মানিকগঞ্জে যমুনার পানি ৬ সেমি কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি ২৯ জুলাই:

মানিকগঞ্জের যমুনা নদীর পানি শিবালয়ের আরিচা পয়েন্টে বুধবার সকাল ৬ টার দিকে এর আগের ২৪ ঘন্টায় ৬ সেন্টিমিটার কমলেও বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যুমনার পানি ফের কমলেও অভ্যন্তরীণ নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নুতন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।  এতে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলার সাটুরিয়া, দৌলতপুর, হরিরামপুর, ঘিওর, শিবালয়, মানিকগঞ্জ সদর ও সিংগাইর উপজেলার নিম্নাচঞ্চল এলাকা প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার হেক্টর জমি, কয়েক হাজার পুকুর, কয়েক হাজার হেক্টর বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জেলায় মোট ২৩৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হয়েছে ৭ হাজার ৫ শত ৯৫ বর্গ মিটার জমি। বানের পানি ও ভাঙ্গনের স্বীকার হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদী পারের মানুষ।

ফষলি জমি ডুবে যাওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কাচা মরিচের দাম ২ শত থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন সবজির দাম আকাশ ছোয়া হয়ে পড়েছে। করোনার কারনে সাধারণ মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে পড়ে। বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ায় আরও জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা আরও মন্দা হয়ে পড়েছে।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গিলন্ড গ্রামের আওলাদ হোসেন বলেন, চারদিকে পানিতে সব  সবজি খেত ডুইবা গেছে। ৩০ টাকার মরিচ কিনি এহত ২০০ টাকা দিয়া।

দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বলেন, আমার ইউনিয়নের ৯০ ভাগ বাড়ি ঘরেই এখন পানি। বাকী ১০ ভাগ বাড়িতে একটু পানি উঠার সম্ভবনা আছে। মানুষ কোন ভাবে খাবার খেলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ বাড়ির পানি উঠে সব টিওবয়েল ডুবে গেছে। উচু বাড়ির টিউবয়েল থেকে নৌকা যোগে পানি নিয়ে তা ব্যাবহার করছে।

একই উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের সবুরদি পাচুরিয়া গ্রামের  জুয়েল বলেন, পানি বন্দি হওয়ার আগে থাইকা কাম নাই করোনর জন্য। আবার পানি আয়ছে। ঘর থাকা পারি না। ৩০ কেজি চাল পাইছি। কিন্তু সবজির দাম যে ভাবে বাড়ছে। তা কোনার সামর্থ আমাগ নাই। ভর্তা ভাত আর কয়দিন খামু। পুলাপানের মুখে তাকাইয়া পারি না।

সাটুরিয়া উপজেলার সাভার গ্রামের তাঁতের মহাজন বাবুল হোসেন বলেন, তাতের কাপর বুনাই আমি। বন্যার পানির কারনে কাম বন্দ। বাজার করা পারি না। তাতের মহাজন হওয়ায় কারও নিকট হাতও পাততে পারি না।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, বনার্তদের মাঝে ত্রাণ সমাগ্রীর পাশা- পাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলটে ও শুকনা খাবারও  বিতরণও করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ২৬০ মেট্রিক টন চাল প্রায় ৪ হাজার শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

আরো পড়ুুন