সিংগাইর প্রতিনিধি, ২১ জুন:
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের গাড়াদিয়া বাসষ্ট্যান্ডের পূর্বপাশে নয়নজলি খাল দখল করে ফ্যাক্টরী নিমার্ণের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং ইন্ডাষ্ট্রিজ নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এ দখলদারিত্বের অভিযোগ করছে স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কালভার্টটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিংগাইর উপজেলার বায়রা মৌজায় আরএস ৫৭২৮ ও ৫৭২৯ দাগের ৭৫ শতাংশ জমি গত ৮ মাস আগে ক্রয় করে ঢাকা প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং ইন্ডাষ্ট্রিজ নামের প্রতিষ্ঠানটি। তার পশ্চিম পাশ ঘেঁষে রাস্তা সংলগ্ন প্রবাহমান ১৬ ফুট নয়নজলি (খাল) দখল করে মাটি ভরাট ও বাউন্ডারি দেয়াল নিমার্ণ করে ওই প্রতিষ্ঠানটি। দখলদারী প্রতিষ্ঠানের এ অবৈধ কাজে সহায়তা করে স্থানীয় একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বায়রার চালিতাতলার চক (পানু বাবুর বন্ধ) ও কাশেম দেওয়ানের চকের পানি ওই নয়নজলি দিয়েই প্রবাহিত হতো। পানি চলাচলের জন্য গাড়াদিয়া বাসষ্ট্যান্ডের পূর্বপাশে আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়।
কালভার্টটির উত্তর পাশে কিছু অংশ বাদ রেখে নয়নজলি খালের পুরো অংশ মাটি ফেলে ভরাট করে উভয়পাশেই বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। কাজের শুরুতে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে নিচ দিয়ে পানি চলাচলের জন্য শান্তনা স্বরুপ নামে মাত্র দু’ফুট পরিমাণ চুঙ্গি দেয়া হয়।
বায়রা গ্রামের আরজ আলী , আফছার উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, কালভার্টের উত্তর পাশ ও নয়নজলি খাল ভরাট হওয়ায় বৃষ্টির মওসুমে পুরো চকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। পানি বের হতে না পারলে ফসলাদির ব্যাপক ক্ষতি হবে। তারা আরো বলেন, এ ভরাটের কারণে বর্ষা মওসুমেও চালিতাতলা চকে পানি ঢুকতে পারবে না। এতে ফসল উৎপাদন ও ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন তারা।
ঢাকা প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং ইন্ডাষ্ট্রিজ নামের প্রতিষ্ঠানটির ক্রয়কৃত জমির দাতা (সাবেক মালিক) গাড়াদিয়া গ্রামের মোবারক হোসেন বাবুল (৭০) অভিযোগ করে বলেন, আমরা পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ৮০ শতাংশ সম্পত্তি এক ভাই ছাড়া বাকিরা ৭৫ শতাংশ জমি ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছি। প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ ওই জমির পশ্চিম পাশ ঘেঁষে রাস্তা সংলগ্ন খাল দখলের পাশাপাশি আমার লাগানো একাধিক ফলজ ও বনজ গাছ কেটে ফেলেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা শুধু পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করেছি। সরকারি জায়গা দখল সেটা তাদের ব্যাপার।
বায়রা ইউনিয়ন (ভূমি) সহকারি কর্মকর্তা ঝিলন খান বলেন, সরকারি খাল দখল করে মাটি ভরাট ও দেয়াল নিমার্ণের কাজে আমি একাধিকবার বাধা দিয়েছি। তারা আমাকে কোনো গুরুত্বই দেননি। পরে আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদায়কে বিষয়টি জানিয়েছি।
ঢাকা প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং ইন্ডাষ্ট্রিজ এর সাইট ইনচার্জ বাবুর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি
কোম্পানীর মার্কেটিং অফিসার তারিকুল ইসলাম বলেন, জায়গাটা আমাদের এমডি স্যার ক্রয় করে ফ্যাক্টরী করছেন। মার্কেটিং চালু না হওয়াতে আমার মোবাইল নাম্বারটা সাইনবোর্ডে দিয়ে রেখেছে। ওই প্রজেক্টটা কে দেখছেন আমি অফিসে খোঁজ নিয়ে আপনার সাথে যোগাযোগ করব।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মেহের নিগার সুলতানা বলেন, বিষয়টি সরেজমিন দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ২১ জুন ২০২০।