শিবালয় প্রতিনিধি, ২৪ এপ্রিল:
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জনগণ।
জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগে তারা বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ওই চেয়ারম্যান ‘কাছিধারা রাস্তা হতে পাড়াগ্রাম কামারবাড়ি পাকা ব্রীজ’ পর্যন্ত একটি রাস্তার কাজে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। এরপরেই একই সড়কে নাম ঘুরিয়ে ‘পাড়াগ্রাম কামারবাড়ি পাকা ব্রীজ হতে কাছিধারা রাস্তা’ টিতে তিনি আরো ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ আনেন। একই সড়কে দুটি বরাদ্দ দিয়ে রাস্তার কাজ সম্পন্ন না করে তিনি টাকা আতœসাৎ করেছেন। এলাকাবাসী রাস্তারটির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কাছে।
সরেজমিন ওই এলাকা পরিদর্শন করে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান ওই রাস্তার জন্য পরপর দুবার ৯লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েও রাস্তার কাজ সম্পন্ন করেননি। ওই রাস্তাটি মানুষের চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী।
সাবেক ইউপি সদস্য মন্টু মিয়া জানান, চেয়ারম্যান যথাযথভাবে কাজ না করে রাস্তার টাকা আত্মসাত করেছে। তিনি একই রাস্তায় পরপর দুবার ৯ লাখ টাকার বরাদ্দ নিয়েও রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ করেনি। তাছাড়া সরকারী কাজে তিনি রাস্তার পাশের জমির মালিকদের কাছ থেকে মাটি নিয়েছেন এবং রাস্তার পাশে যাদের বাড়ি আছে তাদের কাছ থেকে ১০/১৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন যেটা কিনা সম্পূর্ণ অবৈধ। রাস্তার পাশ থেকে মাটি ও জমির মালিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি রাস্তায় কিছুটা মাটি ফেলে তিনি সরকারী টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
একাধিক গ্রামবাসী জানান, এই রাস্তার টাকা চেয়ারম্যান আত্মসাত করছেন। সরকারী বরাদ্দের টাকা ও স্থানীয়দের সহযোগিতার পরেই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগি। বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদারকি করলেও এর প্রমাণ মিলবে।
শুধু রাস্তার কাজ নয় নিয়মবহির্ভূতভাবে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আতিকুর রহমান সেন্টুকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
আতিকুর রহমান বলেন, আমি ডিজিটাল সেন্টার থেকে যে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতাম চেয়ারম্যান সেখান থেকে ভাগ চাইতো। আমি না দেওয়ার কারনে তিনি আমাকে চাকুরি থেকে বরখাস্তের হুমকি দিত। পরবর্তীতে আমার কাছে চেয়ারম্যান এক লাখ টাকা ঘুষ দাবী করে। চেয়ারম্যান বলেন আমাকে এক লাখ টাকা না দিলে আমি অন্য লোক নিব। পরবর্তীতে আমি টাকা না দেওয়ায় তিনি আমাকে সেন্টার থেকে বের করে দেন।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান মৃধা জানান, টাকা না দিলে চেয়ারম্যান কোন কাজই করেনা। গরীব মানুষ বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, ভিডিজির কার্ড পাওয়ার যোগ্য যারা তাদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান টাকা নিয়ে সেগুলো করে দেয়। টাকা দিতে না পারলে কেও এসব সেবা পায়না। স্থানীয় সামাদ নামে এক ব্যক্তি যার ৩০ বিঘা জমি এবং ছেলে বিদেশে থাকে তাকেও টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যান বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন।
একই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মানিক জানান, সে রাস্তার ঘাটের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, গরীব মানুষদের ঘর দেওয়ার কথা বলে ২০/২৫ হাজার টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন দুর্নীতি করে আসছে। তার অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অভিযোগের বিষয়ে নালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব অপ্রচার করা হচ্ছে। আমার প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎের অভিযোগ প্রমানীত হলে সংগে সংগে আমি পদত্যাগ করব।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ২৪ এপ্রিল ২০১৯।
আরও পড়ুন: