এস.কে.এম. হেদায়েত উল্লাহ্ঃ আজ ১৫ই আগস্ট।প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী।সারাদেশে কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক দিবস পালন চলছে।অবশ্যই এটি একটি ভালো দিক।হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির এমন করুণ পরিণতি মেনে নেওয়ার মতো নয়।
যে মহান নেতার উপমা দিতে গিয়ে আরেক কিংবদন্তি নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন,”আমি এভারেস্ট দেখিনি,কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি।আমার আর এভারেস্ট দেখার প্রয়োজন নেই।বঙ্গবন্ধুকে দেখার মাধ্যমে আমার এভারেস্ট দেখার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানীর এক পত্রিকা লিখেছিল,”শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুইয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায়।চতুর্দশ লুইয়ের মতো তার জনপ্রিয়তা এতোই বেশি যে তিনি এ দাবি করতেই পারেন যে,আমিই রাষ্ট্র।”
আরেক বিখ্যাত ও শোষিত মানুষের নেতা ইয়াসির আরাফাত বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছিলেন,”আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হ্নদয় বঙ্গবন্ধুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।”
এ উক্তিগুলো থেকে আমরা বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্ব,লৌহ কঠিন মনোবল আর পরম মমত্ববোধ ও জনপ্রিয়তার পরিচয় পাই।
কিন্তু বর্তমান সময়ে খুব কষ্ট হয় যখন দেখি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন জঞ্জালে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।তাই,স্বাভাবিকভাবেই দলটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছে। বঙ্গবন্ধুর প্রাণের ও যত্ম করে নিজের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যে সংগঠন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে সেই সংগঠন আজ কলুষিত গুটিকয়েক মানুষরুপী দানবের জন্য।জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ভাষায়,আওয়ামী লীগকে ডুবানোর জন্য বর্তমান ছাত্রলীগই যথেষ্ট।কথা নিতান্ত অমূলক নয়,দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষন,চাঁদাবাজি,টেন্ডারবাজি প্রভৃতি অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগের নাম।
যে ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর ঘোরবিরোধী ছিল,স্বাধীনতা উত্তর সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কটুক্তি করেছে,বঙ্গবন্ধুর চামড়া-হাড় দিয়ে ঢোল ও ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছে সেই আজ বঙ্গবন্ধুর দলের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন তখন হ্নদয়ের মধ্যে আশঙ্কা মোচড় দিয়ে ওঠে।তখন মনের মাঝে প্রশ্ন জাগে,যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন?
আজ দেশ ভেসে যাচ্ছে বন্যার পানিতে।উত্তরাঞ্চলে ৩ দিনে ৩০ জনের অধিক মানুষের মৃত্যুতে মানুষের মাঝে চাপা কান্না।ঘরহীন,আশ্রয়হীন হয়ে হাজার হাজার মানুষ হাহাকার করছে।ফ্লাইট জটিলতায় অনেক হাজী টাকা দিয়েও হজ্জে যেতে পারছে না।যদিও আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি, তার সম্পর্কে গভীরভাবে ভালো করে জানিও না,তবে যতটুকু জেনেছি তার ভিত্তিতেই আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি,আজ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে উত্তরাঞ্চলের বানভাসী মানুষের কাছে ছুটে যেতেন,এয়ারপোর্টের হাহাকাররত হজ্জ গমনেচ্ছুদের কাছে ছুটে যেতেন।
আর তার দল বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও দুর্দশায় জর্জরিত জনগণের কথা না ভেবে ষোড়শ সংবিধান সংশোধনের বাতিলের রায় নিয়ে ওঠে পড়ে লেগেছে।বুকের কষ্ট বুকে চেপে এটাও মেনে নেয়া যায়। কিন্তু যখন তারই দলের একজন মন্ত্রী বলেন,”এদেশ স্বাধীন না হলেও আমরা পার্লামেন্টে থাকতাম,দাপটের সাথেই থাকতাম।” তখন হ্নদয়ে প্রশ্ন জাগে, যার মনে বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে সে কীভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক-বাহক হয়?
আর হ্নদয়ে মোচড় দিয়ে ওঠে সেই প্রশ্ন,আজ যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন?”
মানিকগঞ্জ২৪.কম/১৫ই আগস্ট/২০১৭