বালিয়াটী জামিদার বাড়ী পর্যটন বিকাশে প্রধান বাধা যোগাযোগ ব্যবস্থা

হাসান ফয়জী: বাংলাদেশের সর্ববৃহত আয়তনের বালিয়াটী জামিদার বাড়ী পর্যটন বিকাশে প্রধান বাধা যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঢাকা – থেকে সাটুরিয়া পর্যন্ত সড়ক ব্যাবস্থা ভাল থাকলেও মানিকগঞ্জ থেকে সাটুরিয়া- বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক অবস্থা নাজুক রয়েছে। অপরদিকে ঢাকা থেকে সাটুরিয়া গামী ভালমানের বাস না থাকায় পর্যটন বিকাশে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে ।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় বালিয়াটী গ্রামে ৫.৮৮ একর জমির উপর বালিয়াটী জমিদার বাড়ী অবস্থিত। এ জমিদার বাড়ীটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের জমিদার বাড়ী। ঢাকার খুব কাছে অবস্থিত হওয়ার পরও এটি ভাল সড়ক যোগাযোগ, ভাল মানের বাস সার্ভিস,  ভাল খাবার হোটেল এবং রাতে থাকার কোন ব্যাবস্থা না থাকায় এটি পর্যটনের বিকাশে বাধা গ্রস্ত হচ্ছে।

বালিয়াটী জমিদার বাড়ী বাংলাদেশের খ্রিষ্টীয় উনিশ শতকের দিকে অপূর্ব নির্দশন হিসেবে স্থাপন করেন বালিয়াটীর তৎকালিন জমিদার গোবিন্দ রাম সাহা। তিনি ছিলেন খ্রিষ্টীয় আঠার শতকের বড় মাপের একজন লবন ব্যাবসায়ী ছিলেন।

বালিয়াটী জমিদার বাড়ীটি বর্তমানে প্রতœত্ব অধিদপ্তর অধিনে পরিচালিত হচ্ছে। বালিয়াটী জমিদার বাড়িতে সাতটি খন্ডে বিভক্ত বিভিন্ন স্থাপনা যাতে প্রায় দু শতাধিক কোঠা বা রুম রয়েছে। বাড়ির উত্তরে দিকে রয়েছে ছয়ঘাটলা যুক্ত একটি পুকুর। জমিদার বাড়িটির চারদিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।  দক্ষিণ প্রাচীরে পাশা- পাশি একই ধরনের চারটি খিলান দরজা। প্রতিটা বড় গেটের উপর রয়েছে একটি করে সিংহ। প্রতিটি ভবরে সামনে রয়েছে কাঠের সিড়ি, লোহার বিম, ঢালাই লোহার পেচানো সিঁড়ি, জানালায় রয়েছে রঙ্গিন কাঁচ। রংমহলের ভিতরে রয়েছে বিশাল আকৃতির বেলজিয়াম আয়না, কারুকার্যখচিত দেয়াল  ও আকর্ষণীয় ঝাড়বাতি। কথিত রয়েছে এসব স্থাপনা তৎকালিন সময়ে লন্ডন থেকে কারিগর এনে তৈরি করেন।

এ ব্যাপারে বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর কেয়ারটেকার ইব্রাহিম জানান, শীত মৌসুমের শুরু থেকেই দেশী বিদেশী পর্যটকদের ভীর বাড়ে। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার থাকে উল্লেখযোগ্য বেশী চাপ থাকে। জমিদার বাড়ীর নিকটেই , মিনি পার্ক, ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও রামকৃষ্ণ সংলগ্ন বালিয়াটী উত্তর মাঠ থাকাতে ওখানে পর্যটকরা বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করে। খুব অল্প খরচে তারা এ ব্যাবস্থা করার কারনে এ জমিদার বাড়ী সবার পছন্দের হয়ে উঠেছে।

বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর টিকেট মাষ্টার মোঃ মিজানুর রহমান জানান,  ছোট দের জন্য ৫ টাকা, বড়দের ২০ টাকা, সার্কযুক্ত দেশের  জন্য ১০০ টাকা এবং এর বাইরের নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা টিকেট মূল্য ধরা হয়েছে। প্রতিদিন শত শত পর্যটকরা এখানে ভিড় করে। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার কয়েক হাজার পর্যটকরা ছুটে আসে এখানে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে দুই থেকে আড়াই লক্ষাধিক টাকা এবং দুই ইদ, পহেলা বৈশাশসহ সব উৎসবে প্রায় দুই লক্ষ টাকা করে টিকির বিক্রি করা যায়।

তবে বালিয়াটী জমিদার বাড়িতে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও এতে প্রধান বাধা হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভাল না থাকায়। গাবতলি থেকে সাটুরিয়া বাজার পর্যন্ত সড়ক ব্যাবস্থা ভাল থাকলেও সাটুরিয়া- বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর ৩ কিলোমিটার সড়ক অবস্থা খুবই নাজুক। এ সড়কটি খানা খন্দে ভরে চলাচলের সম্পুর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অপরদিকে গাবতুলি থেকে সাটুরিয়া সড়কে ভাল যানবাহন নেই। ফলে মাত্র দেড় ঘন্টার সড়কে এসবি লিংক ও জনসেবা নামক বাসে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।

আাবার মানিকগঞ্জ থেকে বালিায়াটী জমিদার বাড়ী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়লেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে বালিয়াটী জমিদার বাড়ীতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিরম্বনায় পড়তে হয়।

বালিয়াটী জমিদার বাড়ীর এলাকার অরবিন্ধ চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের এ জমিদার বাড়ী কে কেন্দ্র করে অনেক দোকান ঘরে উঠলেও ভাল মানের খাবার হোটেল ও থাকার কোন ব্যাবস্থা নেই। ফলে এখানে পর্যটকরা এসে খাবার ও থাকা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম খান, রবিন বলেন, আমরা ১৫ জন সহপাঠী নিয়ে এ জমিদার বাড়ীতে আসলাম। সব ভাল লেগেছে কিন্তু দুপুরে ক্ষেতে গিয়ে এখানে ভাল কোন খাবার হোটেল পেলাম না।

বালিয়াটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকাকলিন কয়েক কোটি টাকার সংস্কার কাজ হয়েছে এখানে। এ জমিদার বাড়ির এলাকায় আইন শৃংখলা অবস্থা খুবই ভাল। তবে এখানে ভাল মানের খাবার হোটেল ও থাকার ব্যবস্থার জন্য উপজেলা ও জেলা প্রশাষনের নিকট আমি লিখিত ভাবে জানান।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস, এম ফেরদৌস বলেন, কিছুদিন আগে পর্যটন সচিব ময়োদয় বলিয়াটী জমিদার বাড়ী পরিদর্শনে এসেছিলেন। তখন এ জমিদার বাড়ী থেকে বালিয়াটী ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ওয়ার্ক ওয়ে  ও সিবিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য ৭০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। এটি এই অর্থবছরের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে। আর দ্রুত এখানে খাবার হোটেও ও থাকার ব্যবস্থার জন্য দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মানিকগঞ্জ২৪/ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
আরও পড়ুন:

মানিকগঞ্জের নর সুন্দরদের দিন কাল

আরো পড়ুুন