মানিকগঞ্জ২৪, প্রতিবেদক, শিবালয়: মানিকগঞ্জে খুচরা বাজারে কাচা মরিচ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও কৃষক পাচ্ছেন ৬ টাকা কেজি। ফলে এ কাচা মরিচের সাথে সংশ্লিষ্ট আড়ৎদারসহ কয়েক হাজার কৃষক পরিবার লোকসানের মুখে পড়েছে। মানিকগঞ্জের ৭ টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্ত বিগত কয়েক বছর ধরে মরিচের দাম না পাওয়াতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটছে না।
শিবালয় উপজেলার বরংগাইল বাজার সহ অন্তত ছোট বড় মিলে প্রায় ১০ টি মরিচের বড় হাট রয়েছে মানিকগঞ্জে । এসব হাটে প্রায় শতাধিক মরিচের মহাজন আছে যারা এই মৌসুমে শতাদিক মুন মরিচ কিনছে। কিন্তু কাংক্ষিত দাম না পাওয়াতে এ ব্যবসার সাথে জড়িত সবাই লোকসানে হচ্ছে।
তবে কৃষকরা অভিযোগ করছেন মানিকগঞ্জের আরতে ১০-১২ টাকা কেজি পাইকারী বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আমরা উৎপাদন করে যে লাভ পাই না মধ্যভোগীরা কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ডাবল লাভবান হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ – সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ৭টি উপজেলার ৬৫ টি ইউনিয়নের বৃস্তীর্ণ এলাকায় ৪ হাজার ৬৩৬ কেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের আবাদ লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া ভাল থাকায় মরিচের ফলন হয়েছে বাম্পার।
জেলার সবচেয়ে বড় মরিচের হাট শিবালয় উপজেলার বরংগাইল বাজার। শুক্রবার এ হাটে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ১১-১২ টাকা। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্রি হয়েছে ৮-১০ টাকায়। কৃষক ও মহাজনরা জানান বিগত কয়েক বছর ধরেই মরিচের দাম পাওয়া যাচ্ছে না ।
শিবালয়ের মহাদেপর গ্রামে মরিচ চাষী মোঃ সাইফুল জানান, প্রতি কেজি মরিচ ক্ষেত থেকে উঠাতে ৫ এবং হাটে আনতে খরচ হয় ১ টাকা। শুক্রবার ৭ মুন কাচাঁ মরিচ বিক্রি করেছি ১২ টাকা। কেজি ধরে । উৎপাদন খরচ ছাড়াই শুধু হাটে আনা খরচ বাদ দিলে কেজি প্রতি ৬ টাকা পেয়েছি। এভাবে আর কত দিন লোকসান দিতে হবে উল্টো প্রশ্ন করেন।
বরংগাইল মরিচের হাটের মহাজন তাজউদ্দিন জানান, আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে এ হাট থেকে মরিচ কিনে কমিশনের মাধ্যমে কাঁচা মরিচে ব্যবসা করে আসছি। শুক্রবার ২০০ মনু মরিচ কিনেছি ১১-১২ টাকা কেজি ধরে। এ মরিচ আবার বস্তা করে পরিবহনে উঠাতে আমাদের অরো খরচ হয় ১-২ টাকা । কিন্ত এ বছর মরিচের দাম কম হওয়াতে কৃষকসহ আমারা সবাই লোকসান হচ্ছে।
বরংগাইল মরিচের আরৎ এর নেতা মোঃ জহির হোসেন জানান, ২ বছর আগেও মানিকগঞ্জের উৎপাদিত মরিচ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হত। কিন্ত বাংলাদেশে থেকে মরিচ রপ্তানি করতে বিমান ভাড়া বেশী পড়াতে প্রতিবেশী দেশ থেকে ঐ ব্যবসায়ীরা মরিচ রপ্তানি করছে। আমার কয়েকজন মরিচ রপ্তানি কম্পানির লোক জানিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে প্রতি কেজি মরিচ মালশিয়া নিতে খরচ হয় ৮০ টাকা আর ভারত থেকে নিলে খরচ পড়ে ৪০ টাকা। তাই গুনগুত ও চাহিদা থাকলেও আমাদের দেশ থেকে মরিচ রপ্তানি করা যাচ্ছে না।
বরংগাইল বাজার সমিতির সভাপতি আব্দুল মজিদ জানান, এ মরিচের হাটে ছোট বড় মিলে প্রায় ৩০ জন মহাজন আছে, গড়ে প্রতিদিন এ বাজার থেকেই ৪ হাজার মুন মরিচ কিনছেন আরৎদারগণ। এ মরিচ জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্ত সারা দেশে মরিচের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় মরিচে দাম কমে গেছে।
মরিচ চাষীরা জানান, কিছু অসাধু আরৎদারে কারসাজিতেই মরিচের দাম আমরা পাচ্ছি না। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন হাট বাজারে একমাস যাবৎ ৪০ টাকা কেজিতে কাাঁচা মরিচ বিক্রি হলেও রহস্যজনক ভাবে আমরা পাচ্ছি ১০-১১ টাকা। উৎপাদন খরচ ও ক্ষেত থেকে বাজারে আনতে পরিবহন খরচ বাদ দিলে লাভ হয় না।
এ ব্যপারে মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মোঃ আলিমুঞ্জামান মিঞা জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশী হওয়ায় মরিচের দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। পাইকারী বাজারে ১০-১২ টাকা কেজিতে কৃষকদের বিক্রিত মরিচ কিভাবে খচরা বাজারে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কিছু অসৎ ব্যবাসায়ীদের জন্যই কৃষকদের চেয়ে মধ্যভোগীরা লাভবান বেশী হচ্ছে।