হরিরামপুরে হামলা-লুটপাটে আহত ৫

হরিরামপুর প্রতিনিধি, ২৪ জুলাই

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনায় পাঁচজন আহত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, হামলার পাশাপাশি বসতবাড়িতে চালানো হয়েছে ভাঙচুর ও লুটপাট। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শেখ শহিদ বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে হরিরামপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

 

অভিযোগে যাদের নাম উঠে এসেছে, তারা সবাই একই ইউনিয়নের বাসিন্দা। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন—কলাপাড়া গ্রামের মো. ছালেক হোসেন, তার ছেলে সাব্বির, শ্যালক সুমন মোল্লা, ভাই মালেক এবং ফরহাদ। স্থানীয়দের দাবি, এদের বিরুদ্ধে অতীতেও নানা অপকর্মের অভিযোগ ছিল।

 

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ২২ জুলাই বিকেলে শেখ শহীদের ভাই শেখ জয়নাল ও তার স্ত্রী ছালেহা জমিতে গরুর ঘাস কাটতে গেলে বিবাদীরা প্রথমে তাদের গালিগালাজ করে। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে দেশীয় অস্ত্র হাতে তাদের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায় ছালেক, সাব্বির, সুমন, মালেক ও ফরহাদ। প্রথমেই হামলার শিকার হন শেখ শহীদের ভাতিজার স্ত্রী রুমা আক্তার।

 

অভিযোগ রয়েছে, তাকে মারধরের পাশাপাশি শ্লীলতাহানিও করা হয়। তার চিৎকারে এগিয়ে আসা নাজমা আক্তারকেও কাঠের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শহীদের ছেলে সাকিল এগিয়ে গেলে তাকে চাকু মেরে জখম করে সাব্বির। পরে বড় ভাই শেখ আয়নাল ঘটনাস্থলে গেলে তাকে দা দিয়ে কোপাতে গিয়ে ডান হাতে গুরুতর জখম করে ফরহাদ। তাদের ডাকচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে বিবাদীরা প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে চলে যান। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়ার পথেই ফের হামলার চেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে, তাদেরকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেদিন রাত ১০টার দিকে আবারও ৮ থেকে ৯টি মোটরসাইকেলযোগে প্রায় ১৫-২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। সাতটি ঘরের মধ্যে ছয়টি ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র ও বেড়া, দরজা-জানালা ভেঙে ফেলা হয়। যাওয়ার আগে বাড়ির তিন ভাইয়ের রুম থেকে নগদ ছয় লাখ টাকা এবং সাড়ে ছয় ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শেখ শহিদ ও তার আরো দুই ভাইয়ের মোট সাতটি ঘরের মধ্যে ছয়টি ঘরের টিনের বেড়া, দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। সেই সাথে বিদ্যুতের মিটার, ঘরের স্টিলের তিনটি সুকেজ, তিনটি ফ্রিজ ও অন্যান্য আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে।

 

ভুক্তভোগী জয়নাল শেখের স্ত্রী ছালেহা জানান, ‘ছালেক, সাব্বির, সুমন, মালেক ও ফরহাদ আমাদের বাড়ির উপর এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পরে তারা আমাদের বাড়ির সবাইকে বেধরক মারধর করে। আহত সবাইকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। আমাদের বাড়ির সবাই হাসপাতালে থাকায় তারা সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সব ভাঙচুর করে। চলে যাওয়ার সময় নগদ ছয় লাখ টাকা এবং সাড়ে ছয় ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে যায়।’

 

শেখ শহিদ জানান, ‘ঘটনার পর থেকেই তারা আমাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। আমরা জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি।’

 

স্থানীয় রিজু চৌধুরী জানান, ‘যাদের উপর হামলা চালানো হয়েছে তারা খুবই নিরীহ মানুষ। আর ছালেক, সাব্বির, সুমন, মালেক ও ফরহাদরা আগেও এমন কাজ করেছে। যেভাবে তাদের ছয়টি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমরা চাই দ্রুত সমাজের শান্তি শৃঙ্খলার জন্য তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান আলী বলেন, ‘জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীরা বসে ছিল। সেখানে সবাই সিদ্ধান্তে আসে এই জমির মালিক শহিদ ও তার দুই ভাই। মঙ্গলবার ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না, শুনে তাদেরকে বলি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। পরে আবার শুনি বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে টাকা ও সোনার অলংকার নিয়ে গেছে অভিযুক্তরা।’

এ ঘটনায় অভিযুক্ত মো. ছালেক হোসেনের মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হরিরামপুর থানার ওসি মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বুধবার রাতে ভুক্তভোগী শেখ শহিদ পাঁচজনের নামসহ আরও ১৫-২০ জনকে অভিযুক্ত করে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা রুজু করা হবে।

মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ২৪ জুলাই ২০২৫।

আরো পড়ুুন