নিজস্ব প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ: ৩০ সেপ্টেম্বর: ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানের লক্ষে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ভাষা প্রশিক্ষণ ও ইন্টারনেট ব্যাবহারের উদ্দ্যেশ্যে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলায় ৩২ উচ্চ বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করে দেয়। এসব ল্যাবে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, বড় মনিটর এবং ইন্টারনেট সংযোগসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ ব্যায় হলেও তা কাজে আসছে না কিন্ত নির্দিষ্ট শিক্ষক না থাকা এবং যথাযথ মনিটরিং না করায় ।
স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যাবহারে পারদর্শী করে তুলতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলায় ৩২ টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করে। ২০১৬ সালের ১৩ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে ১ম পর্যায়ে মানিকগঞ্জে ২৫ টি উচ্চ বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব উদ্ভোধন করেন। পরে আরও ৭টি ল্যাব স্থাপন করা হয়। প্রতিটি ল্যাবে ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, বড় ডিসপ্লেসহ আধুনিক সরঞ্জাম দেওয়া হয়।
এসব ল্যাব ২ বছর পার হতে চল্লেও প্রতিদিন খোলা হয় না। ৬ষ্ঠ- ১ম শ্রেণী পর্যন্ত আইসিটি বিষয় থাকলেও কোন কোন শিক্ষার্থী ল্যাপটপ চালু ও বন্ধ করতেই পারে না। কেউ ইংরেজি লিখতে পারলেও ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে পারে না । এ ল্যাবে গিয়ে দেখা যায় এর কার্যক্রম বন্ধ।
সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়নে কর্নেল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সব ক্লাসে ক্লাস চল্লেও ল্যাব বন্ধ। সংবাদকর্মীদের খবর টের পেয়ে দ্রুত ল্যাব চালু করতে মরিয়া হয়ে পড়ে শিক্ষকরা। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস হয় দাবী করলেও শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ক্লাস নেওয়ার কোন পরিবেশ দেখা করা যায় নি। শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেন কোন ক্লাস হয় না।
এ ব্যাপারে কর্নেল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী রেশমা আক্তার জানান, আমি এ বছর মাত্র ৪/৫ টি ক্লাস পেয়েছি। কোন রকমে ইংরেজীতে লিখতে পারলেও বাংলা লিখতে পারি না।
একই ক্লাসের মিথিলা আক্তার বলেন, বিগত এক মাসে আমরা কোন শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে কোন ক্লাস করতে পারি নাই। তারপরও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কম্পিউটারে টাইপ করতে পারলেও ইনটারনেট ব্যাবহার করতে পারি নাই।
একই উপজেলার ফুকুরহাটি – কান্দপাড়া মজিবর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র রিহৃয় মৃদা বলেন, আমরা আর কয়েক মাস পর স্কুল থেকে বিদায় নিব, অথচ আজকে ১ম শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে আসলাম। আমি ল্যাপট চালু বা বন্ধ করতে পারি না।
মানিকগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস জানান, ২০১৬ সালের ১৩ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে ১ম পর্যায়ে মানিকগঞ্জে ২৫ টি উচ্চ বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব উদ্ভোধন করেন। পরে আরও ৭টি ল্যাব স্থাপন করা হয়। বর্তমানে মানিকগঞ্জ সদরে ৬ টি, দৌলতপুরে ৬টি, হরিরামপুরে ৬টি, সাটুরিয়ায় ৪ টি, সিংগাইরে ৪ টি, ঘিওরে ৩টি এবং শিবালয়ে ৩টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব রয়েছে।
মানিকগঞ্জে এসব ল্যাব শুধু মফস্বলে নয় শহরেও নিয়মিত কোন ক্লাস না হয় না। ফলে অনেক ল্যাবের ল্যাপটপ ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার কোন কোন শিক্ষকরা ল্যাপটপ বাড়িতে নিয়ে ব্যাবহার করছে।
তাছাড়া এ ল্যাব পরিচালা না করার জন্য কোন নির্দিষ্ট শিক্ষক না থাকায় কেটি টাকা ব্যায়ে এ ল্যব কোন কাজে আসছে না। বলে দাবী করছেন অনেক শিক্ষকরা ।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি – কান্দপাড়া মজিবর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মো.আসাদুজ্জামন বলেন, আমি প্রতিদিন ৫-৬ টা ক্লাস নেই বিভিন্ন ক্লাসে। ফলে আমি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে নিয়মিত ক্লাস নিতে পারি না। শুধু মাত্র এ ল্যাবের জন্য নির্দিষ্ট কোন শিক্ষক থাকত তাহলে এ ল্যাব কাজে আসত।
একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থদের নিয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে নিয়মিত ক্লাস হয় বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ২ বছরে আমরা এ ল্যাবের মাধ্যমে সকল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযোক্ত করেছি। আগামী বছর থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেওয়া হবে দাবী করেন।
সরকার যেখানে ফিলান্সিং এ উৎসাহ দিচেছন, সেখানে এ ল্যাবে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যাবহার শিখতেই পারছে না। ফলে সরকারের এ মহতী উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে
মানিকগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমদের কর্মকর্তাসহ আমি নিজে বিভিন্ন বিদ্যলয় পরিদর্শন করার সময় শেখ রাসের ডিজিটাল ল্যাব কে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কোন ল্যাব যদি সঠিক ভাবে ব্যাবহার না করে তাহলে সেই বিদ্যালয়ে বিরুদ্বে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলায় কোটি টাকা ব্যায়ে ৩২ টি ডিজিটাল ল্যাব শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন শিক্ষার্থী ও অবিভাবকগন।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
আরও পড়ুন: