সাটুরিয়া প্রতিনিধি, ১৪ জুলাই:
মানিকগঞ্জে এ বছর প্রথম বারের মত অনলাইনে পশুর হাটের আয়োজন করা হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গোটা বিশ্ব যখন ভার্চুয়াল মিটিং সভা সেমিনারে ব্যস্ত। তেমনি পশুর হাটও বাদ যায়নি। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনলাইনে পশুর হাটের আয়োজন করেছে ৯ জুলাই থেকে।
বিগত টানা ৫-৬ বছর বাংলাদেশের আলোচিত ও বড় ওজনের ষাঁড় লালন পালন করে আসছে জেলার সাটুরিয়া উপজেলার খামারীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে সার্চ দিলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে এসব গবাদির পশুর । সাটুরিয়ার তারা মিয়ার ১৫ লক্ষ টাকার ষাঁড় দিয়ে শুরু। এর পর দিঘুলিয়া ইউনিয়নের খান্নু মিয়ার রাজা বাবু, লক্ষ্মীসোনা, ভাগ্যরাজ, দড়গ্রাম ইউনিয়নের বিল্লাল মিয়ার সিনবাদ নামের ষাঁড় ঈদুল আযহার হাট কাঁপিয়েছে বিগত বছর গুলিতে। এখনও অনলাইনে সরগম করে রেখেছে এসব বিভিন্ন নাম দেওয়া ষাঁড়গুলো।
চলতি বছরেও সাটুরিয়ার খান্নু মিয়ার ভাগ্যরাজ নামের বিশাল আকৃতির ষাঁড়টি ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়া সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের হিসাব অনুযায়ী ২০-২৫টি ষাঁড় রয়েছে ২৫-৩০ মণ ওজনের হবে। তাছাড়া কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরই পশু মোটা তাজাকরণ করে থাকে এ উপজেলার খামারীরা।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, করোনা ভাইরাসের প্র্রাদুর্ভাবের পরেও সাটুরিয়ার হরগজ পশুর হাটে গরুর আমদানি বেশী হচ্ছে । কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা কম। তাই করোনা ভাইরাস ঝুঁকি এড়াতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মানিকগঞ্জে প্রথম ৯ জুলাই থেকে বিলবোর্ড নামে একটি ফেসবুকে পেইজ খোলা হয়েছে।
এখানে আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষাকৃত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে লালিতপালিত গরুর নিশ্চয়তা দিচ্ছি ক্রেতাদের। আমরা খামারী গরু ছবি ও ওজন, খামারীর মোবাইল নাম্বার সেই সাথে উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের কর্মকর্তার নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি। আমাদের পেজের এক সপ্তাহ হয়নি এ পেজের ভাল সারা পাচ্ছি। তবে মাঝারি ওজনের গরুর প্রতি বেশী আগ্রহ বেশী ক্রেতাদের। আমরা ইতোমধ্যে ১৫ টি গরুর ক্রয়ের জন্য অর্ডার পেয়েছি। দুই একদিন পর আরও পশুর ওর্ডার পাব । এখানে আমরা শুধু ক্রেতা- বিক্রেতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে দিচ্ছি।
এ ব্যাপারে সাটুরিয়া বালিয়াটী গ্রামের খামারী আব্দুল হক বলেন, আমার গরুর ছবি উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিসের ডাক্তার ছবি তুইলা ফেসবুকে দিছে। তার পর থেকে প্রতিদিনই ফোন পাচ্ছি। মঙ্গলবার ঢাকা থেকে দেখতে আসব।
একই উপজেলার হরগজ গ্রামের নাসির মোল্লা বলেন, ১৫ মণ ওজনের ষাঁড়টি স্যাররা আমার গরুর ছবি নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে গরু কিনতে আসছে। তবে এখনও বিক্রি করিনি আরও ভাল দামের আশায়।
ফুকুরহাটি গ্রামের হারুন মিয়া ৩৫ মণ ওজনের একটি ষাঁড় লালন পালন করেছেন, নাম দিয়েছেন কালো চান। এত বড় ষাঁড় হাটে নিয়ে বিক্রি করা কষ্ট। আমার গরুর ছবি ফেসবুকে দেবার পর থেকেই আমি ফোন আসতে থাকে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) পযন্ত বিক্রি না করতে পারলেও মানিকগঞ্জে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু কেনার জন্য মানুষ আসছে। আমি আশা করছি বাড়ি থেকেই উপযুক্ত দামে বিক্রি করতে পারব।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মনির হোসেন বলেন আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ৯ হাজার ৪ শত ৯৭টি গরু ১০ হাজার ৩ শত ৪০টি এবং ছাগল ও ভেড়া লালন পালন করেছেন সাটুরিয়ার উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন খামারীরা। করোনা ভাইরাস কারনে আমরা প্রতিদিনই গরুর ছবি আমার পেজে আপলোড দিচ্ছি। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই ফোন পাচ্ছি। অনলাইনে সাধারণ ঈদের কয়েক আগে থেকে বিক্রি করতে পারব।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুবুল ইসলাম টুকু মিঞা বলেন, মানিকগঞ্জে প্রথম অনলাইনে পশুর হাটের ব্যবস্থা করে সাটুরিয়া উপজেলা। এটি দেখে আমরা জেলার অন্যান্য উপজেলায় ব্যবস্থা করেছি। অনলাইন হাট ছাড়াও এ বছর ১৩ টি গরুর হাট বসার অনুমতি রয়েছে। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলায় গরু, ছাগল ও ভেড়া মিলে ১৬ হাজার ৫৬৩ টি খামার রয়েছে। এসব খামারে ৪৬ হাজার গরু, ২২ হাজার ৭১৩ টি ছাগল এবং ৮ হাজার ৭৩০টি ভেড়া লালন পালন করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ২৪/ হা.ফ/ ১৪ জুলাই ২০২০।