৯০’এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলন কারিদের জাতির নিকট ক্ষমা চাওয়া উচিত

মিজানুর রহমান মিরু, ২২ নভেম্বর :

১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী তথাকথিত আন্দোলন ছিল একটি চলমান উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র।

একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন দেশ কে যখন পল্লীবন্ধু আলহাজ্ব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যস্ত,যখন বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন, ১৯টি মহকুমা কে ৬৪ টি জেলায় রুপান্তর করে ডিসি অফিস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সার্কিট হাউস নির্মাণ করলেন, শাসন ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে জনগণের দারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৪৬০ টি উপজেলা পরিষদ গঠন করলেন।

প্রতিটি উপজেলায় আদালত স্থাপন করলেন, প্রতিটি উপজেলায় ১৭ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ করলেন। ইউনিয়ন থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে জেলা, জেলা থেকে রাজধানীর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ কে বিশ্বের মানচিত্রে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত করেলেন।

দ্রব্য মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখলেন। পল্লীবন্ধু’র শাসন আমলে দূর্নীতি ছিল না, দুঃশাসন ছিল না, নিপিড়ন – নির্যাতন ছিন না। মানুষ যখন পল্লীবন্ধুর সুশাসন, সুবিচারের সুফল ভোগ করতে লাগলেন,যখন পল্লীবন্ধু গনতন্ত্রের বীজ বপন করলেন – ঠিক তখন- একটি মহল দেশের উন্নয়নের চাকা বন্ধ করার জন্য, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের অর্থায়নে কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের ছাত্র সংগঠনগুলো জননন্দিত এবং জনপ্রিয় নেতা পল্লীবন্ধুর বিরুদ্ধে জনগণকে সৈরাচারের তকমা পড়িয়ে ঢাকা ভিত্তিক একটি তথাকথিত আন্দোলন শুরু করেন।

যে আন্দোলনে সারাদেশের মানুষের সম্পৃক্ততা ছিল না। ডাঃ মিলন এবং নুর হোসেন ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলের নোংরা রাজনীতির স্বীকার।

পল্লীবন্ধুর হাতে কোন রক্তের দাগ ছিল না, তিনি ছিলেন কোমল হ্নদয়ের মানুষ,তাই তিনি ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে ধরে রাখতে চায় নি বলে গনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর কোন রক্তপাত না ঘটিয়ে শান্তিপূর্ন ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

জেল, জুলুম, মামলা, হামলার মধ্য দিয়ে অন্ধকার কারাগারে বসে ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পাঁচ পাঁচটি আসনে নিজে জয়লাভ করে প্রমাণিত হয়েছে পল্লীবন্ধু সৈরাচার নয়,উনি ছিলেন জননন্দিত নেতা।

আমি বিস্তারিত লিখতে চাই না।কারন, পল্লীবন্ধুর গুনগান এবং তার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র সে বিষয়ে শতপৃষ্টা লিখেও শেষ করা যাবে না।

১৯৯০ সালের পরে সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের মধ্য দিয়ে সর্বপ্রথম গনতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে দূর্নীতিতে বাংলাদেশ পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। এদেশের মানুষ গ্রেনেড হামলার স্বীকার হয়েছে। ক্রস ফায়ারের সাথে পরিচিত হয়েছে। ক্যাম্পাসে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসব করেছে। জঙ্গিবাদের সাথে পরিচিত হয়েছে।

রাজনৈতিক নেতা,সরকারি কর্মকর্তা এমনকি থানার ওসি ও ছাত্র নেতার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। শেয়ার বাজার থেকে ৪৫০০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। ব্যাংক থেকে নামে বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে।

 

পাপিয়া,শাহেদ, সম্রাটদের উত্থান ঘটেছে। ঘুষ- দূর্নীতি আজ নিয়মে পরিনত হয়েছে। ফেনসিডিল, ইয়াবা, সিসার মত মাদকের সাথে নতুন প্রজন্ম পরিচিত হয়েছে। হত্যা, গুম, খুনের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষদের কন্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সালের ৫ ই জানুয়ারি ১৫৭ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ভোটার বিহীন নির্বাচনের সংস্কৃতি চালু হয়েছে। নতুন প্রজন্মের নিকট ভোট আজ রুপকথায় পরিনত হয়েছে।

২৫ টাকার পিয়াজ ২৫০ টাকায় ক্রয় করতে হয়েছে। ২০ টাকার আলু ১২০ টাকায় ক্রয় করতে হয়েছে। ৫ টাকার বাস ভাড়া সিটিং সার্ভিস এর নামে ২৫ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ৯০ পরবর্তী গনতান্ত্রিক সরকার গুলোর শাসন ব্যবস্হায় মানুষ আজ অতিষ্ঠ।

আজকে কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ছাড়া এদেশের মানুষ এরশাদকে আর সৈরাচার বলে না,যদিও তাহারা কখনো বলেও নি।কারন তাহারা এখন ৩০ বছর আগের শাসন আমলে ফিরে যেতে চায়।

১৯৯০ সালে পল্লীবন্ধু বিরোধী আন্দোলনে যাহারা অংশগ্রহণ করে নিজেদেরকে বীর বাহাদুর ভেবেছিলেন, তাদের অনেকেই আজ বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে বলছেন এরশাদ ছিলেন শিশু সৈরাচার, দূর্নীতিতে সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর ন্যায়।সুতরাং তার বিরুদ্ধে ১৯৯০ সালের আন্দোলন করা ছিল ভুল স্বীদ্ধান্ত। যাহারা সেদিন ভুল স্বীদ্ধান্ত নিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারাকে ব্যহত করেছিলেন, আলোর মিছিল কে নিভিয়ে দিয়ে দেশকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছেন, তাদের সময় এসেছে জাতির নিকট ক্ষমা চেয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার। আমি জানি বিবেকের নিকট আপনি প্রতি নিয়ত দংশিত হচ্ছেন।

আগামী ৬ই ডিসেম্বর সংবিধান সংরক্ষণ দিবসের অগ্রিম সফলতা কামনা করছি।

পল্লীবন্ধু অমর হউক
জিএম কাদের- জিন্দাবাদ।

মিজানুর রহমান মিরু
শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক
জাতীয় পার্টি।

প্রকাশিত মন্তব্য কলামটি লেখকের নিজস্ব মতামত, এর সকল দ্বায়ভার লেখকের।

মানিকগঞ্জ২৪/ ২২ নভেম্বর ২০২০।

আরো পড়ুুন