সাটুরিয়া প্রতিনিধি, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০:
৩২ বছর ধরা হুনতাছি সেতু অয়ব। আর হয় না। হরগজ নয়া পাড়া হোসেন আলী। পেশায় একজন শ্রমিক। বাড়ি থেকে হরগজ বাজারে যাবেন। খেয়া না ধরতে পেরে পরে খেয়া আসতে সময় লেগেছে ২০ মিনিট। তাই আক্ষেপের স্বুরে এমন করে ফিস ফিস করে বলছিলেন।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ ইউনিয়নের বালুর চর এলাকায় নির্মিত সেতুটি প্রায় ৩২ বছর আগে ভেঙে গেছে। এরপর আর সেখানে সেতু নির্মাণ করা হয়নি। এতে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের, কৃষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সাটুরিয়া অফিস জানান, ১৯৮৬-৮৭ সালে বালুর চর-নয়াপাড়া সড়কের হরগজ বাজারের দক্ষিণ পাশে সেতু নির্মাণ করা হয়। এর এক বছর পর ১৯৮৮ সালের বন্যার তীব্র স্রোতে সেতুটি ধসে পড়ে। এরপর ৩২ পর বছর পার হলেও আর সেতু নির্মাণ করা হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ আগষ্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, পানিতে ধসে পড়া সেতুটির ধ্বংসাবশেষ পানির কারনে আর দেখা যায় না। বন্যার মৌসুম হওয়ায় একটি বড় নৌকা দিয়ে মানুষ পারা পার হচ্ছে। এতে এ সড়ক দিয়ে যান চলাচল এ মৌসুমে বন্ধ থাকে। শুদু মাত্র পায়ে হাটা মানুষই বেশী চলাচল করতে হয়। আর সেতুর জন্য অট রিক্সা, ভ্যান, পিকাপ বিকল্প সড়ক হয়ে মানিকগঞ্জ জেলায় যেতে হয়।
আর শুস্ক মৌসুমে ভাঙ্গা সেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে কাদা মাড়িয়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয় এ এলাকার মানুষের। তখন সেতুর দুই প্রান্তে রিকশা, হ্যালোবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নেমে হেঁটে সেতুর ওপর প্রান্তে গিয়ে রাস্তায় উঠেন।
নয়া পাড়ার আনোয়ার বলেন, সেতুটি ধসে যাওয়ায় নয়াপাড়া, বালুর চর, মোল্লাকান্দি, দক্ষিণপাড়া, মধ্যকান্দি সরদারপাড়া, পাটনীবাঁধা, মৃধাপাড়া, মোল্লাপাড়া, গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে। ওই স্থানে সেতু নির্মাণ না করায় বালুর চর, মোল্লাকান্দি, দক্ষিণপাড়া ও মধ্যকান্দি গ্রামের মানুষকে প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা ঘুরে কান্দাপাড়া হয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়।
হরগজ লুৎফর রহমান বলেন, হরগজ বাজারে গরুর হাট, একটি উচ্চ বিদ্যায়, কৃষি ব্যাংক, একটি কওমি মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থাকায় এ সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া পাশের ইউনিয়ন দরগ্রাম বাজারে স্কুল-মাদ্রাসা ও হাটবাজার রয়েছে। সেতু না থাকায় নয়াপাড়া, সরদারপাড়া, মৃধাপাড়া, পাটনীবাঁধা ও মোল্লাপাড়া গ্রামের শত শত মানুষের এই বর্ষাকালে ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বর্ষায় ডিঙি নৌকায় পারাপার হতে গিয়ে প্রায় পানিতে পড়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। তা ছাড়া হাটবাজারে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া করতে ওই সব গ্রামের কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
নয়া পাড়ার মাসুম বলেন, শুস্ক মৌসুমে সেতুর অভাবে রিকশা বা হ্যালোবাইক চলাচল করতে না পারায় আমাদের শুধু কাচা বাজার করতে দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে হয়। আর এখন পয়সা খরচ করে ডিঙি নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ খ ম নূরুল হক বলেন, আমি যখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম তখন এ সেতুটি নির্মাণ হয়। সে সময় হরগজ বাজার থেকে নয়াবাড়ি মোড় পর্যন্ত রিকশা ও ভ্যান চলাচল করত। সেতুটি ধসে যাওয়ার দীর্ঘ ৩২ বছরেও ওই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণ হয়নি। ফলে আশপাশের শিক্ষার্থী, কৃষকসহ প্রায় ১৫ হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
হরগজ ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন জ্যোতি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় কে দিয়ে এই সেতুটি পাশ করা হয়েছে।
সাটুরিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর প্রকৌশলী এ, এফ, এম, তৈয়াবুর রহমান বলেন, সেতুটির পুর্ণ নির্মাণের জন্য যে কোন সময় টেন্ডার প্রক্রীয়াধীন।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ২ সেপ্টেম্বর ২০২০।