![]() |
লেখক: মো: আব্দুল মালেক |
মোঃ আব্দুল মালেক: গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ পাস হয়। এই আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন, কোন বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশক্রমে এবং মাতা-পিতার বা প্রযোজ্যক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ে সম্পাদিত হলে তা এই আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না।’ অর্থাৎ এই আইনের মধ্য দিয়ে শিশুর বিয়ে বৈধতা পাবে।
‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ কী এবং কত কম বয়সে বিয়ে করা যাবে বা বাবা-মা ছাড়া আর কারা অভিভাবকত্ব দাবি করতে পারবেন তা এই আইনে স্পষ্ট করা হয়নি। আইনে উল্লেখ না থাকলেও, ধর্ষণের শিকার হয়ে বা প্রেমের সম্পর্কের কারণে মেয়ে শিশুর অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়াকে বিশেষ ক্ষেত্রে আইনের বিশেষ বিধান রাখার পক্ষে যুক্তি করেছেন সরকার। সেক্ষেত্রে মনে হচ্ছে ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করে ধর্ষিতার সাথে বিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজছে সরকার।
বাংলাদেশে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৯ শতাংশ মেয়ের এবং ১৮ বছরের মধ্যে ৭৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের গড় হার ৬৬%। ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের এই হার বিশ্বে সর্বাচ্চ্। এই বিবেচনায় বাল্যবিয়ের হারে শীর্ষে বাংলাদেশ।
ইউনিসেফের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ১৫ বছরের কমবয়সী মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের হার সারা বিশ্বে সর্বোচ্চ৷ বাংলাদেশে শতকরা ২৯ ভাগ মেয়েরই বিয়ে হয় ১৫ বছরের কম বয়সে৷ এর মধ্যে শতকরা দুই ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১১ বছরের কম বয়সে৷ প্রশাসনের অগোচরেই স্থানীয় তথাকথিত শিক্ষিত মোড়লদের পূর্ণ সহযোগিতার ফলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন, এমনকি খুব অল্প বয়সে তা হচ্ছে৷ প্রশাসন খবর পেয়ে স্থানীয়ভাবে কাউকে বিবাহ বন্ধের দায়িত্ব দিলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কনের গোষ্ঠির লোকজন ও স্থানীয় মোড়লগন প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে, এমন প্রমান এদেশে ভুড়ি ভুড়ি রয়েছে।
প্রশাসনের যেহেতু প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে ঘুরে এসব খবর নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের যতেষ্ট অভাব রয়েছে, তাই, বর্তমান সরকারের একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক“ কমিউনিটি পুলিশিং”ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
বাল্য বিবাহের কারণগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অসচেনতা, সামাজিক কুসংস্কার, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদিই প্রধান।
এই সব কারণের বেশির ভাগই পুলিশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয় বলে পুলিশের পক্ষে এই সব কারণ দূর করা সম্ভব নয়। তাই, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে কার্যকর করার মাধ্যমে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কতিপয় বিষয় আশু সমাধান করতে পারে।
কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, যেমন- ছোট ছোট সভা, রেলি, বিলবোর্ড স্থাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রতিরোধমূলক মনোভাব তৈরি করা যেতে পারে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে দারিদ্র সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপক প্রবণতাও অনেক মেয়েকে এর ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে৷ এসব দুর্যোগ তাদের পরিবারকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যা পরিবাগুলোকে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে৷
“বাল্য বিবাহ বাংলাদেশে এক মহামারী হয়ে উঠেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যা শুধু আরও খারাপের দিকে যায়”-বলেছেন নারী অধিকার বিষয়ক সিনিয়র গবেষক হিদার বার৷ তিনি আরও যোগ করেন-“বাংলাদেশ সরকার কিছু ঠিক কথা বলেছে, কিন্তু মেয়েদের বিয়ের বয়স কমিয়ে আনার যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা ভুল বার্তা দিচ্ছে৷ সরকারের উচিত মেয়েদের আরও একটি প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়ার আগেই সক্রিয় হওয়া৷”
লেখক: মোঃ আব্দুল মালেক, সচিব বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ।
এ বক্তব্য শুধু লেখকের একান্ত মানিকগঞ্জ২৪.কম এ নয়।