ভর্তি পরীক্ষাঃসফলদের পেছনের গল্প-১

এস.কে.এম. হেদায়েত উল্লাহঃ
রনজু আক্তার।মানিকগঞ্জের সিংগাইরের মেয়ে।পড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে।
এতদূর আসা তার জন্য সহজ ছিল না মোটেও।তার সাফল্যের সেই পেছনের গল্পটি তুলে ধরে মানিকগঞ্জের শিক্ষার্থীদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্য মানিকগঞ্জ২৪.কম এর মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার।সে লক্ষ্যে এস.এস.সি. ও এইচ.এস.সি. তে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন।হতাশ হলেও ভেঙে পড়েননি তিনি।হাইস্কুল থেকেই গণিতের প্রতি ছিলো অন্যরকম একটা টান।সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগরের এ-ইউনিটে পরীক্ষা দেন তিনি।ঢাবিতে না হলেও জাহাঙ্গীরনগরে পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান প্রথমবারেই।এখানে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমদিকেও অনেক হতাশ ছিলেন।ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হলো না আবার অন্যদিকে গণিতও পেলেন না।তবে ক্লাস শুরু করার পর অনুধাবণ করতে শুরু করলেন তিনি সঠিক জায়গাতেই আছেন।হতাশ হওয়ার কিছু নেই।পদার্থবিজ্ঞানে এতোটাই মজে গেলেন যে মেডিকেল সেকেন্ড টাইমের জন্য প্রিপারেশন নেয়া বন্ধ করে দিলেন,এমনকি পরীক্ষাও দিলেন না!

এখন তিনি মনে করেন,বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হলেই আমাকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে আমাদের এ ধারণা থেকে বের হয়ে আসা উচিত।ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের বাইরেও যে আরো সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা আছে সে বিষয়েও আমাদের নজর দেয়া উচিত।

মানিকগঞ্জ থেকে তুলনামূলক কম শিক্ষার্থী দেশসেরা বিভিন্ন মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন,
“এর পেছনে অনেক গুলা কারন থাকতে পারে।যেমন,আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ দক্ষ শিক্ষক নেই,শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসও খুবই কম। ওরা পরীক্ষা দেয়ার আগেই মনে করে, না আমি পারবো না, আমাকে দিয়ে কিছু হবে না।তাছাড়া উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে।আরো একটা সমস্যা হলো,যেহেতু মানিকগঞ্জ বৃহত্তর ঢাকার অংশ,তাই অনেক শিক্ষার্থীই ঢাকার বাইরে যেতে চায় না বা তাদের বাবা-মা যেতে দিতে চায় না।মেয়েদের জন্য চ্যালেঞ্জটা আরো বেশি।”
এ থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে  জিজ্ঞেস করলে তিনি আরো বলেন,”সর্ব প্রথম আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আরো উন্নত ও যুগোপযোগী করতে হবে।দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।আমাদের এই মানসিকতা দুর করতে হবে যে  ঢাকার বাইরের ভার্সিটিগুলোতে ভালো পড়াশোনা হয় না।”

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কীভাবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত?  এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,
“আমার মনে হয় ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতির  জন্য    মূলবইয়ের (টেক্সটবুক) উপর পুরোপুরি দখল থাকাটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।বেসিক সম্পর্কে ভালো ধারণা  থাকলে প্রশ্ন যেমনই হোক তার চান্স কেউ আটকাতে পারবে না। আরো ভালো প্রস্তুতিরজন্য প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান করা যেতে পারে।”

এক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন,
“আমাদের এই সময়ে দেখা যায় অভিভাবকেরা  তাদের ছেলেমেয়েদের একসাথে মেডিকেল কোচিং,ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং একসাথে করাচ্ছে।আবারটিউটর রেখেও পড়াচ্ছে।এতকিছুর ফাঁকে সেই শিক্ষার্থীর নিজের পড়ার জন্য কোনো সময় পাচ্ছে না।এজন্য অনেক সময় দেখা যায় অনেকে পরীক্ষার হলে গিয়ে  ছোটখাট প্রশ্নের উত্তরও ভুলে যাচ্ছে, আবার অনেকে পরীক্ষার সময় অসুস্থও হয়ে পড়ে।এ ব্যাপারে তাদের আরো সচেতন হওয়া দরকার।আরো একটা ব্যাপার হলো যে,অন্যের সাথে তুলনা না করা আর কোনো ব্যাপারে চাপ না দেয়া যে, তোমাকে এখানে চান্স পেতেই হবে, এই সাবজেক্টেই পড়তে হবে।বাবা-মায়ের সাপোর্ট একজন শিক্ষার্থীর সফল হওয়ার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি ভুমিকা পালন করে বলে আমি মনে করি।তাই,ছেলে-মেয়েকে নিজের পছন্দের বিষয়েও বাবা-মার খোঁজ নেয়া উচিত।আর তাকে সে বিষয়েই উৎসাহিত করা উচিত।”


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

বর্তমান অভিভাবকমাত্রই চান তার সন্তান ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,
“এটা খুবই দুঃখজনক যে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমাদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এগুলোকেই অধিক সম্মানজনক, ডিমান্ডিং পেশা হিসেবে দেখে।তাই তারা চায় তাদের সন্তান ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারই হোক।তবে আমার মনে হয় এভাবে চাপ না দিয়ে করে যার যেটা করতে ভাল লাগে তাকে সে ব্যাপারে উৎসাহিত করা, তার পাশে থাকা।কারণ একটা মানুষ তখনই কোনো কাজে সফল হয় যখন সে তা মন থেকে করে।”

পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রী হিসেবে সাবজেক্টটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?একজন শিক্ষার্থীর কেন পদার্থবিজ্ঞানে পড়া উচিত পড়া উচিত?

“পদার্থবিজ্ঞানকে বলা হয় “দ্য ফাদার অব সাইন্স”।এটা এমন একটা সাবজেক্ট যা পড়লে প্রকৃতির প্রত্যেকটা ঘটনার ব্যাখ্যা জানা সম্ভব।কেউ যদি পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানতে চায় তাহলে তার অবশ্যই পদার্থবিজ্ঞান পড়া উচিত।”

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিশেষ কোন কথা?

“ভর্তিচ্ছুদের উদ্দেশ্য একটাই কথা বলবো-সৃষ্টিকর্তার উপর আস্থা রাখো,নিজের উপর বিশ্বাস রাখো, পরিশ্রম করো সাফল্য আসবেই।”

মানিকগঞ্জ২৪.কম/এস.কে./১৪ই মে/২০১৮ইং

আরো পড়ুুন