মানিকগঞ্জের নর সুন্দরদের দিন কাল

মোহাম্মদ হাসান ফয়জী ॥ মানিকগঞ্জের নর সন্দুর রা ভাল নেই। হাট বাজার ত বটেই রাস্তা ঘাটের মোড়েও সেলুনের পাদুর্ভাব। ফলে হাট বাজারে বটতলার প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরার উপর বসিয়ে যে নর সুন্দররা চুল ও সেভ কামাত তাদের নিকট আর মানুষ এখন আর যেতে চায় না।

সেলুন আছেই এখন মানিকগঞ্জ শহর ছাড়াও জেলার ৭টি উপজেলা শহরে ছেলেদের পার্লার পর্যন্ত বসেছে। সেুলনের ফেনের বাতাস, চাক চিক্কের কারনে মানুষ এখন আর বাহিরে বসে নর- সুন্দর নিকট চুল কাটান না। তার পরও বাপ- দাদার এ পেশায় বাধ্য হয়ে জীবিকার টানে রয়ে গেছেন অনেকেই।

জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটী বাজারের বটতলায়  সরেজমিনে গিয়ে কথা হয়, পরিতোষ ও বাদল শীল দুই ভাই মাটির উপর মাত্র ফিরা বসিয়ে কাজ করছে। এক ভাই একটি শেভ করছে, আরেক ভাই খদ্দেরের অপেক্ষায় আছেন। শেভ করতে করতে কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সংগে। শেভ শেষ হওয়ার পর আরেক জন আসলেন চুল কাটাতে।

বাদল শীল ছোট হলেও দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশী সময় ধরে হাট বাজারে গিয়ে চুল কাটাচ্ছেন, পাকিস্তান আমলে সাটুরিয়া হাটে গিয়ে সূর্য উঠার সংগে সংগে কাজ শুরু করতাম চলত সন্ধা পর্যন্ত । দুপরে খাবারের সময় পেতাম না কাস্টমারের জন্য, এত চাপ ছিল। তখনকার সময় ২ আনায় সেভ এবং ২৫ পয়সায় চুল কাটালেও দিন শেষে ২৫-৩০ টাকা কাজ করতাম।

কিন্তু এখন সেলুনের প্রভাবে মানুষ আমাদের কাছে কাজ করান না, কিছু নির্দিষ্ট লোক আমাদের নিকট কাজ করান। প্রতিদিনি বালিয়াটী বাজারে দুপর ১২ টা পর্যন্ত এবং সপ্তাহে সাটুরিয়া বাজারে একটি হাট করেন। বাজারে সর্বোচ্চ ১৩০-১৫০  টাকা হাটের দিন ২০০-২০ টাকা কাজ করা যায়। হাটের দিন আবার ১০ টাকা মালি ও ১০ টাকা খাজনা দিতে হয়।

বাদল শীল বলেন, দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ছোট মেয়ে গতবার এস, এস,সি পাশ করার পরও টাকার অভাবে আর কলেজে পাঠাতে পারে নি। কোন রকম খেয়ে না খেয়ে এ পেশায় পড়ে আছেন।

পরিতোষ শীলের কাছে শেভ করতে আসা শুকলাল জানান, তাদের বাবার কাছেও আমরা কাজ করাতাম । শেভ করলাম মাত্র ৫ টাকা  দিয়ে । বাদল শীলের নিকট চুল কাটতে আসা আনন্দ জানান, সেলুনে চুল কাটালে লাগে ৪০-৫০ টাকা এখানে মাত্র ২০ টাকা দিয়ে চুল কাটানো যায়, আর চুল কাটানো সুন্দর হয়। তাই আমি নিয়মিত তাদের নিকটই কাজ করাই।

পরিতোষ শীল জানান, আমাদের চুল পাক ধরলেও এখান কার ছেলে মেয়েরা চুল কাটাতে চায় না। ছোট বাচ্চাদের এখানে নিয়ে  আসলে বলে সেলুনে যাব। ১০ বছর আগেও এই বালিয়াটী বাজারে দিনে ৩০০-৪০০ টাকা কাজ করতে পারতাম। কিন্ত এখন ৫ টাকায় শেভ আর ২০ টাকা চুল কাটার রেট থাকলওে আমারা কাষ্টমার পাচ্ছি না। বাপ দাদার কাজ অন্য কোন কাজ পরি না , তাই বাধ্য হয়েই এ পেশায় রয়ে গেছি।

মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ২৭ জুলাই/ ২০১৭ ইং।

আরো পড়ুুন