নেতাদের ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হলেই মাদকমুক্ত সমাজ ও দূর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন করা সম্ভব

মিজানুর রহমান মিরু ১৮ জুলাই:

ইদানিং বিভিন্ন দেশের ভিসা করতে হলে পাসপোর্ট আকারের ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড চায় সাদা। কিন্তু কেন সাদা চায় তার ব্যাখ্যা না জানলেও এতটুকু বুঝতে পারি যে নাক, কান, গলা, চোখ, চুল এ সকল কিছু যেন পরিস্কার দেখা যায়। তেমনি করে রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রেও তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হতে হবে। কারন একজন নেতা যদি চরিত্র হীন হয়, আদর্শ না থাকে, দূর্নীতি পরায়ন হয় তাহলে তিনি আর যাই হোক দেশপ্রেমিক হতে পারে না। জনগনের প্রতি একজন নেতার যেমন দায়বদ্ধতা রয়েছে, তেমনি করে জনগন কেও তাদের নেতা নির্বাচনে অর্থনৈতিক ভাবে প্রভাবিত না হয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে হবে।

আমরা বাজারে গিয়ে এক কেজি বেগুন ক্রয় করতে গিয়ে ভাল করে দেখে নেই – বেগুনে পোকা রয়েছে কি না, অথচ পাঁচ বছরের জন্য একজন ব্যক্তিকে যাচাই বাছাই না করে তার বেক গ্রাউন্ড সাদা না কালো,মাদক ব্যবসায়ী নাকি চোরা কারবারি, তার আয়ের উৎস কি এগুলো আমরা না জেনেই নিজের মুল্যবান ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচন করি। আমি যতটুকু জানি একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর মাসিক সম্মানি ভাতা ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ঢাকায় কিভাবে বাড়ি করে, কিভাবে গাড়ি কিনে, কিভাবে সাভার বাড়ি করে, গ্রামে কিভাবে বিঘা বিঘা জমি কিনে বলতে পারেন? সুত্র একটাই ব্যাকগ্রাউন্ডসাদা নয়, কালো। এই ফিরিস্তি শুধু একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কথা বললাম, উপজেলা চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী তাদের হিসেব আমার ছোট ক্যালকোলেটরে আসবে না।

যখন নেতারা দূর্নীতিগ্রস্ত হয় তখন আমলারা মহোৎসবে দূর্নীতি করে। মন্ত্রী কে এক (১)টাকা ঘুষ দিয়ে আমলারা খায় দশ (১০) টাকা। আমাদের দেশের দূর্নীতি দমন কমিশন শুধু রাজনৈতিক নেতাদের পিছনে ঘুরে। একজন পুলিশ সুপার, একজন ডিসি, একজন সড়ক ও জনপদের জেলার প্রধান প্রকৌশলী, এলজিআরডি জেলার প্রধান প্রকৌশলী, সাবরেজিস্টার, ভুমি অফিসার,ওয়াসার কর্মকর্তা, তিতাসগ্যাসের কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রেলওয়ে কর্মকর্তাসহ অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা এত এত টাকার মালিক বনে যান কিভাবে? সেগুলো খুজে বের করার দায়িত্ব নিশ্চয়ই দূর্নীতি দমন কমিশনের। কিন্তু বিধি বাম নেতাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কালো হলে আমলাদের সাদা হবে কেমন করে।

যে কোন মহামারিতে রাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা জনপ্রতিনিধিরা তাদের স্বাদ্য অনুযায়ী জনগণের পাশে দাঁড়ায়। অথচ আমাদের দেশে লুটপাটের মহোৎসব শুরু হয়। আমরা লজ্জিত, যখন দেখি করোনা চলাকালিন সময়ে ত্রান সামগ্রী বিতরনে অনিয়মের অভিযোগে ৭৬ জন চেয়ারম্যান- মেম্বার বরখাস্ত হয় চুরির দায়ে। অনেক নেতাকে দল থেকে বহিস্কার করতে বাধ্য হয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।

বাজেটের তিন ভাগের দুই ভাগ খরচ হয় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের রাজি খুশি রাখার জন্য বেতন দ্বিগুণ করে দিয়েছে, শুক্রবারের সাথে শনিবার ছুটি ঘোষণা করেছে। এত সুযোগ সুবিধার পরেও কি তাদের ঘুষ, দূর্নীতি বন্ধ হয়েছে? হয় নাই।

বাজেটে জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত ঐ একভাগ থেকেও তাদের বালিশ কাহিনী, কলা কাহিনী, গাছ কাহিনীর মত দূর্নীতির মহোৎসব আমাদের দেখতে হয়। সরকার দলের ছত্রছায়ায় আওয়ামীলীগ নেতা সাহেদ তার রিজেন্ট হাসপাতালের মাধ্যমে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ঠিকাদার মিঠু একাই ২২টি ভুয়া লাইসেন্স এর মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গিয়েছেন। আমার মনে হয় ক্রস ফায়ারের ব্যবহার শুধু ছিঁচকে সন্ত্রাসীর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ না রেখে এর পরিসীমা বাড়ানো উচিৎ। আজকে সকল দূর্নীতি, অনিয়মের পেছনে কোন না কোন রাজনৈতিক নেতা, এমপি,মন্ত্রী দের ইন্ধন রয়েছে। এদেশ আমলারা চালায় না, চালায় রাজনৈতিক নেতা বা রাজনৈতিক দল।

আর রাজনৈতিক নেতাদের বা দলের দূর্বলতার কারনে আমলারা ঘাড়ের উপর সওয়ার হয়। একজন দেশ প্রেমিক, যাদের পারিবারিক বেক গ্রাউন্ড সাদা, তাহারা কখনোই দেশের সাথে বেইমানি করতে পারে না। এখন সময় এসেছে সৎ,আদর্শবান নেতৃত্ব কে খুজে বের করার।আর এই মহুৎ কাজটি করতে হবে দেশের ৩টি বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি’কে। কারন এই দলগুলো সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। মনোনয়ন বানিজ্য না করে ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা দেখে সৎ ও আদর্শবান নেতাকে মনোনয়ন দিতে হবে, তবেই দেশ হবে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, দূর্নীতিমুক্ত।

মিজানুর রহমান মিরু, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক জাতীয় পার্টি।  প্রকাশিত মন্তব্য কলামটি লেখকের নিজস্ব মতামত, এর সকল দ্বায়ভার লেখকের।

মানিকগঞ্জ২৪/ ১৮ জুলাই ২০২০।

 

আরো পড়ুুন