মানিকগঞ্জে নৌকা তৈরির ধুম

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি, ২৯ জুলাই:

মানিকগঞ্জে যমুনার পানি বাড়াতে অভ্যন্তরীণ নদ নদির পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার মাত্র ১ টি উপজেলা ছাড়া বাকী সব উপজেলার অধিকাংশ নিন্মাঞ্চল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ২৩৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ডুবে অনেক রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ফলে  হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। জেলার ৭ উপজেলার নৌকা কারিগরা নৌকা বানাতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন।

মানিকগঞ্জের যমুনা নদীর পানি শিবালয়ের আরিচা পয়েন্টে বুধবার সকাল ৬ টার দিকে এর আগের ২৪ ঘন্টায় ৬ সেন্টিমিটার কমলেও বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যুমনার পানি ফের কমলেও অভ্যন্তরীণ নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নুতন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।  এতে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

মানিকগঞ্জের কাঠমিস্ত্রিরা ভোর থেকে গভীর রাত পযন্ত নৌকা তৈরি কাজে নিয়জিত রয়েছে। সারা বছর বিভিন্ন ফার্নিচারের দোকান ও ঘর-বাড়ি তৈরি এবং মেরামতের কাজ করে আসছিল। এ বছর মার্চ মাসে করোনা পরিস্থিতিতে এ কাঠ মিস্ত্রিরা কর্মহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু জুলাই মাসের শুরু থেকে পানি বৃদ্ধিতে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। পানি বৃদ্ধিতে প্রচুর চাহিদা রয়েছে কোষা বা ডিঙ্গি নৌকার।

সরেজমিনে সাটুরিয়া উপজেলার হাজিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ছোট-বড় এবং মাঝারি ধরনের ডিঙি নৌকা তৈরিতে ব্যাস্ত সুভাষ সুত্র ধর। ২ দিনে ৩ টি নৌকার অর্ডার পেয়েছেন। কথা বলার সময় নেই তার। সুভাষ জানান, ১০- ১২ হাত লম্বা নৌকায় বেশী চলছে। এ নৌকা বানাতে সাধারণত ৬ রোজ লাগে। ৩ জন করে  ২দিন কাজ করলেই একটি নৌকার তৈরি করা শেষ হয়।

নকুল সুত্রধর নামে আরেক কাঠ মিস্ত্রি বলেন, মানিকগঞ্জে সাধারণত কড়ই, শিমুল, মেহগনি, ঝিকা, শিশু এবং উরিয়ামসহ বিভিন্ন কাঠের নৌকা তৈরি করে থাকি। তবে এ বছর মৌসুমি নৌকা বিক্রি হচ্ছে বেশী। বাড়ি ঘরে পানি আসায় নৌকা কিনছেন। তাই শিমুল ও আম ও ঝিকা গাছের নৌকা বেশী বিক্রি হচ্ছে।

কষ্ট সুত্রধর বলেন, সারা বছর ফার্নিচার ও ঘরের  কাজ করেন। তবে বর্ষাকালে নৌকার কাজ করে থাকি। কারন মানিকগঞ্জে বড় বড় দুইটি নৌকার হাট রয়েছে। একটি হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা ও আরেকটি ঘিওর নৌকার হাট। এ মৌসুমে সারা সপ্তাহ নৌকা তৈরি করি। তা বেপারিরা এসে কিনে নিয়ে হাটে বিক্রি করে।

ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের কলিয়া বাগজান গ্রামের বাসিন্দা এখলাছ উদ্দিন বলেন,  ১১ হাত লম্বা এবং আড়াই হাত পাশে’র নৌকাগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশী। কাঠের মানভেদে এমন আকারের প্রতিটি নৌকা ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম সেন্টু  বলেন, আমাদের হাটে সাধারণদ পানি বাড়লে নৌকার চাহিদা বাড়ে। শনিবার ঝিটকা হাটে প্রথম দিকে প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ নৌকা বিক্রি হয়েছে । এখন পানি বাড়ায় ৩০০- ৪০০ নৌকা বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাটে।

ঘিওর নৌকার হাটের ইজরাদার গৌরাঙ্গ কুমার ঘোষ বলেন, আমাদের হাট প্রতি বুধবার বসলেও পানি বাড়ায় এখন প্রতিদিনই নৌকা বিক্রি হচ্ছে।  প্রতি হাটে ৫০০- ৬০০ নৌকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া হাট ছাড়াও প্রতিদিন শতাধিক নৌকা বিক্রি হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ২৯ জুলাই ২০২০।

আরো পড়ুুন