাকাছি তরুণ-তরুণী। তাবৎ বিশ্বের তরুণসমাজের বেশীর ভাগই দারিদ্র্যসীমার নিচে, অনেকে নীরক্ষর,  শিক্ষা, স্বাস্থ্য-চিকিৎসার তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই এবং বড় একটা অংশ কর্মহীন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে  নির্ভরশীল জনসংখ্যার চেয়ে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেশি এবং এটা একটা বড় সুযোগ। এ সুযোগকে যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে দেশ সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জনের যতেষ্ট সম্ভবনা বিদ্যমান। আর এ সম্ভবনা কাজে লাগাতে হলে আমাদের নীতির প্রয়োগ ও সম্পদের বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

যুবসমাজের কর্মসংস্থানের জন্য  বিনিয়োগ সহ যাবতীয় বিষয় খেয়াল রাখা অবশ্যই জরুরী। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে যুবসমাজের দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, ছেলে–মেয়ের বৈষম্য দূর করা প্রণীত নীতি বাস্তবায়ন করতে পারলে তারা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।

 ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে দেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তরুণদের ভূমিকা রয়েছে।২০০৯ সালে  সরকার গঠনের পর এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ঘটনা হলো রূপকল্প ২০২১ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সফল উদ্যোগ গ্রহণ। সরকারের এই বিপ্লবের সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন তরুণদের হাতে।

জাতী  বুঝতে পেরেছেন তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তরুণেরা ভবিষ্যতের স্বপ্নের বাংলাদেশের নির্মাতা হবে। শিক্ষার সঙ্গে তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। দক্ষতা উন্নয়ননীতির প্রচলিত ধারণার সঙ্গে নতুন ধারণা কাজে লাগাতে হবে। ২০১১ সালে জাতীয় দক্ষতা নীতি হয়েছে। ২২টি নতুন ধারণা এসেছে। এসব ধারণাও কাজে লাগাতে হবে। সমাজে সমতার নীতি আনতে হবে।

একদিকে শিশু কিশোররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে, অন্যদিকে ঝরেও পড়ছে।  একজন লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি করছে। আরেকজন হয়তো ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে অনিশ্চিত জীবনের দিকে যাচ্ছে। আবার আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিকতা ও আদর্শের জায়গার বিষয়টিও নজর রাখতে হবে।

আদর্শিক স্থান ঠিক রেখে প্রযুক্তিসহ সবকিছুর সুফল ব্যবহার করতে হবে। সমাজের ভেতর থেকে তরুনদের নের্তৃত্ব গঠনের  জাগরণটা এখনো ওঠেনি, যদিও সংসদ সদস্যদের মাঝে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এর প্রতিফলন অনেকটাই ঘটিয়েছেন। 

আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে আমরা সনদভিত্তিক পড়া শুনা করছি, আর পড়ার সীমা ঠিক করেছি স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স ডিগ্রি)। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত মানুষের ইতিহাস কেবল মাস্টার্স ডিগ্রি না। তরুনদের প্রতি উদার ও সহানুভূতিশীল হতে হবে।

নেতৃত্ব তরুণদের নিয়ে আসতে হলে তাদের সুযোগ-সুবিধা ও তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে, কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। নেতৃত্ব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সত্যিকার নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন তরুণ গড়ে তুলতে পারলে তারা দেশের সম্পদে পরিণত হবে।

সর্বশেষ  তাই আজ শনিবার (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক যুব দিবসে বলতে হয় দেশ তথা আগামী বিশ্বকে এগিয়ে নিতে হলে যুবসমাজের ক্ষমতায়ন অবশ্যই হতে হবে, যাতে তারা তাদের অধিকার আদায় ও নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। এটা বিশ্ব তথা মানবতার অগ্রগতির জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: মোঃ আব্দুল মালেক, সচিব বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ।

মানিকগঞ্জ২৪/ ১২ আগস্ট/ ২০১৭। 

আরো পড়ুুন