বাবার ৫০ টাকা চুরি করে মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন নন্দ দুলাল গোস্বামী

মোহাম্মদ হাসান ফয়জী: বাবার গচ্ছিত ১৫০ টাকা থেকে ৫০ টাকা চুরি করে মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহন করি। একটা সময় গেছে মুক্তিযোদ্ধের সনদ লুকিয়ে রেখেছি। আর সে সময়টা পরিবর্তন হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী বাড়াতে এখন ভুয়া মুক্তাযোদ্ধারাও মুক্তিযোদ্ধা সাজতে চায় । স্বাধীনতার ৪৬ বছর এসে আমাদের সংবর্ধনা দেবার সময় ৩০- টাকার প্রাইজ বন্ড হাতে তুলে দেন। যা এখনও ভাঙ্গাতে ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। এমনটাই ক্ষোভের সময় কথা গুলি বলছিলেন মানিকগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা নন্দ দুলাল গোস্বামী।

বাড়ী মানিকগঞ্জ ও ঢাকার ধামরাই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বালিয়াটী গ্রামে। ছুট নিবাস, সোমবার দুপর ৩ টার দিকে বাড়ীতে পৌছালে তখনও দুপরের খাবার খান নি। খাবার শেষে তার বাড়ীর উঠানে বসেই কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নন্দ দুলাল গোস্বামীর সাথে।

মানিকগঘেঞ্জর সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী গ্রামের মৃত বীন্দ্রে কুমার এর পুত্র নন্দ দুলাল গোস্বামী মহান ১৯৭১ সালে বালিয়াটী ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের এস,্ এসসি পরীক্ষার্থী। এর আগে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবর রহমানের ভাষন সরাসরি শুনেছেন। ২৫ মার্চ এর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এর পর ২৭ শে মার্চ বালিয়াটী তে একটি মিছিল হয়। এসব দেখেই যুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

মুলত তিনি বালিয়াটী ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন অংকের শিক্ষক নূরুল আফসার খান স্যারে অনুপ্রেরণায় মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহন করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, স্যার আমাদের ব্যাচ থেকে বিভিন্ন অঞ্চলের এ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে ১৪ জনের একটি তালিকা করে। তিনি আমাদের যুদ্ধে যাবার অনুপ্রেরণা দেন। নূরুল স্যার আর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষনই আমাকে ঘরে বসতে থাকতে দেয় নি।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা হলেও আমারা ৭১ এর সেপ্টেম্বর মাসে আমার বাবার গচ্ছিত ১৫০ টাকা থেকে ৫০ টাকা চুরি করে মা- বাবা কে একটি চিঠি লিখে যুদ্ধে চলে যাই। আমরা টাঙ্গাইলের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বাহিনীর ১নং সেক্টরে রিক্রোট হই। আমাদের নাগরপুর উপজেলার লাউহাটি মাঠে আমাদের ২১ দিন ট্রেনিং শেষে আমরা যুদ্ধে নেমে পড়ি। আমরা অনেক সম্মুক যুদ্ধেও অংশ গ্রহন করি।

যুদ্ধের পর আমরা আমস জমা দেই। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর, পরবর্তী সরকার আসার পর, আমাদের মুক্তিযোদ্ধের সনদ লুকিয়ে রাখতে হয়েছে। কারন জিয়ার আমালে আমাদের থানা থেকে ধরে নেয়, বলে অস্ত্র কোথায় রেখেছেন, অস্ত্র দেন, জমা দেবার কথা বল্লে বলেন রশিদ কোথায়। মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে অস্ত্রের জমা দেওয়ার রশিদ চেয়ে চাপ দিলে আমরা তখন সনদ লুকিয়ে রাখতাম।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় তিনি আরো বলেন,  সাটুরিয়া জাহাঙ্গীর আলম নামে এক মুক্তিযোদ্ধা সাটুরিয়া হাটে সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। তিনি বলেন কয়েক বছর আগে বিজয় দিবসে আমাদের সম্মাননা দেওয়া হয় তখন উপজেলা প্রশাসন আমাদের ৩০০ টাকার প্রাইজ বন্ড হাতে তুলে দেন। তা আজও ভাঙ্গাতে পারে নি।

বছরে দুই দিবসের দিন আমাদের সম্মান দেওয়া হয়, এ যেন সুপিচ আচরণ, পরের দিন যদি সরকারী অফিসে যাই আমাদের বসতে বলা হয় না। এ মুক্তিযোদ্ধা দাবী করেন আমারা সবাই যদি মনে মধ্যে মুক্তিযোদ্ধ ধারণ করতে পারতাম তাহলে অনেক বেশী উপকৃত হতাম।

তিনি আরো জানান, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও অনেক ভোয়া মুক্তিযোদ্ধা অনলাইনে আবেদন করেছেন, খুব কষ্ট হয় এতটা বছর কতবার যাছাই বাছাই গেলে তখন আসল না , এখন কেন আসছেন । সরকার যেন সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তভুক্ত করেন তার দাবী করেন।

এ মুক্তিযোদ্ধা দাবী করেন বর্তমান সরকার ৯৬ সালে প্রথম ৩০০ টাকা করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী নির্ধারণ করেন। বর্তমানে ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন যা সত্যিই প্রসংসনীয়। কিন্ত আমলারা যেন আমাদের একটু মন থেকে সম্মান করুক এটাই কামনা করেন।

নন্দ দুলাল গোস্বামী দাবী করেন তার উপজেলায় সাটুরিয়া থানার সামনে একটি গণকবর আছে, যা ৪৬ বছরেও উদ্ধার করা যায় নি। এটি তিনি দাবী করেন।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে  তাকে রাষ্ট্র কোন জিনিসটা বেশী টানে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন , আমার মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে এটিই সবচেয়ে বেশী দামী।  

মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ১২ ডিসেম্বর/ ২০১৭।
আরও পড়ুন:

মানিকগঞ্জ- ৩, বাবার আসনেই লড়বেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ২ প্রার্থী

আরো পড়ুুন